‘পাঁচ মাস, প্রায় পাঁচ মাসের মতো অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছিল। ভয়ভীতি নিয়ে দিন কাটছিল। এখনও ভয়ভীতি আছে, ভয়ভীতি যাবে না। তবে এখন আমি মুক্ত।’
ধর্ম অবমাননার মামলা থেকে অব্যাহতির পর কথাগুলো বলেছেন মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল।
জেলা আমলি আদালত-১-এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জশিতা ইসলাম শুনানি শেষে মঙ্গলবার মামলা থেকে হৃদয় মণ্ডলকে অব্যাহতির মৌখিক আদেশ দেন। বুধবার সে আদেশপত্রে স্বাক্ষর করেন বিচারক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশের জিআরও মো. জসিমউদ্দিন।
এ খবর শুনে শিক্ষক বলেন, ‘ভয়টা রইল না যে আবার কারাগারে যেতে হবে অথবা আবার মাসে মাসে হাজিরা দিতে হবে। এটার থেকে তো মুক্তি পাইলাম।
‘অনেক শিক্ষকই চাইছিলেন আমি এই স্কুল থেকে চলে যাই। স্কুলের শিক্ষকরা তো চাইছিলেন এই সমস্যাটা সৃষ্টি হোক। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সব সময় আমার ভালো সম্পর্ক ছিল, এখনও আছে।’
হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী শাহীন মোহাম্মদ আমানউল্লাহ বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত-১-এর বিচারক জশিতা ইসলাম অব্যাহতির আদেশ দেন। তবে মৌখিক ঘোষণার পর আজ আদেশপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বিচারক। গত ৮ আগস্ট পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।’
যা ঘটেছিল
মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন হৃদয় মণ্ডল।
তিনি গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। গোপনে তার অডিও ধারণ করে এক শিক্ষার্থী।
ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদের কাছে ওই শিক্ষকের নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ দেয়। প্রধান শিক্ষক কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জবাব দিতে বলেন। তবে এর আগেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে হৃদয় মণ্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল বের করে।
বিদ্যালয় চত্বরের পাশের রিকাবীবাজার এলাকাতেও মিছিল হয়। প্রধান শিক্ষক পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের খবর দেন। স্কুলে গিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে ভেস্তে যায় সেই আলোচনা। একপর্যায়ে হৃদয় মণ্ডলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর রাতেই হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্কুল সহকারী মো. আসাদ।
১৯ দিন কারাভোগের পর ১০ এপ্রিল রোববার জামিনে মুক্ত হন হৃদয় মণ্ডল। তাকে ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোতাহারাত আক্তার ভূঁইয়া।
কী কারণে এই অভিযোগ তোলা হতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে সেদিন নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারছি না কী ঘটছে, স্কুলে অভ্যন্তরীণ রেষারেষি থেকেও হতে পারে, প্রাইভেট পড়ানো নিয়েও হতে পারে।’
নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বানও জানান তিনি। বলেন, যাদের অভিযোগের কারণে তিনি কারাভোগ করেছেন, তাদের ওপর তার কোনো ক্ষোভ নেই।
গত ১১ এপ্রিল সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হাই তালুকদারকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বোর্ড। তদন্ত শেষে হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি বলে ২০ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।