রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে সুমন শেখের মৃত্যু নিয়ে পুলিশ ও পরিবারের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের মধ্যে এবার মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে বিরপীতমুখি বক্তব্য পাওয়া গেছে।
পুলিশ বলেছে, তারা পরিবারকে মরদেহ হস্তান্তরে প্রস্তুত। তবে পরিবার বলছে, পুলিশ তাদেরকে শর্ত দিচ্ছে।
সুমনের শ্যালিকা শাহনাজ আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ বলেছে আমাদের লাশ আমাদের এলাকায় রামপুরায় আনতে দেবে না। তারা বলছে লাশ ডাইরেক্ট গ্রামের বাড়িতে নিতে। আমরা লাশ গ্রামের বাড়িতে নেব কেন? ছোটবেলা থেকে বড় হইছি ঢাকায়। আমাদের এলাকায় লাশ আনতে দেবে না তারা ‘
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা যেটা বলেছে সব মিথ্যা কথা। গতকাল থেকে আমাদের লোক এই হাসপাতেলের সামনে আছে। কেউ মরদেহ নিতে আসে নাই। যা বলেছে সব মিথ্যা কথা।’
তিনি বলেন, ‘যিনি বলেছে মরদেহ দিতে শর্ত দেয়া হয়েছে, তাকে নিয়ে এসে দেখে যান। এখানে ছয় জন অফিসার আছে মরদেহ দেয়ার জন্য। এগুলো মিথ্যা কথা মিথ্যা অভিযোগ। এটা নিয়ে রাজনীতি করতেছে।’
চুরির অভিযোগ নিয়ে গত শুক্রবার রাতে সুমন শেখকে আটক করে পুলিশ। তার বাসা থেকে তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। থানায় থাকা অবস্থায় গভীর রাতে মারা যান তিনি।
স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে সুমনের। যদিও পুলিশ বলছে, এই তরুণ আত্মহত্যা করেছেন। তিনি তার ট্রাউজার গলায় পেঁচিয়ে এই কাজ করেন।
তবে এই দাবি মেনে নিতে নারাজ স্বজন ও এলাকাবাসী শনিবার থানার সামনে বিক্ষোভ করে।
পরে পুলিশ সুমনের সিসিটিভি ফুটেজ গণমাধ্যমকর্মী এবং নিহতদের স্বজনদেরকে দেখায়। তবে এই ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে দায়িত্বে অবহেলার কারণে। পাশাপাশি গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
গারদে একা থাকার সময় সুমন গলায় ট্রাউজার পেঁচিয়ে আত্মহত্যার সময় ডিউটি অফিসার ও সেন্ট্রি-দুই জনই ঘুমে মগ্ন ছিলেন এবং এ কারণে তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
সুমনের মরদেহ নেয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের শর্ত দেয়ার অভিযোগ করে শ্যালিকা শাহনাজ আক্তার বলেন, ‘তারা লাশ রামপুরায় নিলে কী সমস্যা সেটা বলে না। পরে আমরা লাশ আনি নাই। আজকে এখন পর্যন্ত আমরা এখনও লাশের কোন খবরও জানি না। আর আমাদেরকে কেউ কোনো সমাধানই দিচ্ছে না।’
সুমন শেখ পশ্চিম রামপুরার ঝিলকানন এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জের দাড়িকান্দি এলাকায়। তিনি ইউনিলিভারের থার্ড পার্টি ডিস্ট্রিবিউটর মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।
ওই প্রতিষ্ঠানের ৫৩ লাখ টাকা চুরি গলে গত ১৫ আগস্ট হাতিরঝিল থানায় মামলা হয়। এই মামলায় তিন জনকে আটক করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পাশাপাশি সেই কোম্পানির সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সুমন শেখকে চিহ্নিত করা হয়। এরপর তাকেও আটক করা হয়।