মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে হবিগঞ্জের মাধবপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছেন চা-শ্রমিকরা।
মহাসড়কের মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুরের চৌমুহনীর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকায় রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তেলিয়াপাড়া, সুরমা, নোয়াপাড়াসহ ২৩টি বাগানের কয়েক হাজার চা-শ্রমিক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এতে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকরা ৩০০ টাকা মজুরির জন্য স্লোগান দেন। বাড়তি মজুরির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
নিউজবাংলাকে মহাসড়ক অবরোধের তথ্য নিশ্চিত করে মনু ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, 'আমাদের শ্রমিকরা ১৪৫ টাকা মজুরি মানছেন না। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, স্বাধীন বাংলাদেশে আমরাও স্বাধীন হয়ে বাঁচতে চাই।’
এর আগে শনিবার মধ্যরাতে এক ভিডিও বার্তায় আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, ‘বিকেলে শ্রম অধিপ্তরের সঙ্গে আমরা বৈঠকে বসি। সেখানে আমাদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয় এবং প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে ফিরে আমাদের সঙ্গে বসবেন জানিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেই, আমি কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করিনি।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠক শেষে বেরিয়ে চা শ্রমিকদের ক্ষোভ আঁচ করতে পারি। তারা ২৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান। আমরাও তাদের সঙ্গে একমত। তাই আগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন চা শ্রমিকরা। ধর্মঘটের ৮ দিনের মাথায় শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে শ্রম অধিপ্তর ও সরকারের প্রতিনিধির সাথে বৈঠকে বসেন চা শ্রমিক নেতারা।
বৈঠক শেষে শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানানোর পরই ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ চা শ্রমিকরা। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। তারা ২৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন তারা। এ সময় নেতাদের বিরুদ্ধেও বিষেদগার করেন শ্রমিকরা।
পরে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা শনিবার রাত ১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘সিলেট ডিসি অফিসে মিটিং চলাকালীন সময়ে আমি কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবর্তনকৃত সিদ্ধান্তে অবগত ছিলাম না। সিলেট ভ্যালি কার্যকরী পরিষদ বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন বি ৭৭ এর প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তের সঙ্গে ছিল, থাকবে। আমাদের আন্দোলন চলবে।’
মাত্র ২৫ টাকা মজুরি বাড়ানোতে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ জানিয়ে চা-শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সভাপতি রিতেশ মোদী বলেন, ‘শ্রমিকরা এই সমঝোতা মানে না। আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’