বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাসে বাড়তি ভাড়া চার্ট না থাকার সুযোগে

  •    
  • ১৭ আগস্ট, ২০২২ ১১:১৩

কেন যাত্রীদের চোখের আড়ালে ভাড়ার তালিকা লাগানো হয়েছে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থেকে চিটাগাং রোডগামী সুগন্ধা পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৯১৬৮ বাসের চালক মো. ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাড়ার চার্ট আমরা না মালিকে লাগিয়েছে এভাবে। কথা সত্য, জানালা খোলা রাখলে ভাড়ার তালিকা দেখা যায় না। তবে জানালা বন্ধ করলে তো দেখা যায়।’

বাসভাড়া নির্ধারণের পর কোনো এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ভাড়া কত, সেটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ নির্ধারণ করে দিলেও কার্যত সে তথ্য পাচ্ছে না যাত্রীরা। অথচ এই বিষয়টিই বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে একটি হাতিয়ার হতে পারত।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর ৭ আগস্ট বিআরটিএ থেকে নতুন ভাড়ার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনের পরে ৯ দিন চলে গেলেও রাজধানীতে বেশির ভাগ বাসে এখনও ভাড়ার তালিকা টানানো হয়নি।

এবার চাপে পড়ে বাস মালিক সমিতি বাড়তি ভাড়া আদায়ের প্রধান কৌশল ওয়েবিল পদ্ধতি বাতিল করে দূরত্ব অনুসারে ভাড়া আদায়ের ঘোষণা অবশ্য দিয়েছেন। তবে কোনো একটি গন্তব্য থেকে অন্য একটি গন্তব্য পর্যন্ত যে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হতো, সেটিই আদায় করা হচ্ছে। এর কারণ এই পথের দূরত্ব কত, সেটি না জানা।

দূরত্বের বিষয়টি জানা যেত ভাড়ার চার্ট সাঁটানো থাকলে। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা বাসে সেই চার্ট সাঁটান না, আর সাঁটালেও দুই চার দিন পর তা ছিঁড়ে ফেলেন অথবা এমন জায়গায় থাকে, যেখানে যাত্রীর চোখ যায় না।

কয়েকটি বাসে দেখা গেছে, জানালার দুটি গ্লাসের মধ্যে যে গ্লাসটি বাইরের অংশে থাকে, সেই গ্লাসে ভাড়ার তালিকা টানাচ্ছে। ফলে জানালা খুলে রাখার কারণে বাইরের গ্লাসে টানানো ভাড়ার তালিকা ভেতরের গ্লাস দিয়ে ঢেকে যাচ্ছে, যা যাত্রীদের চোখের আড়ালে থেকে যাচ্ছে।

কেন যাত্রীদের চোখের আড়ালে ভাড়ার তালিকা লাগানো হয়েছে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থেকে চিটাগাং রোডগামী সুগন্ধা পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৯১৬৮ বাসের চালক মো. ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাড়ার চার্ট আমরা না মালিকে লাগিয়েছে এভাবে। কথা সত্য, জানালা খোলা রাখলে ভাড়ার তালিকা দেখা যায় না। তবে জানালা বন্ধ করলে তো দেখা যায়।’

কেউ তো আর জানালা বন্ধ করে রাখে না। জানালার ওপরের গ্লাসে কেন ভাড়ার তালিকা লাগানো হয় নাই- উত্তরে তিনি একই কথা বলেন। ফারুক বলেন, ‘এটা মালিক এভাবে টানিয়েছে।’

অনেক বাসে আবার চালকের সামনে ভাড়ার তালিকা টানানো। যেটা দূর থেকে দেখে যাত্রীরা কিছুই বুঝবে না।

ভাড়ার চার্ট টানানোর শর্ত হিসেবে বিআরটিএ থেকে বলা হয়েছে, যাত্রীদের থেকে এমন দূরত্বে ভাড়ার তালিকা লাগাতে হবে যাতে তারা সহজেই দেখে ভাড়া দিতে পারেন।

চালকের মাথার ওপর চার্ট থাকার বিষয়ে বাইপাইল থেকে সাইনবোর্ড এম এম লাভলী পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব ১৪-৯৬৫১ বাসের ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা মো. রনি বলেন, ‘ভাড়ার চার্ট আজকে দিছে। তাই সামনে একটা টানাইছি।’

এই পরিবহনের বেশ কয়েকটি বাসে একই চিত্র দেখা যায়।

মোহাম্মদপুর থেকে গুলিস্তানগামী মিডলাইন পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব ১৩-০৫৪০ বাসের চালক শুকুর আলী বলেন, ‘একটা চার্ট টানাইছি।’

