ছিল ৬০০ লোকের খাবারের আয়োজন। ছিল প্যান্ডেল, সাজানো গেট। ৫০ জন সঙ্গী নিয়ে আসেন বর। জেলা প্রশাসকসহ শহরের গণ্যমান্য অনেকেই যোগ দেন এই বিয়ের আয়োজনে।
ফরিদপুরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে বড় হয়েছেন বাবা-মা হারা আঙ্গুরী। এই কেন্দ্রের আয়োজনেই শনিবার ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছে তার।
ফরিদপুর শহরের বায়তুল আমানের বাসিন্দা ছিলেন আঙ্গুরীর বাবা মোতালেব শেখ। আঙ্গুরীর জন্মের আগেই মারা যান তিনি। আর আঙ্গুরীর যখন চার বছর বয়স, তখন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তার মা ঝর্ণা বেগমও।
মায়ের মৃত্যুর পর চার বছর বয়সী আঙ্গুরীর জায়গা হয় নানির কাছে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে নানিও মারা যান। পরে স্থানীয় এক সমাজকর্মীর মাধ্যমে আঙ্গুরীর জায়গা হয় ফরিদপুর শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
শনিবার দুপুরে সেই আঙ্গুরীর বিয়ে হয় শহরের কমলাপুরের পুনর্বাসন কেন্দ্রে। তার বর শহরের বায়তুল আমান এলাকার ইউনুছ সরদারের ছেলে মুরাদ সরদার।
পুনর্বাসন কেন্দ্রটির উপপ্রকল্প পরিচালক সৈয়দা হাসিনা আক্তার বলেন, ‘আঙ্গুরী যখন এখানে আসে, তখন তার বয়স ছিল পাঁচ বছরের একটু বেশি। এখন তার বয়স ১৮ বছর। দীর্ঘ ১২টি বছর সে এখানে ছিল। ১৮ বছর হওয়ার পর সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা তার জন্য একটা উপযুক্ত পাত্র খুঁজতে থাকি। ওর দাদার বাড়ির এলাকারই একজন পাত্রও পেয়ে যাই। ছেলে ফার্নিচার বানানোর কাজ করে। মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারের একটি মেয়ের যেভাবে বিয়ে হয়, ঠিক সেভাবেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।’
হাসিনা আক্তার জানান, আঙ্গুরীর মনে যেন কোনো কষ্ট না থাকে সে জন্য তার বিয়েতে কোনো কিছুরই কমতি রাখা হয়নি। জামা-কাপড়সহ নতুন বর-কনেকে বিভিন্ন উপহারও দেয়া হয়েছে।
আঙ্গুরীকে একটি সেলাই মেশিন দেয়া ছাড়াও তার বরের কাজে সহায়ক হয় এমন কিছু করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
হাসিনা আরও জানান, ২ লাখ টাকা দেনমোহরে আঙ্গুরী ও মুরাদের বিয়ে হয়।
বরের সঙ্গে নববধূর সাজে আঙ্গুরী
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ছাড়াও বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক কামরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মোল্যা, পৌর মেয়র অমিতাভ বোস, ফরিদপুরে কর্মরত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের নেতা, এনজিও ব্যাক্তিত্ব, ব্যবসায়ীসহ ছয় শতাধিক অতিথি।
বিয়ের এমন আয়োজন দেখে বর-কনেও খুশি। সুখী জীবনের জন্য তারা সবার দোয়া চেয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ বলেন, ‘এমন একটি মহৎ কাজের সঙ্গে থাকতে পেরে আমি ধন্য। নতুন দম্পতির জন্য শুভ কামনা রইল।’
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘সমাজের অসহায় এতিমদের জন্য এটা নজির। এর ফলে সমাজের অন্য অসহায় এতিমেরা জীবন গড়ে তুলতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবে।’