বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এখনও কাজে যোগ দেননি সিলেটের বেশির ভাগ চা-শ্রমিক

  •    
  • ২২ আগস্ট, ২০২২ ১৬:০৯

সোমবার দুপুর পর্যন্ত কাজে যোগ দেননি মালনীছড়া চা বাগানের শ্রমিক নবীন মুন্ডা। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নেতাদের কথা আমরা বিশ্বাস করি না। তারা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে সরাসরি তার আশ্বাসের কথা শুনতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পেলে আমরা কাজে ফিরে যাব।’

প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও সিলেটের বেশির ভাগ বাগানের শ্রমিকরা এখনও কাজে যোগ দেননি। সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত সিলেটের ২৩ বাগানের মধ্যে মাত্র পাঁচটি বাগানের কিছুসংখ্যক শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যেও বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা।

এদিকে প্রশাসনের সঙ্গে নেতাদের হওয়া বৈঠকের সিদ্ধান্তের লিখিত কাগজ দেখানোর দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকেরা। ফলে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে চলা কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা আসলেও এখন পর্যন্ত অচলাবস্থা পুরোপুরি কাটেনি চা বাগানগুলোতে।

সোমবার সিলেটের বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

রোববার রাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে চা-শ্রমিক নেতাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে জানানো হয়, শিগগির প্রধানমন্ত্রী চা-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসে তাদের মজুরি নির্ধারণ করে দেবেন এবং দাবি পূরণে পদক্ষেপ নেবেন। এই আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আগের ১২০ টাকা মজুরিতেই কাজে ফেরার সিদ্ধান্তের কথা জানান চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।

নেতাদের এই সিদ্ধান্তে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে।

সোমবার দুপুর পর্যন্ত কাজে যোগ দেননি মালনীছড়া চা বাগানের শ্রমিক নবীন মুন্ডা। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নেতাদের কথা আমরা বিশ্বাস করি না। তারা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে সরাসরি তার আশ্বাসের কথা শুনতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পেলে আমরা কাজে ফিরে যাব।’

সরেজমিনে দেখা যায়, লাক্কাতুরা, দলদলিসহ কয়েকটি বাগানের শ্রমিকরা সোমবার কাজে ফিরেছেন। বাকিগুলোতে কার্যক্রম এখনেও বন্ধ।

কাজে যোগ দেয়া লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিক সবিতা হাজরা বলেন, ‘খেয়ে না খেয়ে ধর্মঘট করলাম। কিন্তু আন্দোলন করে আমরা কী পেলাম? কেবল স্লোগানই দিলাম- ৩০০ টাকা মজুরি দে। কিন্তু কোনো লাভ তো হলো না।

‘আমাদের কামলা খাটা জীবন। কামলাই খেটে যেতে হবে। আমাদের কোনো উন্নতি নেই।’

সিলেটের খাদিম ও শ্রীমঙ্গলের জঙ্গলবাড়ি চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েও আজকে তারা ধর্মঘট করছে। কোথাও কাজ করছে না।’

এ ব্যাপারে চা-শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সভাপতি রিতেশ মোদী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চা-শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের অপেক্ষায় আছি। তারা আসলে তাদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের সিদ্ধান্ত নেব।’

চা-শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, ‘কাল প্রায় ভোররাতে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে সিদ্ধান্তের লিখিত কপি আজ সব বাগানে পাঠানো সম্ভব হয়নি। এ কারণে শ্রমিকদের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে। আশা করছি, কাল থেকে সবাই কাজে যোগ দেবে।’

দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন চা-শ্রমিকরা। ধর্মঘটের ৮ দিনের মাথায় শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে শ্রম অধিদপ্তর ও সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন চা-শ্রমিক নেতারা।

বৈঠক শেষে শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানান। তবে নেতাদের এই সিদ্ধান্ত জানানোর পরই ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ চা-শ্রমিকরা। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।

এদিন ২৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন তারা। এ সময় নেতাদের বিরুদ্ধেও বিষোদগার করেন শ্রমিকরা। পরে রাতে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

এরপর রোববার রাত ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের বৈঠক হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নতুন মজুরি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি ঠিক রেখে চা-শ্রমিকেরা আজ থেকে কাজে যোগ দেবেন।

এ ছাড়া শ্রমিকেরা যে কয়দিন কর্মবিরতি পালন করেছেন, মালিকপক্ষ তাদের নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের সেই মজুরি দেবেন বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ-সম্পাদক পরেশ কালিন্দি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আপাতত আমরা পূর্বের মজুরিতেই কাজে যোগ দেব। তবে দ্রুততম সময়ে প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে আলাপ করে নতুন মজুরি নির্ধারণ করবেন। আর ধর্মঘট চলাকালীন ১০ দিনের মজুরিসহ সকল সুবিধাদি মালিকপক্ষ প্রদান করবে।’

বৈঠক শেষে জেলা প্রশসকের প্যাডে একটি যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়। এতে উল্লেখ রয়েছে- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে তার সম্মানে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ২২ আগস্ট থেকে কাজে যোগদান করবেন। আপাতত চলমান মজুরি অর্থাৎ ১২০ টাকা হারেই শ্রমিকগণ কাজে যোগদান করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স-পরবর্তীতে মজুরির বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনার পর চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে।

এ বিভাগের আরো খবর