জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে ১৬ আগস্ট থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একাই আমরণ অনশনে বসেন আল-আমিন। দিনের বেলায় তাকে সঙ্গ দেন স্ত্রী রাত্রি। রাতে তিনি একাই থাকেন।
অনশনের চতুর্থ দিনে শুক্রবার দুপুরে প্রেস ক্লাবে গিয়ে দেখা যায়, সামনের ফুটপাতে একটি প্লাস্টিকের মাদুর বিছিয়ে বালিশে তিনি শুয়ে আছেন। পাশে তার স্ত্রী রাত্রি বসা। পাশে একটি ব্যানারে লেখা: ‘তেলের মূল্য ৮০ টাকার নিচে না আনা পর্যন্ত আমরণ অনশন: আল-আমিন আটিয়া, কারা নির্যাতিত ছাত্রনেতা।’
আল-আমিন মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করছেন। তার বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দেশগাঁও গ্রামে।
অনশন অবস্থায় আল-আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৫ আগস্ট অনশনে বসার কথা ছিল। কিন্তু ১৫ আগস্ট যেহেতু শোক দিবস, তাই আমিও পরের দিন জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে তেলের দাম ৮০ টাকা লিটার না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেছি। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে ও মহাত্মা গান্ধির জীবনী পড়ে আমি এই অনশনে উদ্বুদ্ধ হয়েছি।’
আল-আমিন জানান, তিনি বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সংসদে আছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনী প্রতিটা ক্ষেত্রে তাকে উদ্বুদ্ধ করে। আন্দোলন করতে গিয়ে এর আগে আল-আমিন একবার জেলেও গিয়েছেন বলে জানান।
আল-আমিন বলেন, ‘সরকার অযৌক্তিকভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে বারবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েই চলেছে। আপনারা দেখেছেন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বারবার নিম্নমুখী হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার কোনো এক অলৌকিক কারণে বারবার এই মূল্য বাড়িয়েই চলেছে।’
আমরণ অনশনে তার মৃত্যু ঘটলে সরকারকে দায় নিতে হবে বলে জানান আল-আমিন।
আল-আমিন বলেন, ‘আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলন থেকে আমি জেলে যাই। কারাগারের লাইব্রেরিতে যেতাম। ভাসানী অনুসারী ডা. জাফরুল্লাহ স্যার আমার জন্য কোর্টে গিয়েছিলেন বারবার।’
একা অনশনে কোনো ফল হবে কি না জানতে চাইলে আল-আমিন বলেন, ‘মানুষ তো পারছে। আমি আগে এমন বড় ধরনের একক আন্দোলন করিনি। আসলে এটা একটা জাতীয় সমস্যা। আসলে বাংলাদেশের মানুষ তো আর চুপ করে বসে থাকছে না। কোনো রাজনৈতিক ব্যানার থেকে না, কেউ আমাকে ইন্ধন দিচ্ছে না, আমি বাংলাদেশের জনগণ হিসেবে অনশনে বসেছি।’
আল-আমিনের পাশে অনশনে বসে থাকা তার স্ত্রী রাত্রি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্বামীর শরীরের অবস্থা ভালো না। আমার খারাপ লাগতেছে, সাফার করতেছি আমি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি। ঢাকায় ও ছাড়া আমার কেউ নাই। প্রতিদিন এখানে আসা-যাওয়া, রাতে আমার একা থাকতে হয়। এক রাতে ছিলাম ওর সঙ্গে। পরে রাতে থাকা নিরাপদ না তাই দিনে থাকি, রাতে বাসায় থাকি। ওকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেয়ার জন্যই আমি এখানে এসে সময় দিই।’