বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কাউকে ভোটে আনতে বাধ্য করা সম্ভব নয়: ইসি

  •    
  • ২২ আগস্ট, ২০২২ ১৯:৩১

নির্বাচন কমিশনের মতামত হচ্ছে, তারা সব দলের বিশেষত: প্রধানতম রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করে। তবে কমিশন কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করতে পারে না এবং সে ধরনের কোনো প্রয়াস নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করবে না।

বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়া বিএনপিকে ভোটে চাইলেও দলটিকে ভোটে আনতে বাধ্য করার মতো কোনো পদক্ষেপ নেবে না কমিশন।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ থেকে পাওয়া সুপারিশ পর্যালোচনা করে কমিশন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে ১০টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার প্রথমেই এই বিষয়টি উল্লেখ আছে।

নিবন্ধিত ২৮টি দলের সঙ্গে সংলাপে তিন শতাধিক সুপারিশ বিশ্লেষণ করে এই ১০টি আমলে নিয়েছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।

এতে নির্বাচনকালীন সরকার, সব দলের ভোটে অংশগ্রহণ, ইভিএম, সেনা মোতায়েন, একাধিক দিনে ভোট, সংখ্যানুপাতিক সংসদীয় ব্যবস্থাসহ বেশকিছু বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।

সোমবার এই সারসংক্ষেপ সংলাপে অংশ নেয়া ২৮টি দল, আইন, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন কমিশনের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আছে। এই নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয় বর্তমান কমিশন।

তবে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে অংশগ্রহণমূলক ভোট নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেটি এখনও রয়ে গেছে। দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি ও তার জোটের শরিকরা বর্জন করলেও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা অংশ নেয়। তবে সেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে দলটি আবার নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে। বলছে, এই দাবি পূরণ না হলে তারা ভোটে আসবে না। আর কেবল নির্দলীয় সরকার নয়, নির্বাচন কমিশনকেও পুনর্গঠন করতে চায় তারা।

ক্ষমতাসীন দলের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর এই অবস্থান নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই বলে মনে করে নির্বাচন কমিশন। তারা বলছে, ভোটের আয়োজন তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেটি করার পাশাপাশি সব দলকে অংশগ্রহণের আহ্বান তাদের থাকবে।

ভোট সুষ্ঠু করার পাশাপাশি সঠিক ফলাফল নিশ্চিত করতে সংবিধান, আইন ও বিধি-বিধান প্রয়োগের অঙ্গীকারও করছে কমিশন। একাধিক দিনে ভোট ও সেনা নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরামর্শ করতে চায় তারা।

ভোটে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে আরেকটু সময় নেয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।

কমিশন মনে করে, ভোটের সময় জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা প্রয়োজন।

আগামী জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা তৈরি করতে গত ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কমিশন যে সংলাপে অংশ নিয়েছে, তাতে ১১ টি দল অংশ নেয়নি। এর মধ্যে দুটি দলকে সেপ্টেম্বরের বসতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

কমিশনের ১০ সিদ্ধান্ত

#নির্বাচন কমিশনের মতামত হচ্ছে, তারা সব দলের বিশেষত প্রধানতম রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করে। তবে কমিশন কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করতে পারে না এবং সে ধরনের কোনো প্রয়াস নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করবে না। তবে সব দলকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আহ্বান শেষ অব্দি আন্তরিকভাবেই বহাল থাকবে বলে উল্লেখ করা হয় কমিশনের সিদ্ধান্তে।

# নিরপেক্ষ ফলাফল নিশ্চিতে সততার সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারও করেছে কমিশন। সংবিধান, আইন ও বিধি-বিধানের অধীনে প্রদত্ত সব ক্ষমতা যথাযথভাবে প্রয়োগ করে ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগে সব ধরনের বাধা অপসারণ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারও করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকুল পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করতে তারা সব উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

কারচুপির সম্ভাব্য সকল সুযোগ প্রতিরোধ করে সততা, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা ও সর্বোপরি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কমিশন কাজ করে যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগে প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়াও কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা এবং অন্যান্য বিভাগ থেকে নিয়োগের বিষয়টি নিয়েও কমিশন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে। তারা মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার মাধ্যমে কিছু মৌলিক প্রশ্নে মতৈক্যে উপনীত হওয়া জরুরি।

# দেশি এবং বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকগণকে ভোট পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়া হবে। ভোটাধিকার প্রয়োগ অবাধ, নির্বিঘ্ন, স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান করতে ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা প্রতিস্থাপন করে কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরের দৃশ্য দূর থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ ও সামর্থ্য সাপেক্ষে তৈরি করা হবে।

