২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার ডেথ রেফারেন্সসহ আসামিদের করা আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। হাইকোর্টের বেঞ্চ ঠিক করে দিতে প্রধান বিচারপতি বরাবর আবেদনও করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, তারাও প্রস্তুত রয়েছেন শুনানিতে অংশ নিতে।
আলোচিত এ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, নিম্ন আদালত পেরিয়ে মামলাটি এখন হাইকোর্টে বিচারের অপেক্ষায়। এরই মধ্যে মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হামলার মাধ্যমে রাষ্ট্রের একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এর শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে একটি দরখাস্ত করেছি। প্রধান বিচারপতি একটি বেঞ্চ ঠিক করে দেবেন।’
রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা জানান, ডেথ রেফারেন্স হিসেবে যে মামলাগুলো হাইকোর্টে আসে, সেগুলো প্রধান বিচারপতি নির্দিষ্ট করে হাইকোর্টের বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। পরে সেই বেঞ্চেই শুনানি হয়। সে কারণে এই মামলা শুনানির জন্য একটি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিতে প্রধান বিচারপতির কাছে দরখাস্ত করা হয়েছে।
আদালতের আগামী অবকাশকালীন ছুটির পরই প্রধান বিচারপতি মামলাটি শুনানির জন্য একটি বেঞ্চ ঠিক করে দিতে পারেন বলে আশা করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। যে বেঞ্চ ঠিক করা হবে, সেই বেঞ্চেই শুনানি করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আদালতের কাছে আমাদের প্রার্থনা থাকবে বিচারিক আদালত আসামিদের যে সাজা দিয়েছে, তা যেন উচ্চ আদালতেও বহাল থাকে। মামলায় আসামিদের সাজা বহাল রাখতে যে ধরনের আইনগত দিক আছে, তা তুলে ধরার চেষ্টা করব।’
এ মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২১ আগস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায় হয়েছে ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট। হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি হয় বছর এবং ক্রম অনুসারে। সে হিসেবে হাইকোর্টে বর্তমানে ২০১৬ সালের ডেথরেফারেন্স মামলার শুনানি চলছে। নম্বর ও বছরের ক্রম মেনে যদি স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী শুনানি হয়, তাহলে হয়তো আরও দু-তিন বছর সময় লাগতে পারে।
‘তবে প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার আছে, তিনি যখন ইচ্ছা যেকোনো মামলা কার্য তালিকায় আনতে পারেন। সে হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি যদি শুনানির জন্য বেঞ্চ ঠিক করে দেন, তাহলে শুনানি হবে। আসামিপক্ষ থেকে আমরা শুনানির জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’
এ মামলার অন্যতম আসামি লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটিকে বলা হয়, জজ মিয়া নাটক। আসলে সব থেকে বড় নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে মুফতি হান্নানের মাধ্যমে। এ মামলায় এক সময় ৬০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি হয়ে গিয়েছিল। সেই চার্জশিটে কোথাও তারেক রহমান, বাবরের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের আজ্ঞাবহ তদন্তকারী কর্মকর্তা দিয়ে নতুন করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়, যেখানে মুফতি হান্নানকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ানো হয়।
‘পরে কিন্তু হান্নান অস্বীকার করেছেন, তিনি এমন জবানবন্দি দেননি। এটি দিয়ে প্রমাণ হয়, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হয়রানি করার জন্যই এ মামলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আসামি করা হয়েছে। আশা করি উচ্চ আদালতে তারা নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।’
এই আইনজীবী জানান, গত বছরের ১২ অক্টোবর দুদকের মামলায় রায়ের সময় বাবরের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। এরপর আর কোনো সাক্ষাৎ হয়নি। বর্তমানে তিনি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন বলে জানান এই আইনজীবী।
২০২০ সালের ১৬ আগস্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত হয়ে বিজি প্রেস থেকে হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। এরপর সেটা যাচাই-বাছাই করে প্রস্তুত করা হয় পেপারবুক।
বর্বরোচিত এ ঘটনার ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় দেয় বিচারিক আদালত। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় এবং ১১ জন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
ওই বছরের ২৭ নভেম্বর দুই মামলার রায়সহ প্রায় ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার নথি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়। পরে ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি মামলায় আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য গ্রহণ করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। সে সময়ে দ্রুত পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেয় আদালত। পরে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার পেপারবুক তৈরি করা হয়।