চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষ হলেও অনাবৃষ্টির কারণে পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মাগুরার চাষিরা। মাঠের অধিকাংশ পাট কাটা হয়ে গেছে, কিন্তু শেষমেশ পানির অভাবে পাট জাগ দেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, প্রত্যাশিত বৃষ্টি না হওয়ার পাশাপাশি খরার কারণে পাট নষ্ট হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অধিকাংশ চাষিই বাড়তি খরচ করে সেচের পানি দিয়ে পাট জাগ দেয়ার চেষ্টা করছেন। এভাবে খরচ বেশি হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে এসব পাটের মান ভালো হচ্ছে না।
প্রথম দিকে কোনো রকমে যে পাট জাগ দেয়া গেছে, তা হাটবাজারে বিক্রির জন্য নিলেও মানসম্মত না হওয়ায় বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। ফলে পাট বেচে লাভ তো দূরে থাক, খরচ কীভাবে উঠবে; সে চিন্তার ভাঁজ কৃষকদের কপালে।
এ বছর ৩৫ হাজার ৮৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। হয়েছে ৩৬ হাজার ৯৩০ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ পাট কাটা হয়ে গেছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, এবার বৃষ্টি কম হওয়ার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাই ফেলে না রেখে সেচ দিয়ে হলেও চাষিদের পাট জাগ দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
সদরের আঠারখাদা থেকে মাগুরা নতুন বাজার এলাকার পাটের পাইকারি বাজারে এসেছেন কৃষক শুকুর মিয়া। তিনি ভ্যানে করে পাট বিক্রি করতে এসে দেখেন তার পাট কিনতে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। পাইকাররা বলছেন, এই পাট কেনার মতো নয়। সব পাট নাকি নষ্ট হয়ে গেছে।
এই পাটের মান ভালো না হওয়ার কারণ, কাটার পর জাগ দিতে বিলে পর্যাপ্ত পানি পাননি তিনি। তাই বাড়ির পাশে একটা গর্ত খুঁড়ে তাতে কলের পানি দিয়ে ১৫ দিন পাট ভিজিয়ে রেখেছিলেন। এখন পাটের আঁশ ছাড়িয়ে রোদে শুকিয়ে বাজারে এনে দেখেন পাট কেউ নিতে চাইছে না।
সদরের হাজরাপুর ইউনিয়ন থেকে এই বাজারে আসা কৃষক মনিরুল ইসলাম ১০ মণ পাট এনে বিক্রি করতে পেরেছেন সাড়ে ৫ মণ। তিনি আশা করেছিলেন প্রতি মণ পাট অন্তত ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু তিনি পেয়েছেন ২ হাজার ২০০ টাকা।
তিনি পাট জাগ দিয়েছেন একটি পুকুরে সেচ দিয়ে। এতে তাকে ব্যয় করতে হচ্ছে অতিরিক্ত খরচ। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন তো খরচ মেটানো সমস্যা হয়ে গেছে। এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় পানি নেই, পাট জাগ দিতে শুকিয়ে যাওয়া পুকুরে সেচ দিতে হয়েছে। টানা ২০ দিন এর খরচ প্রতি মণে ২০০ টাকা, শ্রমিক খরচ ৭০০ টাকা করে পড়েছে।’
এখন লোকসানের আশঙ্কা করছেন তিনি। বলেন, ‘পাটের আঁশ ছাড়ানো থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজে শ্রমিক লেগেছে। এতে কৃষকদের হাতে নিজের শ্রমের টাকাও থাকবে না।’
সোনালি রঙের পাটের চাহিদা বেশি থাকলেও এবার বাজারে যে পাট আসছে, তার বেশির ভাগই মানসম্মত নয় বলে জানান নতুন বাজারের পাট ব্যবসায়ী ইমন হোসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এবার বাজারে যে পাট আসছে, তার বেশির ভাগই ঠিক না। সোনালি রঙের পাটের চাহিদা বেশি। কিন্তু এবার সব পাটই কালচে ধরনের, আগা নেই। পাটের আগা না থাকলে সেই পাট মানসম্মত নয়। এ জন্য আমরাও বিপাকে পড়েছি।
‘কারণ এবার শতভাগের মধ্যে ৫ শতাংশ পাট ভালো পাচ্ছি। এতে ব্যাবসায়িকভাবে এই নিম্নমানের পাট কিনতে হচ্ছে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে।’
মাগুরা পাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, ‘এবার অনাবৃষ্টির কারণে প্রথম থেকেই পাট চাষে কৃষকের খুব বেগ পেতে হয়েছে। এখন পাট কাটার পরও পানি তেমন জলাশয়ে না থাকায় ভালো করে পাট ভেজানো হয়নি। ফলে আমাদের কাছে যেসব পাট আসছে, তার মান খুবই খারাপ। এই খারাপ পাট নিয়ে কৃষকরা প্রতিদিন আসছেন।’
মণপ্রতি পাট মানভেদে ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাটের মান অনকেটাই নির্ভর করে ভেজানোর ওপরে। যত পানি থাকবে, ততই পাটের সোনালি রং ফুটে উঠবে। এবার পানি স্বল্পতার কারণে পাটে ভালো রস আসেনি। তাই মানসম্মত পাট এবার কমই দেখা যেতে পারে।’
বৃষ্টি কম হওয়ায় এই পরিস্থিতি উল্লেখ করে কৃষকদের করণীয় নিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় পাট নিয়ে কৃষকরা বিপদে আছেন। জাগ দেয়ার মতো পানি খাল-বিলে তেমন নেই। ফলে অনেকে সেচ দিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। এটা খুবই ব্যয়বহুল। আমরা পরামর্শ দিয়েছি, পাট ফেলে না রেখে এভাবে সেচ দিয়ে হলেও যেন পাট জাগ দেয়া হয়।’