বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডিসি-ইউএনওতে কাজ হয়নি, প্রধানমন্ত্রীকেই চায় লস্কর ভ্যালি

  •    
  • ২২ আগস্ট, ২০২২ ১৯:১০

চা-শ্রমিকদের নেত্রী সনকা সাঁওতাল বলেন, ‘আমরা ডিসি-এসপি-ইউএনও কাউকে বিশ্বাস করি না। শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করি। তিনি যদি নিজের মুখে বলেন- তাহলে আমরা কাজে ফিরে যাব।’

মজুরি বৃদ্ধির দাবি আদায়ে অনড় হবিগঞ্জের লস্করপুর ভ্যালির ২৩টি চা বাগানের শ্রমিকরা। প্রধানমন্ত্রী নিজমুখে না বললে তারা কাজে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন।

সোমবার সকাল ১০টার দিকে চান্দপুর চা কারখানার সামনে লস্করপুর ভ্যালির বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। এ সময় তারা ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরির দাবিতে অনড় অবস্থানের কথা জানান।

বেলা ১১টার দিকে সেখানে যান চুনারুঘাট থানার ওসি আলী আশরাফ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক। এ সময় তারা শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানালে শ্রমকরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে উপস্থিত হন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান।

শ্রমিকদের তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তার সঙ্গে তার কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। আপাতত তারা যেন কাজে ফিরে যান।

এ সময় জেলা প্রশাসককে শ্রমিক নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের মুখে আমাদের কাজে ফেরার কথা বলবেন না, ততক্ষণ তারা কাজে ফিরবেন না।

চা-শ্রমিকদের নেত্রী সনকা সাঁওতাল বলেন, ‘আমরা ডিসি-এসপি-ইউএনও কাউকে বিশ্বাস করি না। শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করি। তিনি যদি নিজের মুখে বলেন- তাহলে আমরা কাজে ফিরে যাব। তা না হলে ৩০০ টাকা মজুরি ছাড়া বাগানের কাজে যাব না। এর জন্য জীবন দিতে হলে দেব।’

সনকা আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে ভিডিও বার্তায় বললেও আমরা কাজে ফিরব। আজ বললে আজই ফিরব।’

চান্দপুর চা বাগানের শ্রমিক বীরেন তন্তুবায় বলেন, ‘আমরা আজ ১৪ দিন ধরে কর্মবিরতি করছি ৩০০ টাকা মজুরির জন্য। এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন ১৪৫ টাকায় কাজে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

‘সরকারি কর্মকর্তারা এসে আমাদের বলেন প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন আমরা যেন কাজে ফিরে যাই। কিন্তু আমরা সেটা বিশ্বাস করব কীভাবে? প্রধানমন্ত্রী যেকোনো মাধ্যমে আমাদেরকে কাজে ফিরতে বললেই আমরা ফিরে যাব।’

বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠনের সভাপতি খায়রুল আক্তার বলেন, ‘আমাদের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা রাতের আঁধারে গিয়ে হাত মিলিয়েছেন। তাতেও লাভ হবে না। ৩০০ টাকা মজুরি ছাড়া কোনো শ্রমিক কাজে ফিরবে না।’

তিনি বলেন, ‘নেতারা রাতে চোরের মতো স্বাক্ষর করে এসেছেন। আমরা এসব নেতাকে ধিক্কার জানাই। তাদের পেলে আমরা গণপিটুনি দেব।’

চুনারুঘাটের চান্দপুর চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সাধন সাঁওতাল বলেন, ‘চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করার আগে ভ্যালি কমিটি এবং প্রতিটি বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করার কথা। কিন্তু ইউনিয়নের নেতারা তা না করেই রাত ২টার দিকে চুক্তি করেছে। তাই আমরা কাজে ফিরব না।’

তিনি বলেন, ‘মালিকপক্ষ, আমাদের ইউনিয়নের নেতা ও প্রশাসন- সবাই আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাই আমরা এখন প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কাউকে বিশ্বাস করি না।

‘আমাদের সিদ্ধান্ত একটাই। হয় ৩০০ টাকা মজুরি, না হয় প্রধানমন্ত্রীর নিজমুখে কাজে ফেরার আহ্বান।’

এ সময় ইউএনও ও জেলা প্রশাসক বারবার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের চান্দপুর কারখানার সমনে আসার জন্য ফোন দিলেও তারা কেউ সেখানে যাননি।

এর আগে সকালে ১২০ টাকা মজুরিতে কাজে যোগ দেয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করায় চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শ্রমিকরা।

এ সময় ভ্যালির শ্রমিক নেতারা জানান, কাজে ফেরার জন্য তারা এখনও কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা পাননি। এ ছাড়া ৩০০ টাকা মজুরির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের চা-শ্রমিকরা কাজে ফিরলেও তারা ফিরবেন না। রাতের আঁধারে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ১৪৫ টাকা মজুরিতে যে স্বাক্ষর করেছেন, সেটি তারা মানেন না।

রোববার হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে প্রায় ৪ ঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শ্রমিকরা। বেলা ৩টার দিকে দুই দিনের আলটিমেটাম দিয়ে অবরোধ তুলে নেন তারা।

আলটিমেটাম অনুযায়ী, সোম ও মঙ্গলবার শ্রমিকরা কোনো ধরনের আন্দোলন-সংগ্রাম না করে নিজ নিজ বাগানে অবস্থান করবেন। ২৩ আগস্টের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২৪ তারিখ আবারও তারা রাস্তায় নামবেন।

গত ৯ আগস্ট থেকে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন চা-শ্রমিকরা।

এ বিভাগের আরো খবর