রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি ইস্যুতে দ্রুতই সে দেশ থেকে একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। রুশ বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে বিদ্যমান তেল শোধনাগারগুলো পরিদর্শন করে এখানে রাশিয়ান তেল পরিশোধনের উপায় ও উপযোগিতা বিশ্লেষণ করবেন।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া থেকে ভারত জ্বালানি তেল আনছে। তাই সেখান থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে বাংলাদেশেরও টেকনিক্যাল কোনো সমস্যা হয়তো নেই। তবে ঘাটতি থাকতে পারে ক্যাপাসিটির। কারণ ভারতের মতো ক্যাপাবিলিটি হয়তো আমাদের নেই।’
এই সিনিয়র সচিব বলেন, ‘রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রিফাইন করার ক্যাপাসিটি যদি আমরা করে নিতে পারি তাহলে সেখান থেকে আমরাও জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারি। তবে সেটা হয়তো একটু সময়সাপেক্ষ।
‘এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের একটি দল আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ঢাকায় আসছেন। আমাদের যে শোধনাগারগুলো আছে, সেগুলো পর্যবেক্ষণের কাজগুলো চলবে। যে কারিগরি প্রতিবন্ধকতাগুলো আছে, আমরা সেগুলো আপডেট করার কাজ করব। যেহেতু আজ নির্দেশনা এসেছে, তাই আমরা দ্রুতই অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসব। প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের কাজগুলো দ্রুত শেষ করা হবে।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘অনেকেই তো তেল নিচ্ছে। সুতরাং আমরাও নিতে পারব। অনেকে তো থার্ড কান্ট্রি থেকেও নেয়। আমি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের লোক নই। তবু যতটুকু শুনেছি, বিষয়টি টেকনিক্যাল। আমাদের রিফাইনারিগুলো রাশিয়ান গাঢ় ক্রুড রিফাইন করার উপযুক্ত নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘রাশিয়া থেকে তেল কিনলে ‘মুভ অফ পেমেন্ট’ কী হবে তা অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক করবে।’
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা। রাশিয়ান তেল ও গ্যাস আমদানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে রাশিয়া থেকে তেল আনলে বিষয়টি আমাদের রপ্তানি বাজারে ঝুঁকি তৈরি করবে কীনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা তা দেখব। আর সেটি অনেক পরের ব্যাপার। কেবল কথা শুরু হলো। আমাদের এক্সপ্লোর করার কথা বলা হয়েছে। আমরা এক্সপ্লোর করে দেখব। যদি সে রকম কোনো ঝুঁকি থাকে তখন আমরা বিকল্প ব্যবস্থা দেখব।’
বিকল্প উৎস সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত ও সিনিয়র পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশের সঙ্গেই আমাদের যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সেদিনও সৌদি রাষ্ট্রদূত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তারা বাংলাদেশকে এ বিষয়ে সহায়তা করতে রাজি আছেন। কাতারের সঙ্গেও আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ওই দেশ থেকে আমরা এলএনজি আমদানি করি। ফলে আমাদের অনেক অপশন আছে।’
বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরান থেকে তেল আনার সম্ভাবনা আছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘এটাও একটা পসিবিলিটি। ইরান থেকেও তেল আনা যায়। সে সম্ভাবনাও এক্সপ্লোর করা যায়। ইরানের ওপরও কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে তাদের সঙ্গে পশ্চিমাদের নেগোসিয়েশন চলছে। সেটার একটা পজিটিভ আউটকাম এলে তাদের ওপর থেকে হয়তো নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। তখন এটাও একটা সম্ভাবনা তৈরি করবে।
‘তবে ইরানের যে সুইট ক্রুড আছে তা আমাদের রিফাইনারিতে কতটা কাজ করবে, তা ভেবে দেখতে হবে। মোট কথা, যতোগুলো সম্ভাবনা আছে তা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।’
সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদের সামনে যে সুযোগগুলো রয়েছে, সেগুলো কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেটা সবার আগে দেখতে হবে। বিদ্যমান পাইপলাইনে সরবরাহটা যেন নিশ্চিত থাকে। সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যকেই অগ্রাধিকারে রাখছে সরকার। কারণ এতোদিন তারাই আমাদের জ্বালানি তেলের যোগানটা দিয়ে এসেছে।’
সচিব বলেন, ‘ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্য সোর্সগুলোও যাচাই করা হবে। তবে আগে তাদের সঙ্গে আমাদের এ বিষয়ক কোনো বাণিজ্য হয়নি। তাই এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
কাজী আনারকলি ইস্যু
ইন্দোনেশিয়া থেকে বহিষ্কৃত কূটনীতিক কাজী আনারকলি সম্পর্কিত প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় তার বাসায় মারিজুয়ানা থাকার বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে আমরা মারিজুয়ানা সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছি। এক্ষেত্রে আমাদের সরকারি কর্মচারী বিধিমালা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা পরবর্তী প্রসিডিংয়ে হয়তো আরো গভীরে যেতে পারব।’
এটা ফোজদারি অপরাধ কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘না। এটা তো অন্য দেশের ঘটনা। এটা একেক দেশে একেক রকম। এটা যদি যুক্তরাষ্ট্রে হতো তাহলে সেখানকার অর্ধেক রাজ্যেই এটা কোনো বিষয় না। নেদারল্যান্ডেও কোনো বিষয় না। তাই আমরা আপাতত অফিসিয়াল অ্যাক্টেই বিষয়টি দেখছি।’
‘তার বাসায় কোনো বিদেশি থাকার সত্যতা আমরা পাইনি। তবে মারিজুয়ানা থাকার সত্যতা মিলেছে। তবে তা খুবই কম পরিমাণ। বিক্রির জন্য নয়, সেবনের জন্যই এটা রাখা হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ মিলেছে।
‘তবে প্রপার ইনভেস্টিগেশনে সব পরিষ্কার হবে। ইন্দোনেশিয়া থেকে তো আমরা এক ধরনের ইনফরমেশন পেয়েছি। তার ভিত্তিতেই আমরা তাকে দেশে নিয়ে এসেছি। তদন্তের স্বার্থে আবার আমাদেরকে সেখানে যেতে হলে তখন আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা সেখানে যাবে। তিনি সেখানে গেলে হয়তো আরো ডিটেইলস বের করতে পারবেন।’
সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে
সুইস রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য নিয়ে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে শিগগির আমরা আমাদের স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বসব। হয়তো তাদের কাছে পরিপূর্ণ তথ্য নেই। আবার আমাদের কাছেও হয়তো সব তথ্য নেই। সুতরাং দুই দেশের সরকারের মধ্যে যদি মেকানিজম তৈরি করা যায়, সেটাই চেষ্টা করা হবে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিট আছে। ওদেরও ইন্ডিপেন্ডেন্ট বডি আছে। তাদের সঙ্গে হয়তো পারস্পরিক সংযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে হয়তো সুইস অ্যাম্বাসেডর ওয়াকিবহাল নন। সে ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ আছে।
বার্নে সুইস অথরিটির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। সুইস দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে। তাদের অন্যান্য অথরিটির সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তাদের সঙ্গে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে আমরা তা অবসানের চেষ্টা করব। সুইজারল্যান্ড আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ। আমাদের ডেভেলপমেন্ট পার্টনার। তাই তাদের সঙ্গে কোনো ভুল বোঝাবুঝি হোক তা আমরা চাই না।’
সচিব বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব যেন বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার না হয়। আর বিদেশে থাকা টাকার পুরোটাই পাচার হওয়া নয়। আমাদের অনেক প্রবাসী ব্যবসায়ীও দেশ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন বলে শুনেছি।’