নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গরিব মানুষ এখন ভর্তা-ভাজি দিয়ে ভাত খাওয়ার সামর্থ্যও হারিয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তার দাবি, এখন ভাত খেতে হয় কেবল লবণ দিয়ে। অনেকে সেই ভাত খাওয়ার ক্ষমতাও হারিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবি পূরণে সরকার কেন উদ্যোগ নিচ্ছে না, সেই প্রশ্ন রেখে বিএনপি নেতা এও বলেছেন যে জনগণের প্রতি আসলে তাদের কোনো দায়িত্ব নেই।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন রিজভী। চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে আন্দোলন ও কর্মবিরতির প্রতি সংহতি জানিয়ে এই কর্মসূচির আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
চা শ্রমিকদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের গুরুদায়িত্ব আছে। কিন্তু সরকারের এখানে কোনো গুরুদায়িত্ব দেখতে পাচ্ছি না।
‘এই মুহূর্তে ১২০ টাকা একজন শ্রমিক মজুরি পান। অন্য সবকিছু বাদ দিলেও খাদ্যের যে দাম তাতে এই টাকা দিয়ে কি পেটভরে খাওয়াও সুযোগ আছে? আগে বলত গরিব মানুষ ভর্তা-ভাজি দিয়ে ভাত খায়। এখন ভর্তা-ভাজির দাম অনেক। ভর্তা করতে মরিচ লাগে, তার দাম আকাশ ছুঁইছুঁই করছে। এখন বলতে হবে কোনো রকম লবণ দিয়ে ভাত খাওয়া। কিন্তু সেই ভাত কেনারও সামর্থ্যও নেই।’
জনগণের কাছে তারা কীভাবে যাবে
জনগণের মধ্যে আওয়ামী লীগের কোনো ভিত্তি নেই বলে মনে করেন বিএনপি নেতা।
বলেন, ‘এত অবিচার, এত অন্যায়, এত গুম-খুন! জনগণের কাছে তারা যাবে কী করে? জনগণের মধ্যে ওনাদের কোনো ভিত্তি নেই। এ জন্য ওরা বিদেশের ভিত্তি তৈরি করছে।’
দেশের স্বার্থ বিক্রি করে দিয়ে নিজেদের ক্ষমতায় থাকার স্বার্থে বিদেশের কাছে ধরনা দিচ্ছে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘এই সরকার যে তাঁবেদার, নতজানু, অন্য দেশের মুখাপেক্ষী, এগুলো আমাদের নতুন করে আর বলতে হচ্ছে না। মন্ত্রীরাই প্রমাণ করে দিচ্ছে তারা কাদের সরকার। কারণ ওরা তো জনগণের কাছে যেতে পারবে না।
আওয়ামী লীগ যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রিজভী। বলেন, ‘নিজেদের স্বার্থে দেশের নিরাপত্তা বিদেশের কাছে বিক্রি করে দেয়াকে কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে? ওরা আসলে মিথ্যার চেতনায় বিশ্বাস করে। মিথ্যার চেতনাকে ঢাকা দেয়ার জন্যই তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে।’
একটি অনলাইন পোর্টালে গোয়েন্দা সংস্থার গোপন ঘরের বিষয়ে তথ্যচিত্র নিয়েও কথা বলেন রিজভী। বলেন, ‘আয়না ঘরের কথা শুনেছেন না? আয়না ঘর এখন ভূতের ঘর, আতঙ্কের ঘর হিসেবে সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে।
‘আমরা যারা বিরোধী দলের রাজনীতি করি, সরকারের অন্যায়, অবিচার, গুম, খুনের সমালোচনা করি, তারা আতঙ্কে থাকি। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে তাদের ধরে নিয়েই অত্যাচার করা হয়। নির্যাতন করা হয়, নির্যাতনের মাত্রা বীভৎস।
‘এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে আয়না ঘর হওয়ার কথা ছিল না। এই ঘরে তো বিরোধীদলীয় নেতা নিয়ে অত্যাচার করার কথা ছিল না।’
প্রমাণ হয়েছে ইসি সরকারের আজ্ঞাবহ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট নেয়ার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন রিজভী। বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যে শেখ হাসিনা সরকারের আজ্ঞাবহ তা আবার প্রমাণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘প্রথমেই আমরা বলেছি এই সরকার যেখানে যাকে নিয়োগ করবে তাদের পরিচয় যা-ই হোক, তাদের অন্তর ছাত্রলীগ-যুবলীগ। যুবলীগ-ছাত্রলীগের অন্তর থাকার কারণে গণভবন থেকে যে নির্দেশনা আসবে তার বাইরে তারা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি এই নির্বাচন কমিশন শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহ। সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষমতা এই নির্বাচন কমিশনের নেই। সেটা তিনি নিজেই আবার প্রমাণ করলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তিনি যে সংলাপ করেছিলেন, সেখানে অধিকাংশ দল ইভিএমের বিপক্ষে কথা বলেছে। কিন্তু গতকাল তিনি বললেন ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে। তাহলে কিসের জন্য এই সংলাপ?’
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম। শ্রমিক দলের প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুও এ সময় বক্তব্য রাখেন।