বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গার্ডার দুর্ঘটনা: চট্টগ্রামের ঘটনায় বিচারহীনতায় ঢাকায় ৫ মৃত্যু

  •    
  • ১৯ আগস্ট, ২০২২ ০৮:১৮

সনাক চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘বহদ্দারহাটের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে অন্যান্য বড় প্রকল্পের ঠিকাদাররা সচেতন হতেন। কর্তৃপক্ষ পাবলিকের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখত। ওই ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলেই ঢাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অসতর্ক ছিল। ফলে গার্ডার পড়ে আবারও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।’

বন্দর নগর চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ১৩ জন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও তিনজন। আহত হন অন্তত ৫০ জন। তাদের মধ্যে অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন।

প্রায় ১০ বছরের ব্যবধানে এবার ঢাকায় বক্স গার্ডার চাপায় মারা গেলেন পাঁচজন।

বাস্তবতা হলো, ওই ঘটনার ১০ বছরেও মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি। মামলার এই দীর্ঘসূত্রতা ঢাকায় বক্স গার্ডার পড়ে প্রাণহানির জন্য দায়ী বলে মনে করছে সচেতন নাগরিক কমিটি।

চট্টগ্রামে গার্ডার ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে কেউ মামলা করেনি। ঘটনার দুদিন পর চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ মামলা করেন। তাতে প্রকল্প পরিচালকসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। সাক্ষী করা হয় ২৭ জনকে।

২০১২ সালে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসের ঘটনার প্রায় দশ বছরের ব্যবধানে এবার ঢাকায় বক্স গার্ডার চাপায় মারা গেলেন ৫ জন। ছবি: নিউজবাংলা

এর প্রায় এক বছর পর ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর তদন্ত শেষে আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। ২০১৪ সালের ১৮ জুন তৎকালীন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এস এম মজিবুর রহমান প্রতিবেদন গ্রহণ করে আট আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালে মামলাটি চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়।

ওই আটজন হলেন- ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতারের তৎকালীন প্রকল্প ব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনজুরুল ইসলাম, প্রকল্প প্রকৌশলী আব্দুল জলিল, আমিনুর রহমান, আব্দুল হাই, মোশাররফ হোসেন রিয়াজ, মান নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশলী শাহজান আলী ও রফিকুল ইসলাম। তাদের মধ্যে রফিকুল ইসলামের নাম মামলার এজাহারে ছিল না। তদন্ত শেষে পুলিশ তার নাম অভিযোগপত্রে যুক্ত করে।

বিচার শুরুর আট বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। এ বিষয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর অনুপম চক্রবর্তী বলেন, ‘বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার মামলার বিচার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই মামলায় আসামিরা যেন সর্বোচ্চ শাস্তি পান আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।

‘দীর্ঘদিন ধরে মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে চলছিল। ২০২০ সালে সেখান থেকে চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে দেয়া হয়েছে। মামলায় মোট ২৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। রোববারও মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ছিল। সাক্ষী না আসায় তা সম্ভব হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘৩ অক্টোবর এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারণ করেছে আদালত। ৩ তারিখে সাক্ষী হিসেবে চিকিৎসক পুলক কুমার বিশ্বাসের আদালতে আসার কথা রয়েছে। তার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়ে গেলে মামলাটি ক্লোজ করতে পারব।’

চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৬ প্রাণহানির পরও দ্রুত বিচারকাজ শেষ না করাকেই ঢাকায় গার্ডার পড়ে প্রাণহানির জন্য দায়ী করছেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সে সময় নিহতদের কারও ময়নাতদন্ত হয়নি। এটাই বলে দেয় এর বিচার কী হতে পারে। আর বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা নেই বলে ক্ষতিগ্রস্তরা সে সময় মামলা করেনি। অথবা মামলা না করার জন্য তাদের ফোর্স করা হয়েছিল। এ দেশে মানুষ বিচার পায় আর্থসামাজিক অবস্থান বিবেচনায়। বড় প্রোফাইলের কেউ না হলে বিচার পায় না।’

তিনি বলেন, ‘বহদ্দারহাটের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে অন্যান্য বড় প্রকল্পের ঠিকাদাররা সচেতন থাকতেন। ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করলে সবাই সতর্ক হতো। কর্তৃপক্ষ পাবলিকের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখত। চট্টগ্রামের ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলেই ঢাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অসতর্ক ছিল। ফলে গার্ডার পড়ে আবারও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।’

অ্যাডভোকেট আখতার কবির আরও বলেন, ‘একটা চাঞ্চল্যকর ঘটনার বিচার নিশ্চিতে তিনটি পক্ষকে সচল থাকতে হয়। পুলিশকে দ্রুত তার কাজটা শেষ করতে হবে। দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিষয়ে আদালতকে জানাতে হবে। তাদের প্রতিবেদনের ওপরই সুষ্ঠু বিচারের বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করে।

‘দ্বিতীয়ত, প্রসিকিউশন পক্ষ সাক্ষীদের হাজির করে সাক্ষ্য আদায় করবে, দোষীদের স্বীকারোক্তির ব্যবস্থা করবে। তারা বসে থাকলে মামলা এগোবে না। আর আদালতকে পুরো বিষয়টি তদারকি করতে হবে। এসব হয়নি বলেই মামলাটি এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে ঝুলে আছে।’

এ বিভাগের আরো খবর