বিএনপি যেভাবে আন্দোলন করছে, তাতে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হবে কি না এ নিয়ে এবার সংশয় প্রকাশ করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, অল্পসংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে কিছুই হবে না।
আমীর খসরু তৃতীয় নেতা, যিনি বিএনপির আন্দোলনের ব্যাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। এর আগে স্থায়ী কমিটির দুই নেতা মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও একই সংশয় প্রকাশ করেছেন।
শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রামের নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির প্রস্তুতি সভায় বক্তব্য রাখছিলেন জোট সরকার আমলের বাণিজ্যমন্ত্রী। আগামী ২২ আগস্ট থেকে বিএনপির ধারাবাহিক আন্দোলনের বিষয়ে এই আলোচনা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা দুই হাজার লোক যদি প্রাণও দিই, তাহলেও শেখ হাসিনাকে পতন সম্ভব না। এই জন্য লাখ লাখ লোক নিয়ে আন্দোলনে নামতে হবে। মানুষ যখন রাস্তায় নেমে যাবে, তখন শেখ হাসিনার আশপাশের লোকজনও এদিকে ধাবিত হবে।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘বক্তব্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে সরানো যাবে না। পরিকল্পিত আন্দোলনে সরকারের পতন হবে... আমাদের কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য সুশৃঙ্খল এবং জনসম্পৃক্ততা। এই সরকারকে পতন ঘটাতে হলে জনসম্পৃক্ততাকে কাজে লাগাতে হবে।’
গত ৮ আগস্ট নয়াপল্টনে এক বিক্ষোভের সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের মনে হয় সীমানা নির্ধারণ হয়ে গেছে। সীমানা হয় প্রেস ক্লাব, না হয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে। আমরা যদি এই সীমানার বাইরে না যেতে পারি, তাহলে এই সরকারের পতন হবে না।’
একই সভায় গয়েশ্বর বলেন, ‘শুধু বক্তব্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামানো যাবে না। আমরা সবাই বক্তৃতা করেও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামানো যাবে না। শেখ হাসিনাকে নামাতে রাজপথে আমাদের যেমন কুকুর, তেমন মুগুর কর্মসূচি দিতে হবে।’
সেদিন দলের দুই শীর্ষ নেতার বক্তব্যের কোনো জবাব দেননি ফখরুল। তবে তিনি সরকার পতনের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী, যদিও এর আগে বিএনপির দুই দফা আন্দোলন সফল হয়নি।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ও বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবিতে চলতি মাস থেকেই অবশ্য বিএনপি কর্মসূচি বাড়িয়েছে। এর মধ্যে আগামী ২২ আগস্ট থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের ঘোষণা এসেছে।
আমীর খসরু বলেন, ‘আন্দোলনের জোয়ার শুরু হয়েছে। নেতাকর্মীদের সাহস দেখতে পাচ্ছি। সমর্থকরাও রাস্তায় নেমে আসছে। বাংলাদেশে এবং বিদেশে একটি কথা উঠে আসছে, শেখ হাসিনা আর কতদিন থাকবে।
‘আন্দোলনে আমাদের সুবিধা হলো, দেশের জনগণ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলে গেছে। তারা টাকা দিয়ে, মাস্তান দিয়ে যে কাজটি করতে পারবে না। সেটি আমরা সাধারণ জনগণকে দিয়ে করতে পারব।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে হতাশা দেখতে পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, ‘তাদের নেত্রী, সাধারণ সম্পাদকের কথায় বুঝতে পারছেন, তাদের মধ্যে একটা বড় ধরনের হতাশা কাজ করছে। তারা ইতোমধ্যে তর্জন-গর্জন শুরু করেছে। যত গর্জে, তত বর্ষে না কিন্তু। যখন গর্জন বাড়তে থাকবে, দুর্বলতা তত বেশি বাড়ছে। সময়ের অপেক্ষা, হাসিনার লোকজনও আন্দোলনে চলে আসবে।
‘আমাদের তর্জন-গর্জনের দরকার হবে না। আমাদের গর্জন হবে কাজের মধ্য দিয়ে। বেশি কথা বলে আন্দোলন এগিয়ে যাবে না। আমাদের আন্দোলন পরিকল্পিত।’
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘এক ঘণ্টার ডাকে পুরো নগর অচল করার মতো নেতা আছে। কোনো জেলায় যদি আন্দোলনের নেতা প্রয়োজন হয়, তাহলে চট্টগ্রাম নগর থেকে নিয়ে যান। এদের নখদর্পণে পুরো নগর।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না, আঙুল বাঁকা করতে হবে। এখন নেতাকেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে নেতাকর্মীদের নিয়ে। বিএনপি কোনো বাহিনীর দল নয়, বিএনপি জনগণের দল। নেতারা এবার ইমানি দায়িত্ব পালন করে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘ফেসবুকে ছবি তোলার জন্য এই আন্দোলন নয়, কঠিন আন্দোলন করতে হবে। চট্টগ্রামের নেতারা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে, তাহলে চট্টগ্রাম থেকেই সরকারের পতন হবে। আমাদের কথা হবে কম, কাজ হবে বেশি।’
সভা সঞ্চালনা করেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। আরও বক্তব্য রাখেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, মামুন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, উপজাতিবিষয়ক সম্পাদক ম্যা মা চিং, মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল।