কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। টিফিন পিরিয়ডে মাঠে খেলা করছে সহপাঠীরা। কেউ আবার ব্যস্ত দুপুরের খাবার নিয়ে। শুধু সিফাত (প্রতীকী নাম) বসে আছে ক্লাসের এক কোণে। একা!
মঙ্গলবার দুপুরে এক আকস্মিক পরিদর্শনে সিফাতের স্কুলে গিয়ে হাজির হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিস ঘোষ। ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেন তিনি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সুবিধা-অসুবিধা আর স্বপ্ন নিয়ে আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন।
এ সময়ই ক্লাসের কোনায় বসে থাকা সিফাতকে দেখেন ইউএনও। পরনে স্কুল ড্রেস নেই তার। সবাই যখন সুন্দর স্কুল ড্রেসে পরিপাটি তখন সিফাতের স্কুল ড্রেস না থাকা বেশ ভালো করেই নজরে আসে ইউএনওর।
এ অবস্থায় সিফাতের দিকে এগিয়ে যান শুভাশিস ঘোষ। মিষ্টি কথায় তাকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন। আলাপচারিতায় জানতে পারেন, কিছুদিন আগে স্কুল ড্রেস ছিঁড়ে গেছে সিফাতের। ছিঁড়ে যাওয়া স্কুল ড্রেস লজ্জায় আর গায়ে চাপায় না সে। বাবার আর্থিক অসংগতির কারণে নতুন ড্রেসও বানানো হয় না তার। তাই টিফিন পিরিয়ডে সবাই যখন স্বতঃস্ফূর্ত তখন বেমানান ড্রেসে জড়োসড়ো হয়ে বসে ছিল সিফাত।
তুমি স্কুলের ড্রেস পরে আসোনি কেন- ইউএনওর এমন প্রশ্নে শুরুতে কিছুটা চুপসে যায় সিফাত। ইতস্তত হয়ে বলে, ‘ড্রেস সেলাই করতে দিয়েছে বাবা।’
কিন্তু সিফাতের ইতস্ততা নজর এড়ায়নি ইউএনও শুভাশিস ঘোষসহ উপস্থিত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের।
এ অবস্থায় সিফাতের পারিবারিক অবস্থা জানার চেষ্টা করেন ইউএনও। তিনি জানতে পারেন, তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট সিফাতের বাবা একজন পিকআপ ভ্যানচালক। এই ভ্যান চালিয়ে যে আয়- তা দিয়েই সংসার আর সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ করেন তিনি। তার হাড়ভাঙা পরিশ্রমেই চলছে পাঁচ সন্তানের পড়াশোনা।
এসব কথা শুনে সিফাতকে নিয়ে বিদ্যালয়সংলগ্ন চৌয়ারা বাজারে যান ইউএনও। দর্জির দোকানে গিয়ে তার জন্য নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করেন। কৃতজ্ঞতায় সিফাতের চোখেমুখে তখন রাজ্যের বিস্ময়! বড় মানুষ হওয়ার তাড়না।
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের উচ্ছ্বসিত প্রধান শিক্ষক খোরশেদা আক্তার বলেন, ‘ইউএনও স্যারের এমন মহতী কাজে আমরা খুবই আনন্দিত।’
ইউএনও শুভাশিস ঘোষ বলেন, ‘যেখানে আর্থিক সংকটের দোহাই দিয়ে অনেকেই সন্তানদের পড়াশোনা মাঝপথে বন্ধ করে তাদের শিশুশ্রমে জড়ায়, সেখানে সিফাতের বাবা শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন নিয়মিত। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য আনন্দের বার্তা। আমরা সেই আনন্দের অংশীদার হয়েছি মাত্র।’