শেখ হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতকে অনুরোধ করার যে কথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, তা শুনে আকাশ থেকে পড়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, এই ধরনের বক্তব্যে লজ্জা পাবে খোদ ভারত।
‘এই ধরনের অনুরোধ আওয়ামী লীগ করে না, করেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকেও কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি’-এমনটাও বলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা।
চট্টগ্রামে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য তুমুল আলোচনা তৈরি করার মধ্যে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পলাশীর মোড়ে জন্মাষ্টমী মিছিল উদ্বোধন করে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারত আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কে আবদ্ধ। ভারত আমাদের দুঃসময়ের বন্ধু। কিন্তু তাই বলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে অনুরোধ করব! এই ধরনের অনুরোধ আওয়ামী লীগ করে না, করেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকেও কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি।’
আগের দিন চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি।’
তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তৈরি করেছে। এরই মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে আক্রমণ এসেছে যে, সরকার টিকে থাকার জন্য বিদেশের দ্বারস্থ হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের সমস্ত ক্ষমতার উৎস বাংলাদেশের জনগণ। বাইরের কেউ আমাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবে না। আল্লাহর ইচ্ছা এবং জনগণের সমর্থনে আওয়ামী লীগ টিকে আছে। ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে ইনশাআল্লাহ।’
এই বক্তব্যে ভারতও লজ্জা পাবে
মোমেন যে কথা বলেছেন, তা শুনলে ভারতও লজ্জা পাবে বলে মনে করেন কাদের। বলেন, ‘যিনি এ কথা বলেছেন সেটি তার ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। এটি আমাদের সরকারেরও বক্তব্য না, দলেরও বক্তব্য না। এই বক্তব্যের কারণে ভারতও লজ্জা পাবে।’
‘কীভাবে আমরা এই কথা বলি! বন্ধু বন্ধু আছে। অহেতুক কথা বলে এটি নষ্ট করবেন না’- আরও বলেন বিস্মিত আওয়ামী লীগ নেতা।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময় বাংলাদেশ, ভারত এবং দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী এবং নরেন্দ্র মোদি সেটি করেছেন। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে থাকা সমস্যা নিয়ে আলোচনা চলছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা আগামী সেপ্টেম্বরে ভারতে যাওয়ার কথা। তখন হয়তো আরও কিছু বিষয়ে মতৈক্য হবে। লেনদেন পার্টনারশিপ আরও জোরদার করার জন্য আলাপ-আলোচনা হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধু। ভারতের সঙ্গে আমরা কোনো বিরোধ চাই না। পঁচাত্তরের পর ভারতের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক করে আমাদের নিজেদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর সেই অবিশ্বাসের সম্পর্কে সংশয়ের দেয়াল ভেঙে দিয়েছেন।’