ঢাকা দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও শেরপুরের নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক উম্মে কুলছুম রেনু।
১৮ বছর আগে আজকের দিনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো গ্রেনেড হামলায় তিনি আহত হয়েছিলেন। সেই মামলার ২২ নম্বর সাক্ষীও তিনি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক মুহূর্তে পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। সেদিন মানবঢাল রচনা করে নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুকন্যাকে প্রাণে রক্ষা করতে পারলেও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত ও শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন।
হামলার ঘটনার সময় আইভি রহমানের কাছেই ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রেনু। সেদিন ২০ মিনিটের বক্তৃতা শেষে শেখ হাসিনা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান উচ্চারণ করে মিছিল শুরুর ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে তাকে লক্ষ্য করে একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। রাস্তার ওপর পড়ে সেটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়।
একে একে আরও ১২টি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটে। গ্রেনেডের প্রথম হামলায় আহত হন রেনু। অসংখ্য স্প্লিন্টারে ঝাঁজরা হয়ে যায় তার শরীর। জ্ঞান হারানো অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথমে মৃত ঘোষণা করা হলেও পরে নড়েচড়ে ওঠায় চিকিৎসা চলে রেনুর।
উপজেলার চরঅষ্টধর ইউনিয়নের কেজাইকাটা গ্রামে তার জন্ম। বাবা মৃত মকবুল মাস্টার, মায়ের নাম শহর ভানু। ৮ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আমীন। চাচাতো ভাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রমেজ উদ্দিন, চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক, চার চাচাতো ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২০০৪ ও ২০০৫ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ৩ বার জেলেও ছিলেন তিনি।
গ্রেনেড হামলায় আহত ও মামলার সাক্ষী উম্মে কুলছুম রেনুর কাছে সেদিনের ঘটনা জানতে চায় নিউজবাংলা। আর তার কাছ থেকে শোনা যায় ২১ আগস্টের ঘটনার কিছু বর্ণনা।
তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার কবিরের ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এর প্রতিবাদে সেদিন আমাদের ২৩ নম্বর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সমাবেশ ডাকা হয়। আমরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে যাই। ট্রাকে করে দলের নেতা-কর্মীরা হাজির সেখানে। একেরপর এক বক্তব্য দিচ্ছেন।
‘আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষে যখন জয়বাংলা ও জয় বঙ্গবন্ধু বলেন, ওই মুহূর্তে রমনা ভবনের ছাদ থেকে গ্রেনেড ট্রাকের ওপর পড়ল। প্রথম গ্রেনেডটি নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে মারা হলেও স্লিপ করে সেটি নেত্রীর শরীরে না লেগে আইভি আপার শরীরে গিয়ে পড়ল। আইভি আপাসহ আমরা অনেকে আহত হলাম।’
রেনু বলেন, ‘আমরা পড়ে গেলাম। আমাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরছে আমরা দেখছি, কিন্তু কিছু বলতে পারছি না। এরপর একের পর এক গ্রেনেডের বিস্ফোরণ। এভাবে কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে আমাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমার অবস্থা খারাপ হলে মতিয়া চৌধুরী, সাবের ভাই আমাকে অন্য একটি হাসপাতালে নিয়ে যান।
‘সেখানে চিকিৎসার ১৪ দিন পর আমার জ্ঞান ফেরে। পরে ভারতের ভেলোর সিএমসি হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা নিয়ে দেশে আসি। এরপর সাভার সিআরপি হাসপাতালে ৮ মাস চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরি।’
মহিলা আওয়ামী লীগের এ নেতা আরও বলেন, ‘প্রথমে তো একেবারেই হাঁটতে পারতাম না। এখন কিছুটা পারি। আজও শরীরে গ্রেনেডের অন্তত ৭টি স্প্লিন্টার নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। চিকিৎসক বলেছেন, এগুলো আর বের করা যাচ্ছে না। কারণ এগুলো রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় শরীরের বিভিন্ন অংশে যায়। সারা শরীরে ঘুরে বেড়ায় স্প্লিন্টারগুলো।’
সেদিন গ্রেনেড হামলার সেই স্মৃতি আজও তাড়া করে বেড়ায় নেতা রেনুকে। ভয়ংকর ও বিভীষিকার সে দিন যেন আর কখনও ফিরে না আসে- এমনটাই প্রত্যাশা তার। তবে সরকার চিকিৎসা ব্যয় বহন করায় খুশি রেনু। পাচ্ছেন আর্থিক সহায়তাও।