অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে ভোলার সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের কালীকীর্তি গ্রামের এক কিলোমিটারের বেশি রিংবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় এলাকাবাসী নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করছেন।
পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছে, রিংবাঁধটি জরুরি সংস্কার করতে যে বরাদ্দ দরকার, তা প্রকল্প আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে; তাই এই মুহূর্তে জরুরি কোনো বরাদ্দ পাওয়া সম্ভব নয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, রিংবাঁধটি শিবপুর ইউনিয়নের পুলেরগোড়া বাজার থেকে কালীকীর্তি নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে আবুল কাশেম ডাক্তার বাড়ির সামনে মূল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সঙ্গে মিশেছে। প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাঁধটির চারটি স্থানে এক কিলোমিটারের বেশি বাঁধ জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাউবো কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষতি ঠেকাতে স্থানীয়রা নিজেরাই বালির পরিবর্তে বস্তায় মাটি ভরে বাঁধে ফেলছেন।
কালীকীর্তি নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনির উদ্দিন বলেন, ‘এই রিংবাঁধের মধ্যে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মসজিদ, তিন শতাধিক পরিবারের বসবাস ছাড়াও মাছঘাট ও কয়েকটি বাজার রয়েছে। গত কয়েক দিনে মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। এতে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। পাউবোর কোনো সহযোগিতা না পেয়ে, স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে তিন দিন ধরে বাঁধটি সংস্কারের চেষ্টা করেছেন।’
বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. ইউসুফ মাস্টার বলেন, ‘কয়েক বছর আগে জোয়ারের তোড়ে বাঁধ ভেঙে সব কিছু প্লাবিত হয়ে যায়। তখন কয়েক মাস স্কুল বন্ধ ছিল। সেই আশঙ্কায় গ্রামবাসী মিলে প্রায় এক কিলোমিটার রিংবাঁধ সংস্কার করেছে।’
অভিভাবক আব্দুল হাই বলেন, ‘স্থানীয়রা বস্তায় মাটি ভরে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে ফেলেছে। তারপরও আশঙ্কার মধ্যে আছে। পাউবো যদি বালুভর্তি বস্তা বাঁধের গায়ে ফেলত, তাহলে মানুষ নিশ্চিন্তে রাত কাটাতে পারত।’
ক্ষতিগ্রস্ত রিংবাঁধ পরিদর্শন করেছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিনে পূর্ণিমা, নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়েছে। এতে শিবপুরের রিংবাঁধের ক্ষতি হয়েছে সত্য। এ বাঁধটি শিবপুর ইউনিয়নের মূল বন্যা-জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে। এতে বালুভর্তি বস্তা ফেলে সংস্কার করতে কোটি টাকার দরকার।’
জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করতে এই মুহূর্তে এত টাকার বরাদ্দ পাওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বরাদ্দ আনতে নকশা করে প্রকল্প পাঠাতে হবে। সেই প্রকল্প মন্ত্রণালয় থেকে পাস করাতে হবে। তাই আপাতত কোনো বরাদ্দ পাউবো করতে পারবে না।’
ভোলা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জোয়ারের তোড়ে ভোলার বিভিন্ন এলাকার বন্যা-জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। শিবপুরে সরেজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’