বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিলেটের চা শ্রমিকদের দ্বিগুণ আয় পঞ্চগড়ের শ্রমিকদের

  •    
  • ২২ আগস্ট, ২০২২ ১৮:২০

প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা তুলে শ্রমিকরা পারিশ্রমিক পান ৩ টাকা করে। নারী শ্রমিকরা প্রতিদিন দেড় শ থেকে দুই শ কেজি এবং পুরুষ শ্রমিকরা সাড়ে তিন শ থেকে চার শ কেজি পর্যন্ত কাঁচা চা পাতা তুলতে পারেন। সে হিসাবে একজন নারী শ্রমিক প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা এবং পুরুষ শ্রমিকরা ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। অথচ সিলেট অঞ্চলের শ্রমিকরা দিনে মজুরি পান ১২০ টাকা, মালিকপক্ষ যে সুযোগ-সুবিধা দেয়ার দাবি করে, সেগুলো মিলিয়েও তা ৪০০ টাকার বেশি হয় না।

সিলেট অঞ্চলের চা শ্রমিকরা যখন দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে ধর্মঘটে ব্যস্ত ছিলেন, সে সময় চুটিয়ে কাজ করে গেছেন উত্তরে চায়ের নতুন ঠিকানা পঞ্চগড়ের চা শ্রমিকরা। মজুরি নিয়ে কোনো খেদ নেই তাদের মধ্যে। কারণ সেখানকার মজুরি কাঠামো সিলেট অঞ্চলের কাঠামোর চেয়ে অনেক ভালো।

শ্রমিকরা জানান, সেখানে দিনে ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারছেন তারা। আর এই অর্থে মোটামুটি চলে যাচ্ছে দিন।

পঞ্চগড়ের শ্রমিকদের জন্য অবশ্য মালিকরা রেশন, আবাসন, চিকিৎসা ইত্যাদি সুবিধা দেন না, যেটির কথা বলে সিলেট অঞ্চলের বাগান মালিকরা দাবি করে থাকেন, দিনে মজুরি ১২০ টাকা হলেও সব সুযোগ-সুবিধা মিলিয়ে তা ৪০০ টাকার বেশি নয়।

শ্রমিকরা যদি সব সুযোগ-সুবিধা মিলিয়ে দিনে ৪০০ টাকার বেশিও পান এবং তারা যে দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা দাবি করছেন, সেটি যদি মালিকপক্ষ শেষ পর্যন্ত মেনেও নেয়, তাহলেও সেটি ৬০০ টাকায় পৌঁছবে না, যে টাকা অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করে পঞ্চগড়ের শ্রমিকরা পাচ্ছেন।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পঞ্চগড় সফরে গিয়ে সীমান্তের ওপারে ভারতে চা বাগান দেখতে পান। তখন তিনি এপারেও কেন বাগান হবে না, সে প্রশ্ন রেখে আসেন।

এর পর থেকেই শুরু। পরীক্ষামূলক বাগান করার পর যখন দেখা যায় এখানে চায়ের মান বেশ ভালো, তখন থেকে প্রতি বছরই বাড়ছে বাগানের আয়তন। যে জমি পতিত থাকত, সেই জমিতে এখন দুটি কুঁড়ি একটি পাতা তুলতে ভোরের আগে থেকেই শুরু হয় ব্যস্ততা।

পঞ্চগড়সহ পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলায় ১০ হাজার ২০০ একর জমিতে চা আবাদ হচ্ছে। সেখানে নিবন্ধিত ৯টি আর ২১টি অনিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে। এ ছাড়া কৃষক পর্যায়ে ৮ হাজার ৬৭টি ক্ষুদ্র আকৃতির বাগানে চা চাষ হচ্ছে।

গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই অঞ্চলে রেকর্ড ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার কেজি সবুজ চা পাতা থেকে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি বা ১৪ দশমিক ৫০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।

কেবল বাগান নয়, সেখানে গড়ে উঠেছে ৪১টি কারখানা, যার মধ্যে ২২টিতে এখন উৎপাদন শুরু হয়েছে।

সিলেট অঞ্চলের মতো সেখানে কেবল চা বাগানের জন্য আলাদা শ্রমিক নেই। বাগানে তাদের জন্য নেই আবাসের আলাদা বন্দোবস্ত।

সিলেটে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভে চা শ্রমিকরা। ফাইল ছবি

সেখানে শ্রমিকরা অস্থায়ীভাবে কাজ করেন। তারা কেজি হিসাবে কাঁচা চা পাতা তুলে টাকা বুঝে নেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে নিয়োজিত থাকেন।

প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা তুলে শ্রমিকরা পারিশ্রমিক পান ৩ টাকা করে। নারী শ্রমিকরা প্রতিদিন দেড় শ থেকে দুই শ কেজি এবং পুরুষ শ্রমিকরা সাড়ে তিন শ থেকে চার শ কেজি পর্যন্ত কাঁচা চা পাতা তুলতে পারেন।

সে হিসাবে একজন নারী শ্রমিক প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা এবং পুরুষ শ্রমিকরা ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন।

৯ মাস পাতা তোলার কাজের পর এই শ্রমিকরাই আবার পরের তিন মাস বাগান পরিচর্যার কাজ করে থাকেন।

প্রতি বছরের মার্চ থেকে শুরু হয়ে নভেম্বর পর্যন্ত চলে চা উৎপাদনের কার্যক্রম। এক মৌসুমে সাত পর্বে পাতা তোলার কাজ করা হয়। আর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি- এই তিন মাস চা পাতা সংগ্রহ ও কারখানাগুলোতে চা উৎপাদন বন্ধ থাকে। এ সময় চাষিরা তাদের বাগান প্রুনিং করে থাকেন।

সদর উপজেলার জগদল এলাকার চা শ্রমিক হোসনে আরা বেগম জানান, তিনি প্রতিদিন গড়ে ২০০ কেজি কাঁচা পাতা তুলছেন। এই হিসাবে তার আয় দিনে ৬০০ টাকা।

একই এলাকার চা শ্রমিক খয়রুল হোসেন জানান, আগে তিনি কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সর্বোচ্চ দৈনিক মজুরি পেতেন ৫০০ টাকা। কয়েক বছর ধরে তিনি চা বাগান থেকে পাতা তোলার কাজ করছেন। এখানে প্রতিদিন তিনি উপার্জন করছেন ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।

তেঁতুলিয়া উপজেলার বিল্লাভিটা এলাকার চা চাষি কাজী আনিস জানান, তারা অস্থায়ী ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ দেন। এসব শ্রমিক কেজি দরে বাগান থেকে চা প্লাক করে থাকেন।

একই উপজেলার শিলাইকুঠি বালাবালি এলাকার চা বাগান মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাগান থেকে ছোট করে পাতা কাটি। এ জন্য প্রতি কেজি কাঁচা পাতা কাটার জন্য শ্রমিককে দিই ৪ টাকা করে। একজন পুরুষ শ্রমিক ২০০ থেকে ৩০০ কেজি এবং নারী শ্রমিকরা ১০০ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত পাতা কাটতে পারেন। আগে বড় করে পাতা কাটতে দিতাম ৩ টাকা কেজি দরে।’

শ্রমিকরা জানান, সেখানে দিনে ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারছেন তারা। আর এই অর্থে মোটামুটি চলে যাচ্ছে দিন।

গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই অঞ্চলে রেকর্ড ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার কেজি সবুজ চা পাতা থেকে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি বা ১৪ দশমিক ৫০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।

পঞ্চগড় চা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শামীম আল মামুন বলেন, ‘সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের শ্রমিকরা স্থায়ী। মজুরি ছাড়াও তারা রেশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। পঞ্চগড়সহ উত্তরের চা বাগানগুলোতে চা শ্রমিকরা অস্থায়ীভাবে কাজ করেন। এই অঞ্চলের শ্রমিকরা বাগান থেকে কাঁচা চা পাতা তোলেন কেজি হিসাবে। বর্তমানে এই অঞ্চলে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা তুলে শ্রমিকরা পান ৩ টাকা করে। এই হিসাবে তাদের আয় দিনে ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।’

এই কর্মকর্তা জানান, পঞ্চগড় জেলার চা বাগানগুলোতে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন, যার অর্ধেকই নারী শ্রমিক। এদের অধিকাংশ আবার সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী থেকেও সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। ফলে তাদের প্রকৃত আয় সিলেট অঞ্চলের শ্রমিকদের আয়ের চেয়ে বেশি।

পঞ্চগড়ের শ্রমিকরা যদি ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় করতে পারে, তাহলে সিলেটের শ্রমিকদের ৩০০ টাকা মজুরি মেনে নিতে কী সমস্যা- জানতে চাইলে সিলেটের আহমেদাবাদ চা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আফজাল রশীদ চৌধুরী দাবি করেন, সেখানে সব শ্রমিকরা এই সুবিধা পায় না।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পঞ্চগড়ে যেসব বাগানে গ্রিন টি উৎপাদন করা হয় সেগুলোর শ্রমিকরাই কেবল বেশি মজুরি পেয়ে থাকেন। কারণ, গ্রিন টির জন্য বিশেষ ধরনের চা পাতা প্রয়োজন হয় এবং বিশেষ ধরনের শ্রমিকের প্রয়োজন। এছাড়া সাধারণ চায়ের চেয়ে গ্রিন টি দিগুনের চাইতেও বেশি দামে বিক্রি হয়। ফলে সেখানকার শ্রমিকদের বেশি মজুরি দেয়া সম্ভব হয়।

‘তবে আমাদের অনেক শ্রমিকও দিনে সবমিলিয়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করে।’

এ বিভাগের আরো খবর