পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া এলাকার ঐতিহাসিক ধূপখোলা মাঠ অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করে তা রক্ষায় আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও সমমনা ৭টি বেসরকারি সংস্থা এবং একজন বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে রোববার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে অননুমোদিত ও বেআইনিভাবে শুরু হওয়া মার্কেট নির্মাণের সব কার্যক্রম বন্ধ করে মাঠটিকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানানো হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র, ভূমি সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ সচিব, পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, রাজউক চেয়ারম্যান, পুলিশ কমিশনার, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, জেলা প্রশাসক, ডিএসসিসির ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কাছে এ নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, ডিএসসিসির ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে পড়া ৭ দশমিক ৪৭ একর আয়তনের ঐতিহাসিক ধূপখোলা মাঠ ঢাকা মহানগরীর সর্ববৃহৎ মাঠ। এ মাঠে পুরান ঢাকার সাতটি থানা এলাকার শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করে। এটি শুধু একটি খেলার জায়গাই নয়, আশপাশের এলাকার বাসিন্দা, বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে অবসর সময় কাটানোরও জায়গা।
এতে আরও বলা হয়, ধূপখোলা মাঠটি ঢাকা মহানগরীর ঐতিহ্য ও গর্বের একটি অংশ। এ মাঠে বাংলাদেশের জাতীয় দলের বেশ কিছু খেলোয়াড় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখনও প্রতি বছরই ধূপখোলা মাঠ থেকে জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় তৈরি হয়। মাঠটি মূলত তিন ভাগে বিভক্ত। এর একটি অংশ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। বাকি দুটি অংশ ইস্ট এ-ক্লাব মাঠ ও স্থানীয় খেলার মাঠ। তিনটি অংশের প্রতিটি আকারে একটি ফুটবল মাঠের চেয়ে বড়।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালে মাঠে একটি বাণিজ্যিক শিশুপার্ক নির্মাণের উদ্যোগের প্রতিবাদে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাধ্য হয়ে গণশুনানির আয়োজন করে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। তাতে এলাকাবাসী বাণিজ্যিক আগ্রাসন থেকে ধূপখোলা মাঠ রক্ষার পক্ষে অবস্থান নেন। গণদাবির মুখে বাণিজ্যিক শিশুপার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেও বর্তমানে মাঠটিতে গ্যালারিসহ খেলার মাঠ ও শিশু কর্নার এবং একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে ডিএসসিসি। প্রবল জন-আপত্তি ও আন্দোলনের ফলে প্রকল্পের কাজ সাময়িক বন্ধ রাখলেও ২০২১ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই মাঠের ভেতরে রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে একটি বহুতল মার্কেট তৈরির কাজ শুরু করে ডিএসসিসি।
এতে আরও বলা হয়, এ মাঠ ‘উন্নয়ন’ উদ্যোগের অংশ। এ মার্কেটের কারণে মাঠের দশমিক ৬২ শতাংশ জায়গা কমে যাবে। বহুতল মার্কেটটি ছাড়াও ডিএসসিসি মাঠটিতে হাঁটার রাস্তা, বসার ব্যবস্থা, পার্কিং জোন, একটি ক্যাফেটেরিয়া ও শিশুদের জন্য আলাদা জোন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ফলে মাঠের জায়গা আরও কমবে। কথিত ‘উন্নয়নকাজের’ ফলে ফুটবল মাঠের আকার ৭ দশমিক ৪৭ একর থেকে ৪ দশমিক ০১ একরে নেমে আসবে। ফলে উন্মুক্ত ও জনসাধারণের ব্যবহৃত স্থান হিসেবে মাঠের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোই হারিয়ে যাবে। আর এর সঙ্গে হারাবে এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য।
যৌথ নোটিশকারী একমাত্র ব্যক্তি হলেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। সংস্থাগুলো হলো বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), নিজেরা করি, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ব্লাস্ট, নাগরিক উদ্যোগ ও গ্রিন ভয়েস।