সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমানের ওপর হামলা চালিয়েছে গ্রামবাসী।
মাথায় ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন এসিল্যান্ড লিয়াকত। এ সময় গ্রামবাসী ঢিল ছুড়ে ভেঙেছে ইউএনওর গাড়ির কাঁচ।
উপজেলার বলদি গ্রামে রোববার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের দাবি, খাসজমিতে খেলার মাঠই থাকবে। আর সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাসজমিতে তৈরি হবে গুচ্ছগ্রাম। এ নিয়ে দুপুরে বলদি গ্রামে জড়ো হয় স্থানীয়রা। বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে গ্রামবাসীর ছোড়া ঢিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি সামনের কাঁচ ভেঙে যায়। এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান মাথায় ইটের আঘাতে আহত হন। তাকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছে।
শাহজাদপুরের ইউএনও তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের আশ্রায়ন প্রকল্প নির্মাণের লক্ষ্যে দুপুরে আমরা বলদিপাড়া গ্রামে জায়গা পরিদর্শনে যাই। এ সময় এলাকার কিছু যুবক ও মহিলা পথরোধ করে অশালীন আচরণ করেন৷ তারা এক পর্যায়ে পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমার গাড়ি ভাঙচুর করেন।
‘গ্রামবাসীর ছোড়া ইটে এসিল্যান্ড লিয়াকত মাথায় আঘাত পান। তাকে তখনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়৷ পরে সেখান থেকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।’
বলদি পাড়া গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‘এই জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। হঠাৎ করে এই জায়গায় প্রশাসন আশ্রয়ণ কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে গ্রামবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ওপরে হামলা চালায়। পরে পুলিশের লাঠিপেটায় অনেকেই আহত হন। আমরা এর বিচার চাই।’
স্থানীয় আব্দুর রহিম খান বলেন, শত বছরের পুরনো বলদিপাড়া মাঠে আশেপাশের কয়েক গ্রামের শিশু-কিশোর খেলাধূলা করে। চলতি বছর এখানে গুচ্ছ গ্রামের জন্য জায়গা নির্ধারণ হয়েছে। এমন তথ্যে কয়েক মাস ধরে গ্রামবাসী একজোট হয়ে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। প্রশাসন এসব আমলেই নিচ্ছে না। সেখানে গুচ্ছ গ্রাম করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তিনি জানান, দুপুর ঘটনার সময় গ্রামবাসীর অপরপক্ষের ঢিলের আঘাতে শিশুসহ ৫ জন আহত হয়েছে।
কায়েমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউল আলম ঝুনু জানান, খাস জমিতে গুচ্ছ গ্রামের জন্য বরাদ্দ এসেছে। খাসজমিতে বাধা দেয়ার এখতিয়ার কারোরই নেই। তবে খেলার মাঠের বিকল্প ব্যবস্থা করার কথাও প্রসাশন ভাবছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. ফারুক আহমেদ জানান, যে জায়গা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সমাধানের জন্য সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে মাঠের পাশেই অন্য খাসজমিতে গুচ্ছগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ডিসি জানান, সেই জায়গা পরিদর্শনের জন্য দুপুরে ইউএনও, এসিল্যান্ড ও ইউপি চেয়ারম্যান বলদিগ্রামে যান। সেখানকার দুষ্ট প্রকৃতির কিছু মানুষ গ্রামবাসীকে ভুল বুঝিয়ে সড়কে জড়ো করে সরকারি কাজ বাধাগ্রস্ত করে। এক পর্যায়ে উত্তেজিত গ্রামবাসী গাড়ি ভাঙচুর ও এসিল্যান্ডকে আহত করে। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসিল্যান্ডকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে আনা হয়েছে বলে জানান ডিসি।
শাহজাদপুর থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম মৃধা জানান, পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে গ্রামবাসীর প্রথম সারিতে নারী ও শিশুরা থাকায় কোনো এ্যাকশনে যায়নি পুলিশ। এ বিষয়ে এখনও মামলা হয়নি।