সাধারণ মানুষের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের (ডিসি অফিস) দরজা-জানালা খোলা রাখতে বলেছে হাইকোর্ট। এ সময় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলামকে সতর্ক করে তার কার্যালয়ের দরজা-জানালার পর্দা সরিয়ে ফেলতে বলেছেন বিচারক।
আদালত অবমাননা-সংক্রান্ত এক মামলায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক হাজির হলে সোমবার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে।
এ সময় আদালত অবমাননার মামলায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে অব্যাহতি দেয়া হয়।
আর আদালত অবমাননায় জারি করা রুলের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৪ অক্টোবর দিন ঠিক করে দেয় আদালত।
এক অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
এ সময় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও নিলামকৃত সম্পত্তি গ্রহণকারী ব্যবসায়ীও উপস্থিত ছিলেন।
আদেশ শেষে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসককে আদালত ডায়াসের কাছে ডেকে নেন। এ সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘আপনাকে আদালতে আসতে হবে না। তবে আপনাকে সতর্ক করছি। সাধারণ জনগণের জন্য আপনাদের দরজা খোলা রাখবেন। দরজা-জানালায় কোনো পর্দা থাকবে না।
‘মানুষ যাতে আপনাকে দেখতে পারে, আপনি কী করছেন। আপনি বসে আছেন, এটা যেন সাধারণ মানুষ দেখতে পারে। সাধারণ মানুষ যেন সহজেই আপনার কাছে যেতে পারে।’
বিচারক আরও বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, ডিসি অফিসে সাধারণ মানুষ যেতে পারে না। দরজা-জানালায় ভারী পর্দা দেয়া থাকে। যেকোনো মানুষ যাতে আপনার কাছে যেতে পারে সে জন্য কোনো পর্দা থাকবে না।’
এ সময় ডিসিকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, ‘আপনারা লাক্সারিয়াজ জীবন-যাপন করেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে আপনাদের তেমন যোগাযোগ থাকে না।
বিচারক বলেন, ‘সব শ্রেণির মানুষ যাতে আপনাকে দেখতে পারে আপনি বসে কাজ করছেন। লুঙ্গি পরেও যেন একজন মানুষ আপনার কাছে যেতে পারে।’
‘ভালো কাজ করুন। চুরি-ডাকাতি-গুণ্ডামি, দখলবাজি যদি চলে আর এটা যদি আপনার নজরে আসে সঙ্গে সঙ্গে আপনি দেখবেন।
আদালত বলে, ‘অভিযোগ শুনেই আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। একজন জেলা প্রশাসক সরকারের হার্ট। আপনাদের দায়িত্ব অনেক। আপনাদের কাজের ওপর সরকারের ভাবমূর্তি নির্ভর করে।
‘সরকারের সব কাজ আপনাদের দিয়েই বাস্তবায়ন হয়। জানি আপনারা অনেক কাজ করেন, কিন্তু তার পরও সাধারণ মানুষের জন্য আপনাদের দরজা খোলা রাখুন।’
এ সময় বিচারক বলেন, সেই দিন এ মামলায় অভিযোগকারী আপনার কাছে অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আপনার কাছ পর্যন্ত যেতে পারেননি। আপনার অফিসের লোকজন অভিযোগ গ্রহণ করেননি। সেদিন যদি আপনি অভিযোগটি শুনতে পেতেন তাহলে হয়তো এত দূর আসত না।
এ জন্য আপনাদের দরজা-জানালায় কোনো পর্দা থাকবে না। আমরা এটা দেখব।’
আদালত অবমাননার অভিযোগে হাইকোর্টের আদেশে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি গতকাল রোববার আদালতে হাজির হন। শুনানি শেষে সোমবার আদেশের জন্য দিন ঠিক করে দেয়।
আদালতে ডিসি ও এসপির পক্ষে মুন্সী মনিরুজ্জামান ও ইউসুফ খান এবং এমডির পক্ষে সৈয়দ মিনহাজুল হক ও ব্যবসায়ী শফিকুলের পক্ষে ছিলেন রাগীব রউফ চৌধুরী।
আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটি সম্পদের নিলামের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে আমরা হাইকোর্টে রিট করি। ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিত করে। হাইকোর্টের এ আদেশের পরও নিলামক্রেতা লোকজন নিয়ে গিয়ে নিলামকৃত সম্পত্তি দখল করেন। আদালতের আদেশ অমান্য করার বিষয়টি আমরা আদালতের নজরে আনি। তখন আদালত ডিসি-এসপিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে হাজির হতে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কুষ্টিয়ার ডিসি-এসপিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আদালতে হাজির হন। এ মামলায় পরবর্তী শুনানির জন্য ২৪ অক্টোবর দিন ঠিক করে দিয়েছে। ডিসি ছাড়া বাবি সবাইকে ওইদিন হাজির থাকতে বলেছে আদালত।
মামলা থেকে জানা যায়, ‘ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের মালিকানাধীন বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইস মিল, ভিআইপি ফ্লাওয়ার মিলসহ বসতভিটা আট একর জমির ওপর অবস্থিত। ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৪২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তিনি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পরে ৯০ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তার সম্পত্তির ওপর নিলাম ডাকা হয়। শফিকুলের সম্পত্তির মোট মূল্য ১৩৩ কোটি টাকা, যা নিলামে ১৫ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়। নিলামের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ আগস্টের মধ্যে সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। পরে ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে গত ২ আগস্ট হাইকোর্ট নিলাম-পরবর্তী সব কার্যক্রম স্থগিত করে।