বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমনের ক্ষতি এড়াতে মরিয়া সরকার

  •    
  • ২৩ আগস্ট, ২০২২ ১৯:৩০

বাংলাদেশে ধানের প্রধান মৌসুম বোরো। আমনের উৎপাদন বাজারদরে সেভাবে প্রভাব ফেলে না। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তাতে আগামী আমন মৌসুম সরকারের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনিতেই ধান-চালের দাম বেড়ে গেছে। এই মৌসুমে ফসলহানি হলে সেটি খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সমস্যাসংকুল হয়ে যাবে।

আগামী আমন মৌসুমে কোনোভাবেই যেন ফসলহানি না হয়, সে জন্য একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই মৌসুমে সাধারণত সেচ না লাগলেও এবার আবহাওয়ার বিরূপ আচরণে সেটি লাগছে। চলমান লোডশেডিংয়ের মধ্যে এই সেচ নিশ্চিত করতে চায় সরকার। পাশাপাশি কৃষককে নগদ সহায়তা, প্রয়োজনে বিনা মূল্যে চারা বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সেচের জন্য নতুন সংযোগের আবেদন করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেচের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে বিদ্যুৎ বিভাগ। সেচের সুবিধার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের বৃহৎ সেচ প্রকল্পগুলো চালু করছে। অন্যগুলোও শিগগিরই চালু করবে।

মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে এক ভার্চুয়াল সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। ‘আমন মৌসুমে প্রয়োজনীয় সেচ নিশ্চিতকরণ’ বিষয়ে হয় এই সভা।

আমন মৌসুমে সাধারণত সেচের দরকার পড়ে না। তবে এবার আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ কৃষকদের সেচ দিতে বাধ্য করছে। সদ্য বিদায় নেয়া বর্ষাকালে এবার বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের তুলনায় কেবল ৩৮ শতাংশ।

তীব্র গরমে বৃষ্টিহীন এই মৌসুমে সরকার আবার সূচি তৈরি করে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখছে। তবে যে সূচি তৈরি করা হয়েছে, বিদ্যুৎ বন্ধ থাকছে তার চেয়ে বেশি। এর মধ্যে সেচের জন্য রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত গ্রাম এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাংলাদেশে ধানের প্রধান মৌসুম বোরো। আমনের উৎপাদন বাজারদরে সেভাবে প্রভাব ফেলে না। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তাতে আগামী আমন মৌসুম সরকারের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনিতেই ধান-চালের দাম বেড়ে গেছে। এই মৌসুমে ফসলহানি হলে সেটি খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সমস্যাসংকুল হয়ে যাবে।

সচিবালয়ে এই বৈঠকের দিন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে আমনের ক্ষতি নিয়ে শঙ্কার কথা বলেন। তিনি বলেন, খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে আমন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমন চাল উৎপাদনের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৌসুম। খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর আমন রোপণ ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বেশি। গ্রামগঞ্জে অনেক সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। সেচ সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেরিতে লাগানো আমনের ক্ষেত এখন সেচের অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। সে জন্য আমন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।’

দেশে সারের ঘাটতি নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত চাহিদার অতিরিক্ত সারের মজুত রয়েছে। আমরা এখন আগামী বোরো মৌসুমের জন্য সার সংগ্রহ করছি। তারপরেও কিছু ডিলার ও অসাধু ব্যবসায়ী স্থানীয়ভাবে দাম বাড়িয়ে অস্থিরতা তৈরি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

সচিবালয়ের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্তসচিবালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, উপজেলা সেচ কমিটি দ্রুত মিটিং করে সেচের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এবং সে অনুযায়ী সেচের ব্যবস্থা করা হবে।

আমনে বাড়তি সেচের জন্য কৃষকদের অতিরিক্ত খরচের বিষয়ে নগদ সহায়তা দেয়ার বিষয়টিও কৃষি মন্ত্রণালয় বিবেচনা করছে বলেও জানানো হয়েছে। বৃষ্টির অভাবে যারা ধানের চারা উৎপাদন করতে পারেনি, তাদেরকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বিনা মূল্যে চারা দেয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।

সভায় কৃষি সচিব বলেন, ‘এবার আমনে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫৯ লাখ হেক্টর, যার মধ্যে ইতোমধ্যে ৪৭ লাখ হেক্টরে আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ এবং সন্তোষজনক। বিশেষ করে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।

‘এ মাসের মধ্যে যাতে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জন করা যায় এবং রোপণের পর অন্তত ৩০ দিন যাতে সেচ নিশ্চিত করা যায়, সে লক্ষ্যেই আলোচনা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে আমনের ক্ষতি পোষাতে পারব। আমরা কৃষকের সঙ্গে থেকে, পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি যাতে করে খাদ্যনিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রাখতে পারি।’

সভায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

২৮ ফসলের ভবিষ্যৎ কীফার্মগেটের আয়োজনে গমসহ ২৮টি ফসলের ভবিষ্যৎ চাহিদা ও জোগান নিয়ে একটি গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন কৃষিমন্ত্রী।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অধীনে দেশের কৃষি অর্থনীতিবিদ ও গবেষকর নেতৃত্বে নার্সভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের (কৃষি অর্থনীতিবিদ) সমন্বয়ে গঠিত গবেষণা-দলের মাধ্যমে এ গবেষণা হয়। ২০৩০ এবং ২০৫০ সালে ফসলের (খাদ্যশস্য) অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও জোগানের ঘাটতি/উদ্বৃত্ত প্রাক্কলন করতেই এটি করা হয়।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য গ্রহণের তালিকা ধীরে ধীরে বৈচিত্র্যময় হচ্ছে। দানাদার খাদ্য থেকে সিংহভাগ ক্যালরি গ্রহণ করলেও মোট ক্যালরি গ্রহণের হার অনেক কমে গেছে। ১৯৯০ সালে দানাদার খাদ্য থেকে মোট ক্যালরি গ্রহণের হার ছিল ৮৯.৬ শতাংশ যা ২০১০ সালে হ্রাস পেয়ে ৮৩.০ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ৮০.৫ শতাংশ হয়েছে।

১৯৯০ সালে শুধু চাল থেকে ক্যালরি গ্রহণের হার ছিল ৮০.৪ শতাংশ যা ২০২১ সালে হ্রাস পেয়ে ৭০.৫ শতাংশ হয়েছে। ২০৩০ এবং ২০৫০ সালে হবে যথাক্রমে ৭২.৬ শতাংশ এবং ৭০.৪ শতাংশ।

গম থেকে ক্যালরি গ্রহণের হার ২০১০ সালে ছিল ৬.৬ শতাংশ। ২০৩০ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৬.৭ শতাংশ যা ২০৫০ সালে ৬.৮ শতাংশে পৌঁছাবে।চালের উৎপাদন ও জোগানের বিষয়ে বলা হয়, ২০৩০ সালে মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং অন্যান্য প্রয়োজনে (বীজ, প্রাণী ও মৎস্য খাদ্য, শিল্প, অপচয়, ইত্যাদি) চালের মোট চাহিদা হবে ৩৯.১ মিলিয়ন টন এবং ২০৫০ সালে ৪২.৬ মিলিয়ন টন।

বর্তমান উৎপাদন অবস্থা বিদ্যমান থাকলে আগামী ২০৩০ ও ২০৫০ সালে চালের মোট জোগান হবে যথাক্রমে ৪৩.২ এবং ৫৪.৯ মিলিয়ন টন।

স্বাভাবিক অবস্থা বিবেচনায় ২০৩০ ও ২০৫০ সালে উদ্বৃত্ত চালের পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ৪.১ ও ১২.৩ মিলিয়ন টন। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতিতে (বিরূপ আবহাওয়া, উৎপাদন উপকরণ সংকট, ইত্যাদি) ২০৩০ সালে ৩.৬ মিলিয়ন টন এবং ২০৫০ সালে ১.৯ মিলিয়ন টন চালের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

গবেষণায় বলা হয়, আগামী কয়েক দশক দেশের কৃষি উৎপাদন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সেচের পানির অভাব ইত্যাদি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ধান উৎপাদন ব্যাপক ব্যাহত হবে।

এটি মোকাবিলায় অধিক উৎপাদনশীল নতুন ধান প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয় করার কথা বলা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে নতুন ধান প্রযুক্তি পাওয়া যাবে এবং কৃষক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হবে বলেও গবেষণায় আশা করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর