দিনে আয় হাজার হলেই খুশি। সেই মানুষটাকে লাখ টাকার ফোনের লোভ কাবু করতে পারেনি।
আট বছর ধরে গুলশানে রিকশা চালিয়ে সংসার চালানো আমিনুল ইসলাম গত ৫ আগস্ট এলাকার ১০৩ নম্বর রোডে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সীমা আহম্মেদকে যাত্রী করে তোলেন।
যাত্রী নেমে যাওয়ার পর দেখতে পান তার রিকশার গদির ফাঁকে একটি মোবাইল ফোন। সেটি ছিল আইফোন থার্টিন প্রো ম্যাক্স, যার দাম ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার বেশি।
ফোনটিতে খুব বেশি চার্জ না থাকায় কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি বন্ধ হয়ে যাবে বুঝতে পারছিলেন আমিনুল। ফোনটি নিয়ে কী করবেন চিন্তায় পড়ে যান। অপেক্ষায় থাকলেন কেউ কল দেয় কি না। কিন্তু কল আসেনি আর চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে যায় লাখ টাকা মূল্যের ফোনটি।
এরপর ফোনের মালিককে খুঁজে পেতে আমিনুল যা যা করেছেন, তা তাকে সংবাদের শিরোনাম করে এনেছে।
আমিনুল জানান, প্রথমে তিনি উত্তর বাড্ডার একটি দোকানে গিয়ে চার্জার কেনার চেষ্টা করেন। কিন্তু আইফোনের চার্জারের দাম ছিল তার সামর্থ্যের বেশি।
তখন তিনি বুদ্ধি করে সেই মোবাইলের সিম খুলে নিজের ফোনে চালু করেন। আর সিমটি চালুর পর এক ব্যক্তি ফোন করে ফোনের মালিককে খুঁজতে থাকেন।
সেই ব্যক্তিকে সব কথা খুলে বলেন আমিনুল। এরপর এক নারী কল করে ফোনের মালিকানা দাবি করেন। পরে তার সঙ্গে কথা বলে মালিকানা নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশের মাধ্যমে তার ফোনটি ফিরিয়ে দেন।
আমিনুল ইসলামের এই সততার কথা জানতে পারেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামও। সিদ্ধান্ত নেন, তাকে পুরস্কার দেবেন তিনি।
রোববার দুপুরে নগর ভবনের সেমিনার রুমে একটি বৈঠক শেষে আমিনুলের হাতে মেয়রের নিজেস্ব ফান্ড থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন মেয়র আতিকুল।
এ সময় দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে আমিনুলের সততার প্রতি সম্মান জানান সবাই।
মেয়র আতিকুল বলেন, ‘একটা মানুষের মধ্যে কতটা সততা থাকলে দামি ফোনের প্রতি লোভ না করে এভাবে ফেরত দিতে পারেন! আমাদের সমাজের এমন সৎ নির্লোভ মানুষের খুব প্রয়োজন। তাই আমরা তাকে সম্মান দেখিয়ে পুরস্কৃত করছি।’
আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ফোন পাওয়ার পর আমার মধ্যে কোনো লোভ কাজ করেনি, যার কারণে আমি নিজে গিয়ে মোবাইলটি ফেরত দিয়ে আসি।’
তিনি বলেন, ‘ভালো কাজ করলে যে পুরস্কার আর সম্মান পাওয়া যায়, সেটা আমি আজ টের পেলাম। মেয়রের হাত থেকে পুরস্কার নিতে আমি যে এখানে আসব, সেটা আমি কখনও কল্পনাই করিনি।’
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সীমা আহম্মেদ গত ৫ আগস্ট তার ছেলেকে নিয়ে রিকশায় চড়ে একটি রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন।