বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মোমেনের বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাই, এটা জরুরি: ফখরুল

  •    
  • ১৯ আগস্ট, ২০২২ ২১:০০

‘আজকে প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র থাকবে কি থাকবে না, বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক দেশ থাকবে কি থাকবে না, বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থে কি মানুষের অধিকারগুলো ফিরিয়ে এখানে একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরি করবে কি করবে না।’

শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখতে ভারতবর্ষের কাছ থেকে সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, এই ব্যাখ্যা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য অতীব জরুরি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়ের মধ্যে শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি নেতা। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।

আগের দিন চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি।’

তার এই বক্তব্যে ভীষণ অস্বস্তিতে পড়েছে ক্ষমতাসীন দল। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘যিনি এ কথা বলেছেন সেটি তার ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। এটি আমাদের সরকারেরও বক্তব্য না, দলেরও বক্তব্য না। এই বক্তব্যের কারণে ভারতও লজ্জা পাবে। কীভাবে আমরা এই কথা বলি! বন্ধু বন্ধু আছে। অহেতুক কথা বলে এটি নষ্ট করবেন না।’

ফখরুল বলেন, ‘আমরা এই কথাটার (পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য) ব্যাখ্যা চাই। আমরা জানতে চাই এই সরকারের কাছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এবং ভারত সরকারের কাছেও যে, আজকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে কথা বলেছেন সেই কথার অর্থ কী? তাতে কি এটা দাঁড়ায়, এই সরকার টিকে আছে ভারতের আনুকূল্যে? এ কথার অর্থ মানুষ তো জানতেই চাইবে। এটা জরুরি কথা।

‘আজকে প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র থাকবে কি থাকবে না, বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক দেশ থাকবে কি থাকবে না, বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থে কি মানুষের অধিকারগুলো ফিরিয়ে এখানে একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরি করবে কি করবে না।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘গত পরশু ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। সেখানে মন্ত্রীরা হুমকি দিয়েছেন, হুংকার দিয়েছেন, সন্ত্রাসী ভাষায় কথাবার্তা বলেছেন। এতই যদি আপনারা হুমকি দেন, ধমকি দেন তাহলে আবার আপনাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আপনাদের সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য, প্রধানমন্ত্রীকে টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের সাহায্য দাবি করেন কেন?’

দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে ফোকলা করে দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার দুর্নীতিবাজদের সরকার, এই সরকার চোরের সরকার, এই সরকার ডাকাতের সরকার। এরা অবৈধ। রাতের অন্ধকারে নির্বাচন করেছে, জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে।'

‘ক্ষমতা ছাড়ুন’

এত চ্যালেঞ্জ না করে সরকারকে দ্রুত ক্ষমতা ছাড়ুার আহ্বান জানান ফখরুল। বলেন, ‘ক্ষমতা ছেড়ে রাস্তায় নামুন। দেখা যাবে এ দেশে জনগণের শক্তি বেশি না আপনাদের মতো দুর্নীতিবাজদের শক্তি বেশি। অবশ্যই আপনাদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে। ক্ষমতায় থেকে অনেক লম্বা লম্বা কথা বলা যায়। ক্ষমতা ছেড়ে আসুন তখন বোঝা যাবে আপনার শক্তি কত? এ দেশে কয়টা লোক আপনার পক্ষে আছে তখনই বোঝা যাবে।

‘এরা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, এরা বাংলাদেশের গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। এরা এখন বাংলাদেশের মানুষের শত্রু-বন্ধুগণ।'

এই সরকারকে বিএনপি আর সময় দিতে নারাজ বলেও উল্লেখ করেন ফখরুল। বলেন, ‘এখন জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে একই সঙ্গে রাস্তায় রাজপথ দখল করে নিয়ে এদের পরাজিত করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।

‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবকে দেশে ফিরিয়ে আনব, ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে সেই মামলা প্রত্যাহার করব এবং এই সরকারকে বাধ্য করব পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে।

‘সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার ও জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। আজকে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জনগণের কাছে আহ্বান, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনি।'

গার্ডার দুর্ঘটনার দায় কাদেরের

উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের বক্স গার্ডার পড়ে পাঁচজনের প্রাণহানির ঘটনায় সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে দায়ী করতে চান ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘সড়ক ও সেতুমন্ত্রী যিনি আবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি অনেক কথা বলেছেন। সারাক্ষণ গালিগালাজ করেন। আমি যে কথাটা বলতে চাই, এতই যদি দক্ষ আপনারা দেশটা ভালো চালাচ্ছেন, তাহলে উত্তরা থেকে আব্দুল্লাহপুরের যে রাস্তা, সেই রাস্তায় কেমন করে গার্ডার পড়ে গিয়ে এক পরিবারের পাঁচজন মানুষ মারা যায়?

‘প্রতিদিন প্রতিটি রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। কারণ কোথাও কোনো ডিসিপ্লিন নাই, কোথাও কোনো শাসন নাই, সুশাসন নাই। সবখানে যে যেখানে পারছে লুট করছে, দুর্নীতি করছে, টাকা লুটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। যার জন্য কেউ কোনো কথা মানে না।’

ফখরুল বলেন, ‘উত্তরার ঘটনায় গ্রেপ্তার করলেন কাকে? ওই ড্রাইভারকে। গ্রেপ্তার করলেন কাকে? গার্ডকে। কেন? এই কথার জবাব তো দিতে হবে সেতুমন্ত্রীকে প্রথম, জবাব দিতে হবে ডাইরেক্টর জেনারেলকে, জবাব দিতে হবে প্রজেক্ট ডাইরেক্টরকে। তাদের বিরুদ্ধে তো এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।’

আয়নাঘর সত্যি কি না জানতে চাই

একটি অনলাইন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে গুম হওয়া মানুষদের খোঁজ চাই, আমরা এর নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। নিশ্চয় ওই নেত্র নিউজ আপনারা সকলে দেখেছেন, আয়নাঘর দেখেছেন। আমরা জানতে চাই এই আয়নাঘর কতটুকু সত্যি, কিংবা আছে তা বলতে হবে। জনগণ জানতে চায়।'

বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘কত বছর হয়ে গেছে এই ইলিয়াস আলীকে আপনারা গুম করেছেন তার খবর পাওয়া যায়নি। লাকসামের পারভেজকে আপনারা গুম করেছেন, অনেক ছাত্রনেতাকে আপনারা গুম করেছেন। তাদের মায়েরা চেয়ে থাকে কখন তার ছেলে ফিরবে? এই সরকার তাদের মায়েদের বুক খালি করেছে।’

বাংলাদেশে গুমের অভিযোগে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেটের দেয়া বিবৃতি নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। বলেন, ‘তিনি এখানে এসে যাওয়ার আগে একটা বিবৃতিতে পরিষ্কার করে বলেছেন, এখানে র‌্যাবের হাতে যে গুম হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তার সমস্ত প্র্রমাণ এখানে পাওয়া যাচ্ছে। এটার বিচার করা দরকার। এদের অবশ্যই স্বাধীন তদন্তের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

‘এই কথার পর থেকে তাদের শরীরে যে বিছুটি ছিটাই না, ওই বিছুটি ছুটে গেছে। তথ্যমন্ত্রী ওই হাইকমিশনারকে ছবক দিচ্ছে যে, আপনি প্যালেস্টাইন দেখেন, বার্মা দেখেন। আরে আগে আপনি বাংলাদেশ দেখেন। এই বাংলাদেশের কত হাজার মানুষ আপনি হত্যা করেছেন, কত মানুষকে আপনি গুম করেছেন।'

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরেজ জামান ও সাইফুল ইসলাম ফিরোজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম সারোয়ার, ইয়াসীন আলী, এস এম জিলানী, ফখরুল ইসলাম রবিনও বক্তব্য রাখেন।

এ বিভাগের আরো খবর