দুজনের নামই এক। সস্পর্কে সৎভাই। একজনের পরিবর্তে গ্রেপ্তার করা হয় আরেকজনকে। এরপর কেটে গেছে দুই মাস। অবশেষে কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছে আদালত।
নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (ট্রাইব্যুনাল) আদালত রোববার বিকেলে শফিকুল নামের ওই ব্যক্তিকে মুক্তির আদেশ দেয়।
আদালতের পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার হওয়ায় শফিকুলকে মামলা থেকে মুক্তি দিয়েছে আদালত। মামলার আসামি তার সৎভাই সিদ্ধিরগঞ্জের আরেক শফিকুল। তাদের দুজনের নামই এক। বাবাও একজন। তবে মা আলাদা।
মামলার আইনজীবী এমদাদ হোসেন সোহেল নিউজবাংলাকে জানান, ২০০৮ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন বাজার এলাকার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় সাত বছরের এক শিশু। পরদিন ওই এলাকায় নির্মাণাধীন একটি বাড়ি থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন শিশুটির মামা নজরুল ইসলাম। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ২৬ ফ্রেরুয়ারি শফিকুল ও সুমন নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন আদালত থেকে তাদের সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ১ মার্চ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন শফিকুল। ৫ জুন আদালতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
তদন্তে জানা যায়, চিপস কিনে দেয়ার কথা বলে বাড়ির সামনে থেকে শিশুটিকে ওই নির্মাণাধীন বাড়ির ভেতরে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধে হত্যা করে শফিকুল ও সুমন। মামলার বিচারকাজ শুরু করে আদালত। জামিনে বেরিয়ে আসার পর দুই আসামি হাজিরা দেন কয়েক বছর। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৪ জুলাই জামিনে গিয়ে পলাতক হন তারা। আদালত চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
আইনজীবী এমদাদ হোসেন আরও জানান, এই মামলায় ২৯ জুন নরসিংদীর মাধবদী থানার পাইকারচর গ্রামের শফিকুল নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বাবার নাম ইবু ওরফে ইব্রাহিম। মায়ের নাম আমেনা বেগম। তবে তিনি মামলার আসামি শফিকুল নন। আসামি শফিকুল তার সৎভাই। তাদের বাবা এক কিন্তু মা দুজন। মামলার আসামির মায়ের নাম নাজমা বেগম। তিনি ইবু অরফে ইব্রাহিমের দ্বিতীয় স্ত্রী। বিষয়টি আদালতকে জানানোর পর বিচারক সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রতিবেদনসহ আদালতে হাজির হতে বলেন।
রোববার বিকেলে এ নিয়ে আদালতে শুনানি হয়। সেখানে হাজির হন ওসি। সঙ্গে নিয়ে আসেন মামলার বাদী ও আসল আসামি শফিকুলের মা নাজমা বেগমকে। তারা আদালতে জানান, নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করা শফিকুল মামলার আসামি নন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আদালত জানতে চাইলে আমি তদন্ত করি। তদন্ত প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে। তারা পরস্পর সৎভাই। দুজনের নামও একই। বাবাও একজন। এ কারণে পুলিশের ভুল হয়েছে। তবে পুলিশের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল তা আদালতকে জানিয়েছি।’
মামলার বাদী নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ আদালতে যে শফিকুলকে হাজির করা হয়েছে সে আসল শফিকুল নয়। আসল শফিকুলের মা নাজমা বেগমও আদালতে হাজির হয়ে বলেছেন যে তার ছেলে পলাতক।’
মা নাজমা বেগম বলেন, ‘এই শফিকুল আমার সৎছেলে। আমার ছেলে পলাতক। সে কোথায় আছে জানি না।’
শফিকুলদের বৃদ্ধ বাবা ইবু ওরফে ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বড় সংসারের স্ত্রীর নাম আমেনা বেগম ও ছেলের নাম শফিকুল। এ সংসারে পারভীন নামে একটা মেয়ে আছে। শফিকুলের বয়স ৪৫ বছরের মতো। ওরা নরসিংদীতে থাকা অবস্থায় তিন যুগ আগে আমি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে গিয়া নাজমাকে বিয়ে করি। এরপর সেখান থেকে সিদ্ধিরগঞ্জে যাই। এ সংসারে একটা ছেলে হয়। নাজমা শখ কইরা ওর ছেলের নামও শফিকুল রাখে। পরে তাদের রাইখা আমি চলে আসি। এর পর থেকে আমার সঙ্গে আর তাগো যোগাযোগ নাই।’
তিনি জানান, সম্প্রতি নরসিংদী থেকে বড় ছেলে শফিকুলকে গ্রেপ্তার পর তিনি জানতে পারেন যে ছোট ছেলে শফিকুল মামলার আসামি।
পারভীন বেগম বলেন, ‘বাবা আরেকটা বিয়া করছে আমরা তা জানতাম না। নরসিংদীর পুলিশ আমার ভাই শফিকুলকে ধরে নেয়ার পর আমরা মামলার কাগজপত্র তুলি। তারপর দেখি দুইজনের নাম এক। বাবার নাম এক কিন্তু মার নাম আলাদা। পরে বাবারে ধরছি। তখন সে কয়, ওই শফিকুল তার ছোট স্ত্রী নাজমার ছেলে। থাকে সিদ্ধিরগঞ্জে।’
পারভীন বেগম আরও বলেন, ‘আমার ভাই অপরাধী না। যে অপরাধী সে পলাতক। যে অপরাধ করছে তার বিচার হোক। আমার ভাই বিনা দোষে জেল খাটতাছে প্রায় দুই মাস ধইরা। এটা কেন হইল? আমরা এর বিচার চাই।’