বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিক্ষক দম্পতির রহস্যমৃত্যু: কিডনি ও ফুসফুসে জমাট রক্ত

  •    
  • ১৯ আগস্ট, ২০২২ ১৮:২৭

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাসিবুল আলম বলেন, ‘পুরো বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা স্কুল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মরদেহ উদ্ধারের স্থান পর্যন্ত সড়ক ও আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি। এ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হচ্ছে।’

গাজীপুরে প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে উদ্ধার হওয়া শিক্ষক দম্পতির ফুসফুস ও কিডনিতে জমাট বাঁধা রক্ত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক। খাদ্যে বিষক্রিয়া কিংবা অন্য কোনো কারণে এমন হতে পারে বলে ধারণা ওই চিকিৎসকের। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হতে নিহতদের পেট, খাদ্যনালি, কিডনি ও ফুসফুসের নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকার সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মো. সাফি মোহাইমেন।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার শিক্ষক দম্পতির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। নিহতদের শরীরে বাহ্যিক কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে দুজনেরই ফুসফুস ও কিডনিতে প্রায় একই রকম লক্ষণ পাওয়া গেছে। তাদের ফুসফুস ও কিডনিতে জমাট বাঁধা রক্তের উপস্থিতি দেখা গেছে।

সাধারণত খাদ্যে বিষক্রিয়া কিংবা অন্য কোনো কারণে এমনটি হতে পারে। এ জন্য নিহতদের পেট, খাদ্যনালি, কিডনি ও ফুসফুসের নমুনা পরীক্ষার জন্য সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেতে কতদিন সময় লাগবে- এমন প্রশ্নে ডা. সাফি মোহাইমেন বলেন, ‘সিআইডি কতদিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয় সেটা তারাই বলতে পারবে। আপাতত নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাচ্ছে না।’

গত বৃহস্পতিবার ভোরে গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ খাইলকুরের বগারটেক এলাকায় নিজেদের প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে উদ্ধার হয় শিক্ষক দম্পতির মরদেহ। তারা হলেন টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান মামুন ও তার স্ত্রী আমজাদ আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মাহমুদা আক্তার জলি। তারা গাছা থানার কামারজুরি এলাকায় বসবাস করতেন।

এদিকে শিক্ষক দম্পতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বিষয়টিকে রহস্যজনক মৃত্যু বললেও পরিবার বলছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাসিবুল আলম বলেন, ‘শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু রহস্যে ঘেরা। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিষক্রিয়ার তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত নই। পুরো বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা স্কুল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মরদেহ উদ্ধারের স্থান পর্যন্ত সড়ক ও আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি। এ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হচ্ছে।’

তিনি জানান, নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেও সম্ভাব্য কারণ জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই মৃত্যুর রহস্যের জট দ্রুত উন্মোচন হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, বুধবার সন্ধ্যা ৬টার সময় শিক্ষক দম্পতির মোবাইলের লোকেশন ছিল পূর্ব আরিচপুর এলাকায়, যা তাদের কর্মস্থল স্কুলের ঠিকানা। ওই দিনই রাত ৮টা ২০ মিনিটে তাদের ফোনের লোকেশন পাওয়া যায় মরদেহ উদ্ধারের স্থান বগারটেক এলাকায়। এই সময়ের মধ্যে তারা কোথাও গেছেন কি না, গাড়িতে কেউ উঠেছে কি না সেসব বিষয় অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

তবে মরদেহ উদ্ধার হওয়া স্থানের পাশে দুটি সিসি ক্যামেরা থাকলেও সেগুলো অকেজো থাকায় ফুটেজ পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও জানান, গাড়িটি সড়কের পাশে এমনভাবে পার্কিং করা ছিল, যা দেখে মনে হচ্ছিল কোনো স্বাভাবিক মানুষ গাড়িটি পার্কিং করেছে। যে কারণে কারও কিছু সন্দেহ হয়নি। আর মরদেহ উদ্ধারের সময় দেখা গেছে গাড়ির ভেতরে ফুল স্পিডে চালু ছিল এসি। গাড়ির গ্লাস ভেজা থাকায় বাইরে থেকে ভেতরে কাউকে দেখাও যাচ্ছিল না। আর এসি চালু থাকার কারণে মরদেহ দুটি ঠান্ডায় শক্ত হয়ে গেছে। আর সন্ধ্যার পর জায়গাটি কিছুটা নির্জন হয়ে যায়।

শিক্ষক দম্পত্তির ছেলে মো. মেরাজ সাংবাদিকদের জানান, বুধবার সকালে বাসা থেকে প্রাইভেট কারে চড়ে তার বাবা-মা স্কুলের উদ্দেশে বের হন। স্কুল শেষে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু এর পর থেকে তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।

মেরাজ বলেন, ‘রাতভর খোঁজাখুঁজির পর ভোররাতের দিকে দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকায় বাবা-মায়ের প্রাইভেট কার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। পরে গাড়ির ভেতর চালকের আসনে বাবার ও পাশের আসনে মায়ের নিথর দেহ দেখতে পাই। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে বোর্ডবাজার এলাকার তায়রুন্নেছা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উত্তরার অন্য একটি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।’

মেরাজ আরও বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে পৌনে ৭টার দিকে বাবার মোবাইলে ফোন দিই। কিন্তু বাবা ফোন রিসিভ না করায় মায়ের ফোনে কল করি। পরে মা ফোন ধরে বাসায় আসছেন বলে জানান। কিন্তু সে সময় মায়ের কথায় ক্লান্তির স্বর ভেসে আসছিল। এর পর থেকে একাধিকবার ফোন করেও তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারিনি।’

এদিকে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. নুরুজ্জামান রানা বলেন, ‘ব্যক্তিগত গাড়িতে তারা দুজন স্কুলে যাওয়া-আসা করতেন। বুধবারও স্কুল শেষে বাড়ির উদ্দেশে তারা গাড়ি নিয়ে রওনা হন। এ সময় সহকারী শিক্ষক ও সম্পর্কে মামাতো ভাই মো. কামরুজ্জামানও ওই গাড়িতে ওঠেন। পথে সাহারা সুপার মার্কেটের সামনে আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়ালসেতুর নিচে কামরুজ্জামানকে নামিয়ে দেন বলে জানতে পেরেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান মামুন ও সহকারী শিক্ষক কামরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। কামরুজ্জামান টঙ্গীর শিলমুনে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং একই স্কুলের গণিত বিষয়ের শিক্ষক। কামরুজ্জামান হেড স্যারকে মামাতো ভাই বলে সম্বোধন করতেন। তবে স্বামী-স্ত্রী কিংবা স্কুলের সব শিক্ষকের সঙ্গেই মামুন স্যারের ভালো সম্পর্ক ছিল। কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ ও খারাপ সম্পর্কের কথা শুনিনি।’

মারা যাওয়া প্রধান শিক্ষকের বড় ভাই বিষয়টিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘তাদের সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার, টাকা, মোবাইলসহ কিছুই খোয়া যায়নি। ঘটনাটি যদি পরিকল্পিত না হতো তা হলে টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল ও গাড়ি নিয়ে যেত।’

নিহত প্রধান শিক্ষকের ভগ্নিপতি আব্দুর রশিদ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে শহীদ স্মৃতি স্কুল মাঠে নিহতদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নিয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল দ্রুত এই মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধানের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন। পরে জানাজা শেষে ময়মনিসংহের ত্রিশালে গ্রামের বাড়িতে শিক্ষক দম্পতিকে দাফন করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর