গাজীপুর উত্তরা থেকে বিমানবন্দর মোড় পর্যন্ত নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পে নিরাপত্তা নিয়ে উদাসিনতার আরেক নমুনা দেখা গেল এবার। ক্রেন দিয়ে বক্স গার্ডার লরিতে তোলার সময় চলন্ত প্রাইভেটকারে পড়ে যাওয়া নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেও পর্যন্ত নজরদারি করেনি ঠিকাদারি কোম্পানি। চুরি হয়ে গেছে সেই ক্রেনের ব্যাটারি।
গত ১৫ আগস্ট মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনার পর জননিরাপত্তার বিষয়ে ঠিকাদারদের অবহেলার বিষয়টি প্রমাণ পাওয়ার পর নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত বিআরটির কাজ বন্ধ করে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
নিষেধাজ্ঞা শেষে সোমবার উত্তরার জসিম উদ্দীন মোড়ে যখন নির্মাণ কাজের স্থলে নিরাপত্তা বেষ্টনী বসানোর কাজ চলছিল, তখন সেখানেই পড়েছিল ক্রেনটি।
এক পর্যায়ে সেখানকার ম্যাকানিকরা যান সেই ক্রেনটিকে পরীক্ষা করতে। পরে তারা দেখে, এর ব্যাটারি গায়েব।
সেখানে কাজ করছিলেন দুজন ম্যাকানিক, তাদের মধ্যে একজনের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। নিজের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমেই এসে দেখি ক্রেনের ব্যাটারি চুরি হয়ে গেছে। আরও কিছু চুরি গেছে কিনা দেখছি। কারণ, ব্যাটারি ছাড়া তো ক্রেন চলবেই না। ব্যাপারটি দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।’
ঘটনাস্থলে তিন ঘণ্টা অবস্থান করার পরেও সেই ক্রেনটিকে অচল অবস্থানেই পড়ে থাকতে দেখা গেল। ম্যাকানিকরা ব্যর্থ হওয়ার পর ঠিকাদারি কোম্পানির আর কোনো প্রতিনিধি সেখানে হাজির হননি।
ক্রেনের ব্যাটারি চুরির বিষয়ে সেই কর্মী বলেন, ‘এখানে রাস্তার টোকাইরা এসব চুরি করে। সেগুলো বিক্রি করে নেশা করে।’
এতবড় দুর্ঘটনার পরেও ঘটনাস্থল এভাবে কীভাবে অরক্ষিত থাকল সেই প্রশ্ন নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত নির্মাতা কোম্পানির দুই জন প্রকৌশলীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। শ্রমিকরা দেখিয়ে দিলেও একজন নিজেকে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবেই অস্বীকার করেছেন। অন্যজন বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।
সেখানকার কর্মীদের বক্তব্য এবং নিরাপত্তা-বেষ্টনী নিয়ে পথচারীদের সংশয়ের বিষয়ে কথা বলতে প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর পাওয়া গেল একজন প্রকৌশলীকে। কর্মচারীদের মাধ্যমে জানা গেল তার নাম জহির। তবে প্রশ্ন শুনে সেই কর্মকর্তা নিজের পরিচয় লুকিয়ে বলেন, ‘আমি এখানকার কেউ না। আমি দেখতে এসেছি।’
এরপর হনহন করে হেঁটে চলে যান তিনি।
আরেক প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেনের কাছ থেকেও প্রশ্নের কাঙ্ক্ষিত জবাব পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা-বেষ্টনীর কাজ শুরু করেছি। দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে আশা করছি। বেষ্টনীর কাজ শেষ না হলে আমরা ফ্লাইওভারের কাজ শুরু করব না।
ব্যাটারি চুরির বিষয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতার প্রমাণ বলে মনে করেন বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হাদিউজ্জামান। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘টোকাই বা যে কেউ ঢুকে পড়তে পারছে, সেটা কখনই এলাউড হতে পারে না। এখানে যন্ত্র রয়েছে, অনেক মূল্যবান জিনিস রয়েছে। এভাবে যে কেউ ঢুকে পড়লে সেই জায়গা এবং যারা ঢুকছে দুই ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা ঝুঁকিপূর্ণ।
'এতে যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনার জন্য আরও বড় দুর্ঘটনা করতে পারে। সব মিলিয়ে বার বার একটাই কথা উঠে আসে, নিরাপত্তা বেষ্টনী আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। সাধারণ টিন দিয়ে হতে পারে না।’