যাত্রীদের সুবিধাজনক স্থানে বেশ কয়েকটি ভাড়ার তালিকা টানানোর কথা। সামনের ভাড়ার তালিকা তো দেখা যায় না- উত্তরে শুকুর আলী বলেন, ‘আপনি বলেছেন, আজকেই চার্ট টানাব।’

বাসে যাত্রীদের সুবিধাজনক স্থানে ভাড়ার তালিকা টানানো হয়নি কেন- জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থেকে ধুপখোলাগামী মালঞ্চ পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৯৭৬২ বাসের চালক আল-আমিন বলেন, ‘আমাদের একটা চার্ট দিছে। সেটা সামনে টানিয়ে রাখছি।’

আপনি ভাড়ার তালিকা পাঁচটা ফটোকপি করে বাসে টানাতেন- উত্তরে আল-আমিন বলেন, ‘আমাদের তো মালিকপক্ষ থেকে কিছু বলে নাই। এই একটাই টানাতে বলছে। আমাদের বললে আমরা জানালায়, দরজার সামনে টানাতাম। ভাড়ার চার্ট একটা দিছে, একটাই টানাইছি।’

একই পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৯৫২৭ বাসের চালক মো. মাহাবুব বলেন, ‘চার্ট এখনও কোম্পানি দেয় নাই।’

আপনাদের অন্য বাসে তো ভাড়ার তালিকা দিয়েছে?– জবাবে মাহাবুব বলেন, ‘আমারে এখনও দেয় নাই। আমরা চাইছি, বলছে আজকে দিবে।’

মোহাম্মদপুর থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারগামী স্বাধীন পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৯৯৬০ বাসেও দেখা যায়নি চার্ট। কারণ জানতে চাইলে এর চালক মো. বিল্লাল বলেন, ‘ভাড়ার চার্ট আমাদের এখনো দেয় নাই।’

বাসে ভাড়ার তালিকা দেয়া হয়েছে আগেই। আপনাকে না দেয়ার কারণ থাকতে পারে না- এমন মন্তব্যের জবাবে বিল্লাল বলেন, ‘ছুটিতে ছিলাম। গতকাল থেকে বাস চালাচ্ছি। এগুলা কিছু জানি না।’

মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রীগামী তরঙ্গ প্লাস পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-১১৬৮ বাসের চালক তানভীর হাসান বলেন, ‘চার্টের বিষয়ে মালিক জানে। মালিক বলছে, কালকে থেকে আমাদের চার্ট দিবে।’

অনেকে আবার বলছেন, ভাড়ার তালিকা নাই। তারা ওয়েবিলে ভাড়া কাটছেন।

মিরপুর দুয়ারীপাড়া থেকে সদরঘাটগামী বিহঙ্গ পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব ১৩-০৭৫০ বাসের ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা মো. তুহিন বলেন, ‘চার্ট নাই। ওয়েবিলে ভাড়া লেখা আছে।’

ওয়েবিল তো থাকার কথা না, ভাড়া কাটার কথা কিলোমিটার হিসেবে- সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এই প্রশ্ন করতেই তুহিন বলেন, ‘চার্ট ছিল। গাম নাই, তাই উঠে গেছে। আরও দুই সপ্তাহ আগে ভাড়ার চার্ট লাগানো ছিল।’

দুই সপ্তাহ আগে তো পুরাতন ভাড়ার তালিকা ছিল- উত্তরে তুহিন বলেন, ‘চার্ট সামনের সপ্তাহে দিছিল। উঠে গেছে।’

ডিজিটাল ব্যানার ও ই-টিকিটিংয়ের দাবি

যাত্রী অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘প্রত্যেক বাসস্টান্ডে ডিজিটাল ব্যানারে বড় হরফে দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়ার অঙ্কের তালিকা টানানোর দাবি জানাচ্ছি। যাত্রী, চালক ও ভাড়া কাটার দায়িত্বে যিনি থাকেন, তারা যাতে সবাই ভাড়া দেখতে পারে এই দাবি জানাই।’

ই-টিকিটিং পদ্ধতিতে ভাড়া কাটার ব্যবস্থা করলে যাত্রীরা সঠিকভাবে ভাড়া দিতে পারবেন বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে ভাড়া নিলে যাত্রী গোনার কথা বলে মালিকরা যে ওয়েবিল চালু রেখে ভাড়া বেশি নিচ্ছে এই ওয়েবিল লাগবে না।’

ভাড়ার চার্ট নিশ্চিত করার ব্যর্থতা নিয়ে জানতে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে ফোন দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ফোনে কয়েকবার কল দিলে তিনি তা না ধরে ফোন কেটে দেন।

এ বিভাগের আরো খবর