বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমার মেয়েকে জীবিত ফেরত চাই: সুকন্যার মা

  •    
  • ২০ আগস্ট, ২০২২ ১৩:৫৪

‘কারো বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নাই। কারো ওপর ক্ষোভ নাই। এক মাস ২৭ দিন ধরে আমার মেয়ে নিখোঁজ। আমার একটাই চাওয়া, আমার মেয়েকে জীবিত ফেরত চাই।’

প্রায় দুই মাস ধরে নিখোঁজ সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের এইচএসসি পরিক্ষার্থী ইয়াশা মৃধা সুকন্যাকে ফিরে পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন মা নাজমা ইসলাম লাকী।

‘কারো বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নাই। কারো ওপর ক্ষোভ নাই। এক মাস ২৭ দিন ধরে আমার মেয়ে নিখোঁজ। আমার একটাই চাওয়া, আমার মেয়েকে জীবিত ফেরত চাই।’

শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন নিখোঁজ শিক্ষার্থী সুকন্যার মা।

নাজমা ইসলাম লাকী বলেন, ‘আমার স্বামী লন্ডনপ্রবাসী। আমাদের একমাত্র মেয়ে ইয়াশা মৃধা সুকন্যা চলতি বছর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমার মেয়েকে আমি সব সময় কলেজে নিয়ে যেতাম এবং সঙ্গে করে বাসায় নিয়ে আসতাম। গত ২৩ জুন আমার মেয়েকে মডেল টেস্ট দিতে কলেজে নিয়ে যাই। বেলা সাড়ে ১২টায় মেয়ে কলেজে প্রবেশ করে।

‘বরাবরের মতো আমি কলেজের বাইরে অভিভাবকদের বসারকক্ষে অপেক্ষা করি। মেয়ের পরীক্ষা শেষ হবার কথা বিকেল ৩টায়। সব ছাত্রীরা যখন পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে যায়। শুধু আমার মেয়ে বের হয়নি। মেয়ের বান্ধবীদের কাছে জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে না পারায় আমি বিকেল ৪টায় কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা আমাকে জানায়, আমার মেয়ে পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। পরে আমি অনেক খোঁজাখুঁজির পরও আমার মেয়েকে পাইনি। আমার মেয়ের মোবাইল আমার কাছে দিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল।’

তিনি বলেন, 'মেয়েকে না পেয়ে আমি আমার মেয়ের ফোন চেক করতে থাকি। সেখান থেকে ইশতিয়াক নামের একটা ছেলের সঙ্গে কথোপকথন দেখতে পাই। পরে রমনা মডেল থানায় গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানাই এবং একটি মামলা করি। পুলিশ আমার মেয়ের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সেই ছেলের নম্বর নিয়ে ছেলেকে ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কল দিলে ছেলের বড় ভাই ধরে। পুলিশ তাকে বিষয়টা জানায় এবং বলে আপনার ভাইকে বলেন মেয়েটাকে নিয়ে যাতে রমনা মডেল থানায় আসে। পরবর্তী সময়ে সেই নম্বর বন্ধ করে দেয়, আবার চালু করে আবার বন্ধ করে দেয়।'

তিনি আরও বলেন, এর কিছুক্ষণ পর রাত ৮টা ৩৯ মিনিটে আমার মোবাইলে থাকা আমার মেয়ের ফেসবুক আইডি থেকে মেসেজ আসে ‘মা আমি বাসায় আসতেছি, তুমি চিন্তা করো না।’

পরবর্তী সময়ে জানতে পারি আমার মেয়ে নয়, ইশতিয়াক সেই মেসেজ করেছে। আমরা বাসায় চলে আসার প্রস্তুতি নেয়ার সময় পুলিশ ১০টা ৪০ মিনিটে ফোনে বলেন আপনি মগবাজার বটতলায় আসেন আপনার মেয়েকে নিয়ে ছেলে আসতেছে। কিন্তু ছেলে আসেনি।

‘রাত সাড়ে ১১টায় আমার ফোনে কল আসে। আমি কল রিসিভ করার পর আমাকে বলে, আন্টি ইয়াশা কি বাসায় ফিরেছে, তখন আমি বলি, কী করে ফিরবে, আমার মেয়ে তো তোমার সঙ্গে আছে। এই কথা বলে আমি পুলিশকে ফোনটা দিয়ে দেই।

পুলিশ আসামিকে বলে মেয়েকে নিয়ে আসতে, তা না হলে ভালো হবে না। ছেলে বলে, আমি ২০ মিনিটের মধ্যে আসতেছি। কিন্তু পরে সেই নম্বরটি বন্ধ করে দেয়।’

