নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সাপেক্ষে উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কেউ কাজ করতে পারবে না।
ডিএনসিসি ভবনে রোববার সকালে সিটি এলাকায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে আয়োজিত সমন্বয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
গত ১৫ আগস্ট বিকেলে উত্তরার জসিম উদ্দীন মোড়ে বিআরটি প্রকল্পের বক্স গার্ডার ক্রেনে করে গাড়িতে তোলার সময় সেটি পিছলে পড়ে যায় চলন্ত প্রাইভেট কারের ওপর। ওই ঘটনায় পাঁচজনের প্রাণহানি হয় ঘটনাস্থলেই। গাড়িতে থাকা নবদম্পতি বেঁচে যান।
ওই দুর্ঘটনায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের অবহেলার বিষয়টি প্রকাশ পায়। এত ভারী একটি বস্তু সরানোর সময় সেখানে নিরাপত্তামূলক যেসব পদক্ষেপ নিতে হতো, তার কিছুই করা হয়নি। সেখানে কোনো নিরাপত্তা-বেষ্টনী তৈরি করা হয়নি, যেটি করলে প্রাণহানি এড়ানো যেত।
এমন বাস্তবতায় আয়োজিত সমন্বয় সভায় মেয়র আতিক বলেন, ‘আজ থেকে বিআরটি কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করতে পারবে, তবে অবশ্যই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে তারা কাজ করতে পারবে না।
‘শুধু বিআরটি না, অন্য কেউই আজ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কাজ করতে পারবে না।’
বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি নিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, “বিদেশিরা এই গাজীপুর সড়ক দিয়ে যায় আর আমাকে বলে, ‘আর কত বছর এই কাজ দেখতে হবে?’ তাদের মতো আমারও প্রশ্ন, ‘আর কতদিন এই কাজ চলতে থাকবে?’ তাই আমি বলতে চাই, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে এবং সেই সব কাজে ব্যারিকেড দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
“আজকে আমি এটাই মেসেজ দিতে চাই, সেফটি নিশ্চিত না করে কেউ কাজ করবেন না। একটি দুর্ঘটনাও যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সরকারকে বিব্রত করা যাবে না; জনগণকে ভোগান্তি দেয়া যাবে না—এটা মাথায় রেখেই প্রকল্পের কাজ করতে হবে। আমরা যেমন বলি ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি’, তেমনি আমরা বলতে চাই, ‘নো সেফটি, নো ওয়ার্ক’। শুধু কাগজে কলমে নয়; বাস্তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
মেয়র দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো এই ঘটনার পরেও গতকাল দেখলাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে কোনো প্রকার নিরাপত্তাবলয় ছাড়াই। তার মানে আমাদের এখনও টনক নড়ে নাই। আর কতজন মারা গেলে আমাদের টনক নড়বে?
‘তাই আমি আপনাদের কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করছি, আসুন আমরা সবাই মিলে সচেতন হই এবং একটি সেফ সিটি গড়ে তুলতে কাজ করি।’
সভায় সওজের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান বলেন, ‘এই দুর্ঘটনার ঘটনায় পুরোপুরি দায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা আমাদের না জানিয়েই সরকারি বন্ধের দিন কোনো নিরাপত্তা ছাড়াই কাজ করছিল। তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা দেখি এই বিআরটি প্রকল্পে মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনা ঘটে। অন্য প্রকল্পেও দুর্ঘটনা ঘটে। তাই আমাদের উচিত কোনো বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যদি কোনো অনিয়ম করে, তাহলে তাদের রাষ্ট্রদূতকে সমন করা যেতে পারে।
‘সমন করে তাদের জানানো উচিত, তাদের দেশের ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ করছেন না। তাহলে ওই ঠিকাদার সঠিকভাবে কাজ করতে বাধ্য হবেন বলে আমি মনে করি।’
সভায় ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞাসহ ঢাকা শহরে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে উত্তরায় দুর্ঘটনাস্থলে বিআরটির কাজ শুরু হয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক সফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সামগ্রিক প্রকল্পের কাজ কখনও বন্ধ হয়নি। এটা শুরু থেকেই চলমান, তবে যেসব জায়গায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি, সেখানে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল।
‘এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে, সেখানে কাজ শুরু করবে।’