বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আমার পাপাকে ফিরিয়ে দিন’

  •    
  • ২০ আগস্ট, ২০২২ ২২:২১

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শনিবার এমন অনেক পরিবার একত্রিত হয়েছিল, যাদের পরিবারের সদস্যরা নিখোঁজ। তাদের সবার একটাই আকুতি- স্বজনকে ফিরিয়ে দিন।

ব্যবসার কাজ শেষে দুপুরের খাবার খেতে রাজধানীর মিরপুর শাহ আলী মাজার এলাকা থেকে পার্শ্ববর্তী লালকুঠি এলাকার বাসার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসাইন বাতেন। ফোনে তা স্ত্রী স্মৃতি আক্তারকে জানিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আর বাড়ি ফেরেননি।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ওই ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন স্মৃতি। নিখোঁজ স্বামীকে ফিরে পেতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরজি জানিয়েছেন।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এমন অনেক পরিবার একত্রিত হয়েছিল, যাদের পরিবারের সদস্যরা নিখোঁজ। মায়ের ডাক নামের একটি সংগঠন ওই কর্মসূচির আয়োজন করে।

সংগঠনটির সমন্বয়কারী মঞ্জুর হোসেন ঈসা নিউজবাংলাকে জানান, নিখোঁজ স্বজনের খোঁজ চেয়ে মোট ৭০টি পরিবার কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

স্মৃতি আক্তার বলেন, ‘কাঁদতে কাঁদতে চার বছরে আমার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। আমার স্বামী কোথায়-কীভাবে আছেন তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই।

‘আমি সেদিন সন্ধ্যা ৭টায় শাহ আলী থানায় গিয়েছি। পুলিশ বলেছে র‍্যাব হেডকোয়ার্টারে যেতে। সেখানে তারা বলেছেন, এটা র‍্যাবের বিষয় না, আপনি পুলিশের কাছে যান। আজও জানি না, আমি সধবা না বিধবা।’

সমাবেশে আসা অনেকেই পরিবারের সদস্যকে না পাওয়ার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদেরই একজন বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের মেয়ে রাইতা। তিনি বলেন, ‘অনেক কেঁদেছি। এখন আর আমার কান্না আসে না।’

ছবি বুকে ঝুলিয়ে সজল চোখভরা জিজ্ঞাসা নিয়ে বাবার সন্ধান চাইছিলেন পারভেজ হোসেনের মেয়ে হৃদির মতো আরও অনেকে। হৃদির আকুতি- ‘আমার পাপাকে ফিরিয়ে দিন।’

সমাবেশে উপস্থিত শিশুদের অনেকে বাবার সঙ্গে কাটানো সময়, বাবার চেহারা বা স্নেহ-আদর কোনো কিছুর কথাই আজ আর মনে করতে পারে না। কারণ ওদের বাবা যখন গুম হন, তখন ওরা অনেক ছোট ছিল। পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত এসব শিশুর কাছে বাবা মানে বাঁধাই করা ছবি৷ মরদেহ পেলেও হয়তো বাবাকে একবার ছুঁয়ে দেখার আক্ষেপ ঘুচত ওদের।

কর্মসূচিতে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা এই হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো ফেরত চাই। এর জবাব চাই। এখানে অনেকেই স্বজনদের জন্য কান্না করছেন। আমি স্পষ্ট করে বলছি, এদের কাছে ফরিয়াদ করে কোনো লাভ হবে না। এরা এক কান দিয়ে শুনবে আরেক কান দিয়ে বের করে দেবে। স্বজন ফিরে পাবেন না। বাংলাদেশে এখন যে দুঃসময় চলছে তা গত ৫২ বছরে স্বপ্নেও আসেনি। এটা যেমন জনগণের জন্য খারাপ, তেমনই সরকারের জন্যও খারাপ।’

উপস্থিত স্বজনহারা পরিবারগুলোকে উদ্দেশ করে মান্না বলেন, ‘আপনাদের পক্ষে জাতিসংঘ সমর্থন করছে, সারা বিশ্ব সমর্থন করছে। আপনাদের পক্ষে যাদের বিবেক আছে তারা সমর্থন করছে। আমি প্রতাশা করব, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে এই প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য করতে পারব।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘মায়ের পাশে দাঁড়ানো সবার জন্য নৈতিক দায়িত্ব। অত্যাচার করে কিছুদিন থাকা যায়, সব সময় থাকা যায় না। বিশ্বে অন্যান্য দেশে অবস্থা যত খারাপই হোক, সেখানে বন্দিদের সংখ্যাটা বলা হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের শত শত মানুষ হারিয়ে গেছে; কোনো খোঁজ নেই।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরসহ অনেকে।

এ বিভাগের আরো খবর