নিখোঁজ ছাত্রীর মা বলেন, ‘২৪ জুন সকালবেলা পুলিশ ছেলেকে থানায় ডেকে আনে এবং ইশতিয়াক তার বন্ধু সালমানকে নিয়ে আসে। তাকে থানায় আসার পর অনেক করে জিজ্ঞেস করি, বাবা আমার মেয়েটা কোথায়, কী করেছ তুমি? আমার মেয়েকে কি তুমি মেরে ফেলেছ? বলে না আন্টি মারব কেন। আমি বলি, তাহলে কি আমার মেয়েকে কারো কাছে দিয়ে দিয়েছ। পরে ছেলে মাথা নিচু করে ছিল, কিছু বলেনি। এর মানে কী?

‘পরবর্তী সময়ে ছেলে স্বীকার করে আমার কাছে পাঠানো মেসেজটি আমার মেয়ে না, এই ছেলে করেছে। পরে পুলিশ আসামিকে জিজ্ঞাসা করলে আসামি বলে, সুকন্যা সারা দিন আমার সঙ্গে ছিল। আমি রাত ৮টায় রিকশায় তুলে দেই। পরে জিজ্ঞাসা করা হয়, সারা দিন কোথায় কোথায় গিয়েছ? ছেলে ওয়ারীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় যাওয়ার কথা জানায়। কিন্তু পুলিশ যখন সেই জায়গাগুলোতে ছেলেকে নিয়ে যায়, ছেলে বলে সে এই জায়গায় আসেনি। তার মানে সে মিথ্যে বলেছে।’

নাজমা ইসলাম লাকী বলেন, ‘২৪ জুন বিকেলে ইশতিয়াকের সেই বন্ধুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরবর্তী সময়ে জানতে পারি, আমার মেয়েকে নিয়ে ছেলে গেণ্ডারিয়ায় গেছে, সেখানে শশ্মান ঘাটে গেছে। গেণ্ডারিয়ার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে রিকশায় ছিল। রাত ৮টা ৩ মিনিটের ফুটেজে দেখতে পারি, আমার মেয়ে একা ছিল রিকশায়। কিন্তু ফুটেজে দেখা যায়, আমার মেয়ের হাতে একটা ফোন ছিল, সেটা কার ফোন? কারণ মেয়ের ফোন তো আমার কাছে। ফুটেজে দেখা যায়, ইয়াসা ফোনে কথা বলছে, আর রিকশা দিয়ে যাচ্ছে। রিকশা থামিয়ে পিছনের দিকে তাকাচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজের দুই রিকশা পর ইশতিয়াককে দেখা যায়। পুলিশকে বলা হয়েছে, সামনের সিসিটিভির ফুটেজগুলো বের করার জন্য, কিন্তু তারা করেনি।

পুলিশের ওপর মায়ের ক্ষোভ

নাজমা ইসলাম লাকী বলেন, কোনো কিছু আমরা জানতে পারিনি। পুলিশ আমাদের পাঁচ দিন থানায় শুধু বসিয়ে রেখেছে, আর বলেছে, তদন্ত করছি আপনারা বসে থাকেন। এই ভাবে পুলিশের কাছে কয়েক দিন চলে যায়। কিন্তু আমরা কিছু জানতে পারিনি। ইশতিয়াক আমাকে একটা কথাই বলেছে, আন্টি আপনার মেয়ে চলে আসবে, কিন্তু আজও আমার মেয়ে আসেনি। ইশতিয়াক এখন কারাগারে আছে।

তিনি বলেন, 'পুলিশের কাছে তেমন সাহায্য না পেয়ে আমরা গত ১৯ জুলাই মামলাটি ডিবিতে নিয়ে যাই। মামলার তদন্ত দায়িত্ব পায় ডিবির রমনা বিভাগ। মামলাটি ডিবিতে যাওয়ার পর আমাদের ডিবি অফিসে ডেকে সব তথ্য নেয়। কিন্তু এক মাস ১৬ দিনেও মেয়ের কোনো সন্ধান পাচ্ছি না। আমরা কারো কাছে কোনো সাহায্য পাচ্ছি না। ডিবি ও পুলিশ একই কথা বলছে। তারা কাজ করছে...। আমি শুধু আমার মেয়েটাকে ফিরে পেতে চাই। ডিবি বারবার বুঝাতে চাচ্ছে আমার মেয়ের মাথায় সমস্যা...। সেটা কেন বলছে, তা আমরা জানি না। আমরা কারো সাহায্য পাচ্ছি না। ১ মাস ২৭ দিন ধরে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি, শুধু মেয়েটাকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেতে চাই।'

এ বিভাগের আরো খবর