# একাধিক দিনে ভোট ও সেনা নিয়োগের বিষয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করতে চায় কমিশন।দেশে সংসদ নির্বাচনে একই দিনে ভোট নেয়া হয়। ফলে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অসামরিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা অপর্যাপ্ত বা অপ্রতুল হতে পারে। এ কারণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবনাটি যৌক্তিক বলে কমিশন মনে করে।

# ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত আরও পরে।কমিশন মনে করে- ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি এবং সমর্থন দুই-ই রয়েছে। এ নিয়ে যেসব কর্মশালা, মতবিনিময়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে তার সার্বিক ফলাফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়ে যথাসময়ে জানাবে।

ব্লক চেইন পদ্ধতিতে বিশেষ অ্যাপস এর মাধ্যমে ঘরে বসে ই-ভোট সম্ভব নয় বলে মনে করে কমিশন। বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার আগে এ বিষয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা/সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে মনে করে তারা।# অনলাইনে মনোনয়ন জমার সুযোগ।সংলাপে কয়েকটি রাজনৈতিক দল সংলাপে এই সুযোগ চেয়েছিল। কমিশন বলছে, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল বা গ্রহণের সুযোগ বা বিধান বর্তমানে আরপিওতে বিদ্যমান রয়েছে।

একই মঞ্চ থেকে সব দলের প্রার্থীদের বক্তব্য এবং প্রচারণার নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করার, নির্ধারিত স্থানে সকল প্রার্থীর পোস্টার লাগানো বা লটকানোর ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনে একই পোস্টারে সব প্রার্থীর প্রচারণার প্রস্তাব মনে ধরেছে কমিশনে। তারা মনে করে, এতে নির্বাচনি ব্যয় কমে আসতে পারে। নির্বাচনি সহিংসতাও কমতে পারে। রাজনীতিতে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির নতুন সংস্কৃতির প্রচলন হতে পারে।

ইউটিলিটি বিল বাকি থাকার কারণে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বিষয়ক বিধানটি যৌক্তিক করার বিষয়ে কমিশন বিবেচনা করবে।

#নির্বাচনকালীন সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।নির্বাচনকালীন সরকার সংশ্লিষ্ট সংলাপে আসা সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন কমিশন মনে করে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনে জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত থাকা উচিত।

কমিশন বলছে, তারা আইনগত অধিকার পুরোপুরি প্রয়োগ করবে। রাষ্ট্রের সব নির্বাহী বিভাগ স্ব স্ব অবস্থান থেকে সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব হিসেবে কমিশনকে সহায়তা করবে। কমিশন আশা করে, সবার সমন্বিত প্রয়াস ও দায়িত্বশীল আচরণে সুস্থ, সুন্দর, অবাধ, অহিংস ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।

#সরকারি দল আচরণবিধি ভঙ্গ করবে না বলে বিশ্বাস।ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে এই বিষয়টি সন্নিবেশ করা হয়েছে। কমিশন বলেছে, ক্ষমতাসীন দলের বাধা, মিথ্যা মামলা সাধারণ্যে এমন একটি ধারণা বা প্রবল বিশ্বাস আছে। তবে কমিশন বিশ্বাস করতে চায়, সরকারি দল আচরণবিধি লঙ্ঘন থেকে বিরত থাকবে এবং রাজনৈতিক কারণে কোনো মামলা করে সুস্থ গণতন্ত্র চর্চার পথ রুদ্ধ করবে না।

#সংখ্যানুপাতিক ভোট সংসদের এখতিয়ারাধীন।কয়েকটি দল সংলাপে ভোটের আনুপাতিক হারের ভিত্তিতে সংসদের আসন বণ্টনের সুপারিশ করেছে। সিইসি নিজেও বলেছেন, এই প্রস্তাবটি তার মনে ধরেছে।

কমিশন সংলাপের সারসংক্ষেপেও বলেছে, পরামর্শটি তারা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেছে। তবে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ও দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন, সংসদ সদস্যের সংখ্যা বাড়ানো এবং সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের বিষয়টি তাদের এখতিয়ারে নয়। এটি রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সরকার এবং জাতীয় সংসদের বিষয়।

#ক্ষমতা সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে প্রয়োগের অঙ্গীকার।এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয় সারসংক্ষেপের শেষে। এতে বলা হয়, ‘ক্ষমতা প্রয়োগের সুপারিশের বিষয়ে কমিশন বরাবরের মত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলতে চায় যে, সংবিধানের অধীন গৃহীত শপথের প্রতি অনুগত থেকে সৎ, নিরপেক্ষ ও সাহসিকতার সঙ্গে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে সংবিধান ও আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে প্রয়োগ করতে বদ্ধপরিকর।’

এ বিভাগের আরো খবর