নিজেকে কখনও বিবিএ, এমবিএ ডিগ্রিধারী, আবার কখনও ম্যাজিস্ট্রেটের ছেলে দাবি করা মো. সায়ের আলম পাভেল আসলে পেশায় একজন রংমিস্ত্রী। রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় পরিচয় সূত্রে এক তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন পাভেল।
প্রেমে ব্যর্থ হয়ে এবং তরুণীর বাবা-মায়ের কাছে অপমানিত হয়ে মনে মনে প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন। একপর্যায়ে নিজের কথিত ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই তরুণীর ১৪ ববছর বয়সী বোনকে অপহরণ করেন।
অপহরণের পর মুক্তিপণ চাইলে ভিকটিম কিশোরীর বাবা বৃহস্পতিবার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন। এদিন রাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকা থেকে কিশোরীকে উদ্ধারসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. সায়ের আলম পাভেল, মো. সেক আলমগীর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম।
পুলিশ জানায়, ওই কিশোরীকে অপহরণ করে টাঙ্গাইলে জাহাঙ্গীরের বাসায় রাখা হয়। তিনি আরও দুই মামলার আসামি।
শুক্রবার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
তিনি বলেন, গত ১৪ আগস্ট নবম শ্রেণি পড়ুয়া ওই কিশোরীকে প্রলোভন দেখিয়ে বাসা থেকে অপহরণ করা হয়। এরপর জাহাঙ্গীর ভিকটিমের বাবার কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন, অন্যথায় মেয়েটিকে পতিতালয়ে বিক্রি করার হুমকি দেন। বিষয়টি পুলিশকে জানালে মেয়েকে চিরতরে গুম করে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়।
একপর্যায়ে ১৮ আগস্ট মেয়েটির বাবা পুলিশকে জানালে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করা হয়। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান শনাক্ত করে মির্জাপুর থেকে ভিকটিমকে উদ্ধারসহ দুই জনকে ও পরে এক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরীকে অপহরণ করা হয় জানিয়ে ডিএমপির উপ-কমিশনার বলেন, ‘আলমগীর তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডে রং মিস্ত্রির কাজ করেন। রং মিস্ত্রির কাজের সুবাদে আলমগীরের সঙ্গে পাভেলের পরিচয় হয়। আলমগীরের মাধ্যমে পরিচয় সূত্রে ওই এলাকার এক তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন পাভেল। তরুণীর বাবা-মায়ের কাছেও বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। কিন্তু প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না পাওয়া এবং তরুণীর বাবা-মায়ের কাছে অপমানিত হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। ওই তরুণীর বিয়ে হয়ে গেলে পাভেল তার ছোট বোনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
‘একপর্যায়ে নিজের কথিত লন্ডন প্রবাসী ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্কুলপড়ুয়া ওই কিশোরীকে বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যান পাভেল। এরপর তাকে ঢাকা থেকে নিয়ে টাঙ্গাইলে জাহাঙ্গীরের বাসায় রাখেন। এরপর জাহাঙ্গীর ভিকটিমের বাবাকে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করেন।’
উদ্ধার কিশোরীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ‘আমরা মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ওই ভাইকে দেখেছে কি-না। সে বলেছে কখনও দেখেনি, শুধু ছবি দেখেছে। পাভেলের এই ভাইয়ের কথা বলা প্রতারণারই অংশ হতে পারে।’
গ্রেপ্তার পাভেলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিসি আরও বলেন, ‘বাবা-মায়ের প্রতি আক্রোশ থেকেই ভিকটিমকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দিতে অপহরণ করেন তিনি। আমরা ধারণা করছি, তারা নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য, যারা নানা কৌশলে মেয়েদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। তবে পরবর্তী তদন্তে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরেই ভিকটিম ও তার বোনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল পাভেলের। ভিকটিমের বাড়ির সামনে গিয়েও দেখা করে কথা বলতেন তিনি।’