গায়ে আঘাতের চিহ্ন। কাদামাখা শরীরে রাতে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন মহাসড়কের পাশে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে পাঠান হাসপাতালে। পরদিন জানা যায়, শামীম রেজা নামের এই ব্যক্তি একজন বিকাশকর্মী। দুর্বৃত্তরা তাকে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে মারধরের পর অচেতন করে নিয়ে যান ১২ লাখ টাকা।
কিন্তু আসল তথ্য বেরিয়ে আসে এ ঘটনায় মামলার পর। ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বিকাশকর্মী স্বীকার করেন, কোনো ডাকাতির ঘটনা নয়, জুয়ায় হেরে তিনি নিজেই এই ডাকাতির নাটক সাজিয়েছেন। অচেতনতার ব্যাপারটিও ছিল তার অভিনয়।
শুক্রবার বিকেলে আদালতে জবানবন্দি দিলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
গত ১১ আগস্ট ঘটনাটি ঘটে ময়মনসিংহের নান্দাইলের মাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।
ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শামীম রেজা উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের ধূরুয়া গ্রামের বাসিন্দা। একই উপজেলায় বিকাশের বিতরণ কর্মকর্তা (ডিএসও) হিসেবে কাজ করেন তিনি।
আদালত পরিদর্শক প্রসূন কান্তি দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনলাইন জুয়ায় হেরে ঋণ করে আনা টাকা পরিশোধ করতে ১২ লাখ টাকা ডাকাতির নাটক সাজিয়েছিলেন শামীম। তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর বিচারকের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়।’
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা বলেন, ‘গত ১১ আগস্ট রাত ৮টার দিকে নান্দাইলের মাজার বাসস্ট্যান্ডে মহাসড়কের পাশ থেকে শরীরে আঘাতের চিহ্ন ও অচেতন অবস্থায় কাদামাখা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাঠানো হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে নেয়া হয় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।’
এ ঘটনায় সুস্থ হয়ে গত বুধবার নান্দাইল মডেল থানায় চারজনকে আসামি করে মামলা করেন বিকাশকর্মী নিজেই।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন ২০ লাখ টাকা নিয়ে সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নান্দাইল উপজেলার বিভিন্ন বাজারে গিয়ে বিকাশ এজেন্টদের নম্বরে টাকা লোড করে দেন শামীম রেজা। পরে ১২ লাখ টাকা নিয়ে বিকেলে উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের কালীর বাজার থেকে একটি ইজিবাইকে করে নান্দাইলের বাকচান্দা বাজারে যাচ্ছিলেন।
পথে ইজিবাইকে থাকা কয়েকজন যাত্রী তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। মাইক্রোতে তাকে মারধরের পর ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করা হয়। পরে টাকা নিয়ে তাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যান দুর্বৃত্তরা।
ওসি বলেন, ‘পরদিন বৃহস্পতিবার মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবি কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। তদন্তে বাদী শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, অনলাইন জুয়ায় হেরে ঋণ করে আনা টাকা পরিশোধ করতেই ১২ লাখ টাকা ডাকাতির নাটক সাজান তিনি।
‘ডাকাতির ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য করতে তিনি নিজের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্লেড দিয়ে ক্ষত ছাড়াও ইনজেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে চিহ্ন করেন। অচেতনতার ব্যাপারটিও ছিল তার অভিনয়।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে শামীম রেজাকে মামলা দিয়ে ময়মনসিংহ মুখ্য ৩ নম্বর বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হয়। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’