জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের পরামর্শ অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি বিএনপি। তবে এ ক্ষেত্রে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি দাবি করেছে দলটি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্যথায় রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের কোনো পরিবেশ নেই।
বুধবার খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা ।
আগের দিন ঢাকা সফর নিয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে ব্যাচেলেট অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর করতে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সংলাপের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সমস্যা ও আগামী বছর হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কেও আমরা সরকারকে সব স্টেকহোল্ডার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের সঙ্গে বসে, সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছি।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো সংলাপ হতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত এই সরকার পদত্যাগ না করবে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করবে, সংসদ বিলুপ্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সংলাপের প্রশ্নই ওঠে না।’
খালেদা জিয়া এখন মুক্ত হলেও তার ১৭ বছরের সাজা রয়েছে, যেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে স্থগিত আছে।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি নেত্রীর পাঁচ বছরের সাজা হয়। একই বছর উচ্চ আদালত সেই সাজা বাড়িয়ে করে ১০ বছর।
আবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালত অন্য একটি রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সাত বছরের সাজা দেয়। এই সাজার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেও তার মীমাংসার কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিএনপি।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত হয়। এরপর তিনি বাসায় ফেরেন। এরপর আরও তিন দফা সাময়িক মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হয়, যেটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরের শেষে।
‘ম্যাডাম ভালো আছেন’
বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। বলেন, তার আবার হাসপাতালে যাওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি এখনও হয়নি।
সকাল থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে যে বিএনপি নেত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে যেকোনো সময় হাসপাতালে নেয়া হতে পারে।
ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডাম খুব ভালো আছেন। তার প্রতিটি টেস্টের রিপোর্ট ভালো। টেস্টে কোনো সমস্যা নেই। হাসপাতাল থেকে সবশেষ বাসায় আসার পর এমন কিছু হয়নি যে এই মুহূর্তে হাসপাতালে যেতে হবে। মূলত হচ্ছে অসুস্থতার মধ্যে তিনি সুস্থ আছেন। আপনারা কোথায় কী শুনেছেন, কীভাবে এটা ছড়ানো হলো বুঝতে পারলাম না।’
‘ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ভয়ংকর’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেরও জবাব দেন ফখরুল।
‘যে বুলেট শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে এতিম করেছে, বেগম জিয়া সেই বুলেট আপনাকেও ছাড়েনি’- সড়কমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘এটা তো ভয়ংকর কথা, এই বুলেটের কথা যদি তিনি বলে থাকেন তাহলে আমার সন্দেহ হয়, আমি জানি না-শুনিনি কিন্তু তাহলে বোঝা যাবে তিনি পুরোপুরিভাবে এই ধরনের একটি চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত আছেন।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে তারা রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চান, এবং জীবন থেকে সরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত পরিকল্পনা রয়েছে কি না সেই প্রশ্ন নিশ্চয় আসে। এটা তাকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে। কারণ, তিনি দায়িত্বশীল সরকারের মন্ত্রী, এটা প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ নেই। তিনি যদি বলে থাকেন যে আমি এটা বলিনি তাহলে তাকে এটা বলতে হবে। তিনি যদি বলে থাকেন তাহলে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।’
মানবাধিকার ইস্যুতে বিএনপি যতগুলো অভিযোগ করেছে সবকিছু রাজনৈতিক বলে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন ফখরুল। বলেন, ‘তারা তো এ কথা বলবেন, তারা কি এ কথা স্বীকার করবেন? তিনি তো স্বীকার করে নিয়েছেন। আমি তো টেলিভিশনে দেখলাম তিনি বক্তব্যে বলেছেন, জাতিসংঘের কোনো ক্ষমতা নেই গুম বা অপহরণ হয়ে যাওয়া বিষয়গুলোর বিচার করার। তার মানে এগুলো সংঘটিত হয়েছে এটা স্বীকার করছেন। নেত্রনিউজের প্রতিবেদনে আরও বেশি প্রমাণিত হয়েছে।
‘সরকারকে একটি আলাদা কমিশন গঠন করে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা তদন্ত করার সুপারিশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। তাদের দেয়া বিবৃতিতে যা উঠে এসেছে সেটা আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, তার সত্যতা প্রমাণ হয়েছে। আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে স্বাধীন তদন্ত চাই, জড়িতদের বিচার চাই।’
এ সময় বিএনপির মিডিয়া সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।