মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে অনড় হবিগঞ্জের লস্করপুর ভ্যালির ২৪টি চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসনের হলরুমে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বৈঠকটি শুরু হয়েছে। বেলা ২টা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।
বৈঠকে জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিন্টু চৌধুরী, পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈলেন চাকমা, চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর, চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক, মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলামসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছেন।
বৈঠকে চা শ্রমিকদের পক্ষে রয়েছেন চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির প্রধানরা। নেই শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
এদিকে ১৬ দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন শ্রমিকরা। সকাল থেকে বিভিন্ন বাগানের শ্রমিক চান্দপুর ফ্যাক্টরির সামনে এসে জড়ো হন। প্রধানমন্ত্রী নিজমুখে না বললে কাজে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
চান্দপুর চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির প্রধান সাধন সাঁওতাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা মা বলি। আমাদের মা যদি ভিডিও বার্তা বা অন্য কোনো মাধ্যমে নিজের মুখে আমাদের কাজে ফিরে যেতে বলেন, তাহলে আমরা কাজে ফিরে যাব।’
সংকট সমাধানে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির নেতাদের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়নের একটি দীর্ঘ যৌথ বৈঠক হয়।
এদিনও সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস না পেলে কাজে ফিরবেন না বলে জানান শ্রমিকরা। দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
সাধন সাঁওতাল বলেন, ‘মঙ্গলবার চান্দপুর রাবার বাগানের মাঠে লস্করপুর ভ্যালির ২৩টি বাগানসহ হবিগঞ্জের ২৪টি বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বৈঠকে বসেন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে নেতারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।’
দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন দেশের ১৬৬ চা বাগানের দেড় লাখের বেশি শ্রমিক। চার দিন ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন তারা।
কিন্তু চা বাগানের মালিকরা দাবি না মানায় ১৩ আগস্ট থেকে পুরোপুরি কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। ধর্মঘটের আট দিনের মাথায় শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে শ্রম অধিদপ্তর ও সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন চা শ্রমিক নেতারা।
বৈঠক শেষে শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানান। তবে নেতাদের এই সিদ্ধান্ত জানানোর পরই ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ চা শ্রমিকরা। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।
এদিন ২৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন তারা। এ সময় নেতাদের বিরুদ্ধেও বিষোদ্গার করেন শ্রমিকরা। পরে রাতে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এরপর রোববার রাত ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের বৈঠক হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নতুন মজুরি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি ঠিক রেখে চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন। এ ছাড়া শ্রমিকরা যে কয়দিন কর্মবিরতি পালন করেছেন, মালিকপক্ষ তাদের নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের সেই মজুরি দেবেন বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
এ সিদ্ধান্তও মেনে নেননি শ্রমিকরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির নেতাদের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়নের একটি দীর্ঘ যৌথ বৈঠক হয়। এদিনও সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস না পেলে কাজে ফিরবেন না বলে জানান শ্রমিকরা।
সাধন সাঁওতাল বলেন, ‘প্রথমে আমরা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের ডাকে আন্দোলনে নেমেছিলাম। এখন যেহেতু তারা আমাদের সঙ্গে নেই, তাই আমরা শিগগিরই নতুন কমিটি ঘোষণা করে তাদের নেতৃত্বে আন্দোলন চালিয়ে যাব।’