মন্ত্রিসভার সদস্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চাইলেও মন্ত্রিপাড়ায় থাকা মন্ত্রীদের বাড়িতে লোডশেডিং সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অবশ্য যারা মন্ত্রিপাড়ার বাইরে থাকেন, তাদের বাড়ি বিদ্যুতের যাওয়া-আসার বাইরে নয়।
মিন্টো রোডে মন্ত্রিপাড়ায় যে ফিডার লাইন থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে, একই ফিডার থেকে লাইন গেছে প্রধান বিচারপতির বাসভবন, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনসহ আরও অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। ফলে সেখানে বিদ্যুৎ বন্ধ করতে হলে একই সঙ্গে বন্ধ করতে হবে সবগুলো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়, যেটি রাষ্ট্রের জন্য অমর্যাদাকর, পাশাপাশি আইনেরও লঙ্ঘন হয়।
আইন অনুযায়ী এই অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা কেপিআইয়ে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা চালু রাখতে হয়। কোনো কারণে একটি লাইনে সমস্যা হলে বিকল্প লাইনে বিদ্যুৎ দিতে হয়।
জ্বালানি সাশ্রয়ে এই তীব্র গরমে লোডশেডিংয়ে দেশবাসীকে ভুগিয়ে মন্ত্রিপাড়া কেন স্বস্তিতে থাকবে- এমন প্রশ্ন তুলে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তিনি চান মন্ত্রীদের বাড়িতেও লোডশেডিং হোক।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক আয়োজনে তিনি বলেন, ‘আমি বলি মন্ত্রীদের বাড়িতেও লোডশেডিং করা হোক। প্রধানমন্ত্রী এটা করলে ব্যক্তিগতভাবে আমি সমর্থন দেব। জনগণের বাড়িতে লোডশেডিং হলে মন্ত্রী-এমপিদের বাড়িতে কেন হতে পারে না? যেটা যুক্তিযুক্ত সেটাই আমাদের করা উচিত।’
মন্ত্রিসভার সদস্যদের আবাসনের প্রধান এলাকা মিন্টো রোড। সেটি মন্ত্রিপাড়া নামেও পরিচিতি পেয়েছে। সেখানে কেন লোডশেডিং করছেন না- এমন প্রশ্নে রাজধানীতে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাষ্ট্রের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন-কেপিআই) বিদ্যুৎ সংযোগের সঙ্গে মিন্টো রোডের বিদ্যুৎ সংযোগ অভিন্ন হওয়ায় চাইলেও সেখানে লোডশেডিং দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, মিন্টো রোডে লোডশেডিং দিতে হলে কেপিআইভুক্ত কয়েকটি স্থাপনারও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। তবে কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা, ২০১৩-এর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় বলা হয়েছে, ‘কেপিআইসমূহে সার্বক্ষণিক অভ্যন্তরীণ ও বহিঃযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে যথাযথভাবে সুরক্ষিত ও নিরাপত্তায় আধুনিক প্রযুক্তিসংবলিত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়াও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে।’
ডিপিডিসির সেই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, পুলিশ কন্ট্রোলরুম, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালসহ বেশ কয়েকটি কেপিআইভুক্ত স্থাপনার সঙ্গে মন্ত্রিপাড়ার বিদ্যুৎ সংযোগ কানেক্টেড। যেখানে কেপিআই আছে, সেখানে তো আমরা লোডশেডিং করতে পারি না।’
অর্থাৎ এসব এলাকায় কেবল মন্ত্রিপাড়ায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। একই ফিডারে হওয়ায় এটি বন্ধ রাখা হলে অন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাতেও বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাবে।
মন্ত্রিপাড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ কীভাবে অভিন্ন হয়েছে, তা স্পষ্ট করতে পারেননি ওই কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাই অ্যানি হাউ বিদ্যুৎ লাইনটি অভিন্ন হয়ে গেছে। অন্য ফিডার (ভিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ) হলে পড়ে যেত (লোডশেডিং হতো)।’
কেপিআইভুক্ত স্থাপনায় নিয়মমাফিক লোডশেডিং করার সুযোগ না থাকলেও অনিয়মিত লোডশেডিং হচ্ছে বলেও নিশ্চিত করেছেন ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় সিস্টেমে কোনো জটিলতা তৈরি হলে আমাদের ইচ্ছা না থাকলেও আনশিডিউলড লোডশেডিং হয়ে যায়। কখনও কখনও সেটা ১০ থেকে ২৫ মিনিট পর্যন্তও স্থায়ী হয়।’
এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব কেপিআইভুক্ত স্থাপনায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালুর বিষয়টিতে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয় বলেও জানান ডিপিডিসির ওই কর্মকর্তা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অবশ্য দাবি করেছেন, মন্ত্রীরাও লোডশেডিংয়ের বাইরে নন। মন্ত্রীদের বাড়িতে লোডশেডিং দেয়ার বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘সবার বাসাতেই তো লোডশেডিং চলতেছে। কেউ বাদ যাচ্ছে না।’