রাজধানীর শ্যামলীর প্রিমরোজ কিন্ডারগার্টেন স্কুলে মেয়েকে নামিয়ে দিতে এসেছেন বাবা আনিস রহমান। মেয়ের নিত্যদিনকার স্কুলে আসার অভ্যাসে এতদিন সকালে স্কুলে দিয়ে যেতে আসতেন তার মা।
আজ বাবা কেন?
আনিস রহমান জানালেন, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। স্ত্রী কাজ করেন সরকারি প্রতিষ্ঠানে।
‘সেই (স্ত্রী) মেয়েকে নামিয়ে দিয়ে অফিসে যেত। কিন্তু আজ থেকে তো তার সকাল ৮টায় অফিস। তাই এক ঘণ্টা আগে বের হয়েছে। মেয়েকে নিয়ে বের হতে পারেনি’- বললেন তিনি।
আনিসের অফিস শুরু সকাল ৯টায়। তাই এখন থেকে মেয়েকে তিনিই নিয়ে আসবেন।
আনিসের অফিস স্কুলটির কাছেই। যখন স্কুল ছুটি হবে, তখন তিনি অফিস থেকে খানিক ক্ষণের জন্য বের হবেন। মেয়েকে বাসায় দিয়ে আবার ছুটবেন কর্মস্থলে।
আনিস বলেন, ‘আগে আমার স্ত্রী মেয়েকে ড্রপ করে যেত আর আমি দুপুরে ব্রেক টাইমে বাসায় দিয়ে আসতাম। এখন আমিই মেয়েকে আনা-নেয়া করব। যেটা আগে মাঝে মাঝে করতাম।’
আনিস, তার স্ত্রী ও মেয়ের স্কুলে আসার অভ্যাস পাল্টাতে হচ্ছে জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারি অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে শুরু করার আদেশে।
সময় পরিবর্তনের কারণে চাকরিজীবীদের জীবনযাত্রায় এসেছে কিছুটা পরিবর্তন। যারা সন্তানদের স্কুলে দিয়ে অফিসে যেতেন, তাদের সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আসার জন্য অন্য লোক খুঁজতে হচ্ছে।
কল্যাণপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিশুদের দিতে আসা বেশ কয়েকজন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার, অফিস সূচি পাল্টানোয় যাদের পরিবারে দায়িত্ব নতুন করে ভাগাভাগি করতে হয়েছে।
দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী নাফিসাকে স্কুলে দিতে এসেছে তার ১৬ বছর বয়সী ভাই।
নিউজবাংলাকে এই কিশোর বলেন, ‘আম্মু একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তাই আমিই বোনকে দিয়ে যেতে এসেছি। নিয়েও যাব।
‘ওকে দিয়ে কলেজে যাব। আবার ফিরে এসে নিয়ে যাব।’
তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া প্রিয়ন্তি দাসের মা সরকারি হাসপাতালের নার্স। তবে অফিস সূচি পাল্টানোয় তার জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। এর কারণ, তার অফিস শুরু হয় বিকেলে।
তিনি বলেন, ‘মেয়ের স্কুল সকালে। তাই বিকেলের শিফটে ডিউটি করি। কারণ আমিই ওকে স্কুলে আনা-নেয়া করি।’
তৃতীয় শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের অনেকেরই মা-বাবা সরকারি চাকরি করছেন। অফিস সূচি পাল্টানোয় স্কুলে যাওয়া-আসার জন্য তাদের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হয়েছে।
কারও নানা, কারও দাদা, কারও ভাই-বোন অথবা বাসার সহকারীকে দিয়ে বাচ্চাকে আনা-নেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। কোনো বাসায় আবার এ কারণেই নতুন সহকারী রাখতে হয়েছে। কেউ কেউ আবার সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে ভ্যান ঠিক করেছেন।
স্কুলের সহকারী শিক্ষক ফেন্সি মেঘলা বাড়ৈ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাদের মায়েরা কর্মজীবী, তাদের বেশির ভাগকেই অন্য কেউ আনা-নেয়া করেন। বাবারা আসেন মাঝে মাঝে অথবা শনিবার ছুটি থাকলে।’
সময় পরিবর্তনে খুব বেশি প্রভাব পড়েছে কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘আজকে অফিস পরিবর্তনের প্রথম দিন। তাই এখনও সেভাবে প্রভাবটা সামনে আসেনি। হয়তো সামনে বোঝা যাবে যাদের মায়েরা সরকারি চাকরি করছেন এবং আগে সন্তানকে স্কুলে ড্রপ করতেন। কারণ স্কুল শুরুর সময়টা এক হলেও ছুটির সময়ের সঙ্গে অফিস ছুটির সময় এক হয় না। তখন অন্য কেউ বাচ্চাকে স্কুল থেকে নিয়ে যায়।’