আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণে সর্বোচ্চ দেড় শটি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের বদলে তিন শটি আসনেই কিছু কিছু কেন্দ্রে এই যন্ত্র ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার মতে, পাঁচটি করে কেন্দ্র বাছাই করা যেতে পারে।
ভোটে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদের কারণে নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে এই যন্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর দিন এই মত প্রকাশ করলেন জাফরুল্লাহ, যিনি কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় সব আসনেই ব্যালটে ভোটের মত দিয়েছিলেন।
বুধবার ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন গত নির্বাচনে বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই শরিক। অবশ্য গত এক বছরে বিএনপির সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
এই সাক্ষাতের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা।
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘দেড় শটাতে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত ভুল কাজ হয়েছে। এর ফলে হয়তো নির্বাচনই হবে না। বিএনপিকে আনার চেষ্টা রয়েছে… নেগোসিয়েশনের মধ্যে… সবাই মনে করে, ইভিএমে আরেকটা চক্রান্ত। কেন ইসি দায়িত্ব নেবে?’
এ নিয়ে সিইসিকে কী বলেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতি আসনে শ খানেক কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটায় হবে। তখন তারা যুক্তিতর্ক দিয়ে দেখতে পারে।’
সিইসি কী বলেছেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার পরামর্শকে সিইসি যুক্তিসংগত মনে করেছেন। বলেছেন, দেখি-কী করে কী করা যায়।’
ইভিএমে ভোট করা নিয়ে গত জুনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মত নেয় নির্বাচন কমিশন। এই সংলাপ অবশ্য বিএনপি ও তার জোটের শরিকরা বর্জন করেছে। যারা আলোচনায় অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে অর্ধেক এই যন্ত্র ব্যবহারের কথা বলেছে, বাকি অর্ধেক দল বলেছে এই যন্ত্র ব্যবহার করা উচিত হবে না।
অন্যদিকে বিএনপি ও তার জোটের শরিকদের অবস্থান হলো, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে তারা কোনো ভোটে অংশ নেবে না। তারা ইভিএম ব্যবহারেরও ঘোরবিরোধী। সেই হিসাবে ইভিএমের বিরোধিতাকারীর সংখ্যাই বেশি।
জাফরুল্লাহ আশঙ্কা করছেন, ইভিএম নিয়ে এই সিদ্ধান্তের কারণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভোট বর্জন করতে পারে। আর তখন ভোট বর্জনের দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এটা ইসির ঘাড়ে চাপবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকার যেমন দায়ী হবে, ইসিও দায়ী হবে। আমার মনে হয়, ইসি যে এখানে শতভাগ একমত হয়েছে তা নয়। উনারা সরকারি চাপে রয়েছেন। উনারা ভাবছেন।’
ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখ বন্ধ রাখার পরামর্শও দেন জাফরুল্লাহ। বলেন, “কমিশন খুব কঠিন অবস্থার মধ্যে চলছে। সরকারের উচিত হবে যে করেই হোক কিছুটা গিভ অ্যান্ড টেক করে সুষ্ঠু নির্বাচন করা। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে আগ বাড়িয়ে কথা বলা বন্ধ করতে হবে। আজকেও হানিফ (মাহবুবউল আলম হানিফ) বলেছেন, ‘দেড় শ টা নয়, আমরা তিন শটাতে ইভিএম চাই।’ তাদের উচিত হবে একেবারে চুপ থাকা।
“আওয়ামী লীগের এমন কিছু করা উচিত হবে না যেন অন্যরা ভোটে না আসে।”
জনস্বার্থবিরোধী কিছু হলে সিইসির পদ থেকে কাজী হাবিবুল আউয়াল পদত্যাগ করবেন বলেও আশার কথা বলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা।
সাক্ষাতে নিবন্ধনের শর্ত শিথিল, ‘না’ ভোট চালু ও গণসংহতি আন্দোলনের নিবন্ধন দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।