আদালত অবমাননার অভিযোগে তলব করা কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডির বিষয়ে আদেশের জন্য সোমবার দিন ঠিক করে দিয়েছে হাইকোর্ট।
রোববার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ঠিক করে দেয়।
আদালতে আদেশে হাইকোর্টে হাজিরা দিয়েছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও নিলাম করা সম্পত্তির গ্রহনকারী ব্যবসায়ী। তাদেরকে আদেশের সময় আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
কুষ্টিয়ার ডিসি ও এসপিকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহিত দিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আবেদন জানান। এ বিষয়ে আদালত বলেন, ‘এটা আদালত অবমাননার মামলা। আদেশের সময় তাদেরকে আদালতে হাজির থাকতে হবে।’
আদালত অবমাননার মামলায় কুষ্টিয়ার সদর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন খান কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় আদালতে হাজির হননি। তার আইনজীবী কোভিড সংক্রান্ত রিপোর্ট ও চিকিৎসকের সনদ আদালতে জমা দেন।
শুনানির সময় আদালত জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘এই সম্পত্তি সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’
পুলিশ সুপার (এসপি) মো. খায়রুল আলম বলেন, ‘আদালতের আদেশের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানার ওসি আমাকে অবহিত করেননি। যার কারনে বিষয়টি আমার জানা ছিল না।’
তখন আদালত বলেন, ‘আপনি পুলিশ সুপার হিসাবে একজন ক্ষমতাবান কর্মকর্তা। এই ক্ষমতা আপনার দু’ভাবে ভোগ করার সুযোগ আছে। জনগণের সেবা করে অথবা স্বেচ্ছাচারীভাবে। এখন বলুন, আপনি এই ক্ষমতা কিভাবে ভোগ করেন?’
জবাবে এসপি বলেন, ‘জনগণের সেবার মাধ্যমে এই ক্ষমতা ভোগ করে থাকি।’
ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেনকে হাইকোর্ট বলেন, ‘ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামকে আপনারা একটি চিঠি দিয়ে নিলাম হওয়া হওয়া সম্পত্তি সাত দিনের মধ্যে বুঝিয়ে দিতে বললেন। যদি ওই সময়ের মধ্যে বুঝিয়ে না দেয় তাহলে আইনানুযায়ী প্রশাসনের সাহায্য নিতে আপনি কি কোন চিঠি দিয়েছিলেন?’
জবাবে এমডি বলেন, ‘আমি কোন চিঠি দেইনি।’
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘নিলাম কার্যক্রমের উপর আদালতের স্থগিতাদেশ আছে সেটা জানার পর নিলাম ক্রয়কারী ব্যক্তিকে সেটি অবহিত করেছিলেন?’
জবাবে এমডি বলেন, ‘জানা নাই।’
নিলামে সম্পত্তি ক্রয়কারী রশিদ অ্যগ্রো ফুড লিমিটেডের ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদের কাছে আদালত জানতে চান, ‘নিলাম সম্পত্তি কেনার পর ব্র্যাক ব্যাংক কি আপনাকে তার দখল বুঝিয়ে দিয়েছে?’
জবাবে তিনি বলেন, ‘জ্বি, ব্যাংক বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার কোন কাগজ আমার কাছে নেই।’
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘তাহলে কিভাবে আপনি ওই সম্পত্তির দখল নিলেন? নিজেই কি ওই সম্পত্তির দখল নিয়েছেন?’
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন, ডিসি ও এসপির পক্ষে আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান ও ইউসুফ খান, এমডির পক্ষে সৈয়দ মিনহাজুল হক ও ব্যবসায়ী শফিকুলের পক্ষে রাগীব রউফ চৌধুরী।
সম্পত্তি নিলাম কার্যক্রমের উপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরেও তা না মানার অভিযোগে করা আদালত অবমাননার মামলায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি, কুষ্টিয়া সদর থানার ওসি ও নিলামে সম্পত্তি নেয়া ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদকে গত ১১ আগস্ট তলব করেছিল হাইকোর্ট। সেই তলব আদেশ অনুযায়ী তারা রোববার আদালতে হাজির হন।
আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী জানান, ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের মালিকানাধীন বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইস মিল ও ভিআইপি ফ্লাওয়ার মিলসহ বসতভিটা আট একর জমির উপর অবস্থিত। তিনি ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৪২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পরে ৯০ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। তবে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তার সম্পত্তির উপর নিলাম ডাকা হয়। শফিকুলের সম্পত্তির মোট মূল্য ১৩৩ কোটি টাকা। যা নিলামে ১৫ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘নিলামের পর ৪ আগস্টের মধ্যে সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে গত ২ আগস্ট হাইকোর্ট নিলাম পরবর্তী সকল কার্যক্রম স্থগিত করে।
‘একইসঙ্গে এক মাসের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংককে ২০ কোটি এবং বছরে ৬ কোটি টাকা করে পরিশোধ করতে শফিকুলকে নির্দেশ দেয়। সেই মোতাবেক হাইকোর্টের আদেশের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিবাদীদেরকে ল’ ইয়ার্স সার্টিফিকেট দিয়ে অবগত করা হয়। কিন্তু সেই আদেশ না মেনে নিলাম করা সম্পত্তি দখলে নেয়ার অভিযোগে আদালত অবমাননার মামলা হয়।’