ইউরোপের দেশ গ্রিসে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের জন্য দেশটির সাথে ‘মাইগ্রেশন অ্যান্ড মোবিলিটি’ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। এতে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন সরকারপ্রধান।
পরে বৈঠকের বিস্তারিত গণমাধ্যমে তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও হেলেনিক রিপাবলিক বা গ্রিসের মধ্যে মাইগ্রেশন অ্যান্ড মোবিলিটি বিষয়ক সমঝোতা স্মারক মন্ত্রিসভা ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দিয়েছে। এটা একটা গুড নিউজ।
‘এই স্মারকের পরিপ্রেক্ষিতে বছরে ৪ থেকে ৫ হাজার বাংলাদেশি কৃষি ক্ষেত্রে কাজ করার শ্রমিক বা দক্ষ ব্যক্তিরা যেতে পারবেন। তারা ৫ বছরের জন্য একটা ওয়ার্ক পারমিট পাবেন। পারফরম্যান্স বা নিয়মানুযায়ী সেটা পরবর্তীতে যদি বাড়ানো হয়, তাহলে আরও থাকতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘যতদিন এই স্মারকটা থাকবে ততদিন বছরে ৪ থেকে ৫ হাজার বাংলাদেশি গ্রিসে অফিশিয়ালি যেতে পারবেন। আর এর মধ্যে প্রায় ১৪-১৫ হাজার যারা আন-অথোরাইজড ভিসায় গেছেন, তারাও ওইখানে বৈধতা পাবেন। এটা আমাদের জন্য খুবই ভালো একটা স্মারক।’
এর আগে জুলাই মাসে গ্রিসের সংসদ বাংলাদেশ থেকে কৃষি খাতে ৫ বছরের জন্য কর্মী নিতে সমঝোতা চুক্তির অনুমোদন দেয়। এ চুক্তির আওতায় দেশটিতে পাঁচ বছরের জন্য ১৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে ভিসা দেয়া হবে এবং প্রতি বছর ৪ হাজার কর্মী মৌসুমি কর্মভিসায় গ্রিস যাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
তখন দেশটির অভিবাসন ও শরণার্থীবিষয়কমন্ত্রী নোতিস মিতারাচি বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির বিল পাসের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার হবে বলে মন্তব্য করেন ।
তিনি বলেন, 'আমাদের শ্রমবাজারে প্রতি বছর ১ লাখ ৪৪ হাজার শ্রমিকের প্রয়োজন। তাই আমরা বৈধভাবে মৌসুমি ভিসা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শ্রমিক আনব। চুক্তি অনুযায়ী বছরে ৯ মাস কাজ ও ৩ মাস দেশে কাটানোর শর্তে ৫ বছরের মৌসুমি ভিসায় বাংলাদেশ থেকে শিগগিরই এ কার্যক্রম শুরু হবে।
'প্রতি বছর ৪ হাজার করে মোট ১৫ হাজার কৃষিশ্রমিক আনা হবে। বাংলাদেশ থেকে কৃষি ও পশু পালনের জন্য মৌসুমি ভিসায় এসব শ্রমিক নিয়োগ হবে। কৃষি খাতের মালিকরা চাহিদা অনুসারে একাধিক শ্রমিক আনার জন্য আবেদন করতে পারবেন। বাংলাদেশ থেকে আসা কর্মীদের প্রতি বছর ৯ মাস কাজ করার পরেই পরবর্তী ৩ মাস বাধ্যতামূলক বাংলাদেশে যেতে হবে। যাতে তারা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে পারেন। যদি কেউ ৯ মাস কাজ করে পরবর্তী তিন মাস দেশে না যান তাহলে তাদের ভিসা পরবর্তী বছরের জন্য নবায়ন হবে না।'
এ ভিসায় সেনজেনভুক্ত দেশ গ্রিসে আসার পর ইউরোপের অন্য দেশে যেতে পারবেন না। এমনকি গ্রিসেও আজীবন থাকার জন্য তাদের কোনো স্থায়ী বৈধতা দেয়া হবে না। কোনো কর্মীর দেশ থেকে নিজ পরিবার আনার কোনো ধরনের সুযোগ থাকছে না এই ভিসায়। ৫ বছর শেষে তাদের গ্রিস থেকে চলে যেতে হবে। তবে পরবর্তীতে নির্দিষ্ট মালিকের অধীনে আবারও ভিসা নিয়ে গ্রিসে প্রবেশের সুযোগ থাকবে।
গ্রিসে থাকা অবৈধ ১৫ হাজার অভিবাসীকে ৫ বছরের ভিসা দিয়ে একই আইনে বৈধতার আওতায় আনা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় দেশটির সাথে ‘মাইগ্রেশন অ্যান্ড মোবিলিটি’ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক হয়েছে।