ভিজিডির চাল বিতরণে উপকারভোগীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ৩০ টাকা করে। বিতরণের পর পরিষদ চত্বরেই উপকারভোগীদের কাছ থেকে এসব চাল কিনে নিচ্ছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদে সোমবার ভিজিডির চাল বিতরণে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান ওরফে কিশোরের প্রতিনিধি হিসেবে এ টাকা আদায় করতে দেখা গেছে আশরাফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে।
টাকা আদায়ের বিষয়ে এই চেয়ারম্যান বলেন, অতিরিক্ত টাকা আদায়ের নিয়ম নেই। তিনি জানার পর আর টাকা নেয়া হয়নি।
বিষয়টি জানা না থাকলেও অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন বলেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
জানা গেছে, পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯টি ওয়ার্ডের ২৬০ জন ভিজিডি কার্ডধারীকে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। চাল বিতরণের সময় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একজন কর্মী উপকারভোগীদের কাছ থেকে ২০০ করে সঞ্চয়ের টাকা নেন। কোনো কোনো উপকারভোগী ১০০ টাকা করেও সঞ্চয় জমা দেন।
এরপর উপকারভোগীরা ভিজিডির কার্ড নিয়ে পরিষদের চাল বিতরণের কক্ষের সামনে বসা আশরাফুলের কাছে যান। সেখানে তাদের কাছ থেকে ৩০ টাকা করে নিয়ে টিপসই নিয়ে চাল দেন তিনি। পরে পরিষদ চত্বরেই চাল ব্যবসায়ীরা অনেক উপকারভোগী থেকে তাদের চাল কিনে নেন। প্রতি বস্তা চাল ১ হাজার ১২০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন উপকারভোগীরা।
মালঞ্চা গ্রামের উপকারভোগী মোসলেমা বেগম চাল নিতে আসতে পারেননি। তার হয়ে চাল নিতে এসেছেন শাশুড়ি জাহেদা। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘চাল দেয়ার সময় আগে ১৫ টাকা করে নিত। এখন আবার ৩০ টাকা করে নেয়। আমরা কিছু বুঝি না, তাই টাকা দেই।’
চাল বিক্রি করে দেয়ার বিষয়ে উপকারভোগী শিউলী বেগমের অভিযোগ, ‘এসব চাল খাওয়া যায় না। এ জন্য বিক্রি করে দেই। আজও ৩০ কেজি চাল ১ হাজার ১৭০ টাকায় বিক্রি করছি। অনেকেই চাল বিক্রি করছে।’
উপকারভোগীদের কাছ থেকে এসব চাল কিনছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। এর মধ্যে মো. খলিল কিনেছেন ২০ বস্তা। তিনি বলেন, ‘প্রায়ই এমন চাল কেনা হয়। পরে পরিষদ থেকে বাইরে এনে বস্তা বদল করে প্লাস্টিকের বস্তায় করে অন্যত্র নেয়া হয়। আজ (সোমবার) ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ১৭০ টাকা করে প্রতি বস্তা চাল কেনা হয়েছে।’
এখানে বাধাহীনভাবেই ভিজিডির এসব চাল বেচাকেনা হয় বলে জানালেন ব্যবসায়ী মো. আজিজ। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেশি চাল কিনতে পারিনি, ৮ বস্তা কিনেছি। অনেকেই পরিষদ চত্বর থেকেই চাল কিনছেন। কেউ কিছু বলে না, তাই চাল কিনি।’
সঞ্চয়ের টাকা নেয়া ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কর্মী সাগর হোসেন বলেন, ‘২৬০ জন উপকারভোগীর মাঝে ভিজিডির চাল বিতরণ করা হয়েছে। আমি সঞ্চয়ের টাকা তুলেছি এবং কার্ডে উঠিয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ ২০০ টাকার বদলে ১০০ টাকাও দিয়েছেন। কিন্তু চাল বিতরণের সময় কেন অতিরিক্ত ৩০ টাকা নেয়া হয়েছে তা আমার জানা নেই।’
চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে ৩০ টাকা করে নেয়া আশরাফুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যানের কথাতেই তিনি টাকা তুলেছেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘চাল পরিষদে আনার জন্য যে খরচ হয়, ওই খরচের জন্য এসব টাকা নেয়া হয়। আমি পরিষদের কেউ না, চেয়ারম্যান মেম্বারদের দিয়ে ডেকে এনে আমাকে টাকা তুলতে বলেছে।’
কিন্তু টাকা নেয়ার বিষয়টি প্রথমে জানতেন না বললেন ইউপি চেয়ারম্যান কিশোর। বলেন, ‘অতিরিক্ত ৩০ টাকা নেয়ার নিয়ম নেই। আমি বিষয়টি জানার পর আর টাকা নেয়া হয়নি।’
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পরিষদের ভেতরে চাল কেউ কেনেনি। পরিষদের বাইরে কেউ কিনলে আমরা কী করব?’
ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’