বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চকবাজারের আগুন ‘হোটেল থেকে’

  •    
  • ১৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:১১

ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বরিশাল হোটেলের চুলার কাছে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাসের পাইপ লাইন আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত। কারণ হোটেলে চুলার গ্যাস লাইন ছাড়া আগুনের আর কোনো উৎস নেই। আর এখানে কোনো গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আলামত আমরা পাইনি।’

রাজধানীর চকবাজারের কামালবাগ এলাকার একটি চারতলা ভবনে আগুনের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ছয়জন। আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রায় আড়াই ঘণ্টা কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট। ভবনটির নিচতলার হোটেল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা এমনটা জানালেও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য মেলেনি৷ পাঁচ সদস্যের কমিটি তদন্ত করে আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে নিশ্চিত হবে। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রাথমিক তদন্তে বরিশাল হোটেল থেকেই যে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে একাধিক সংস্থার কর্মকর্তারা।

চারতলা ভবনটির নিচতলায় বরিশাল হোটেল। আর এই হোটেল থেকেই বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ভবনের অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার সময় ভবনটি থেকে একটু সামনে গলির মুখে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলেন আবদুর রহিম নামের এক যুবক। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘তখন আনুমানিক পৌনে ১২টা বাজে। হঠাৎ একটা বোমা ফাঁটার মতো শব্দ হলো। আমি পেছনে ফিরে দেখি বরিশাল হোটেল থেকে আগুন বেরিয়ে উপরের দিকে উঠছে। তখন সবার সঙ্গে আমিও দৌড় দিলাম। এরপর চারতলাতেও আগুন জ্বলতে থাকল।’

ঘটনার সময় বরিশাল হোটেলের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলেন আরেক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, আমি হেঁটে যাওয়ার সময় হোটেলের দিকে একবার তাকালামও। দেখলাম সিঙ্গারা বানানো হচ্ছে। হোটেল ক্রস করলাম আর অমনি শব্দ হলো আর আগুনের তাপ এসে আমার গায়ে লাগল। আমি দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে গেলাম। পরে দেখি আগুন বরিশাল হোটেলের পাশ থেকে বের হয়ে ট্রান্সফরমারে ধরে গেল। এরপর মনে হয় ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন উপরে উঠে ছড়িয়ে গেল।

দুই প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যের সঙ্গে বরিশাল হোটেলে আগুনের ক্ষতের মিলও আছে বেশ। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বরিশাল হোটেলের প্রবেশমুখেই ডান পাশে রান্নার চুল্লি। পাইপ লাইনের গ্যাসের মাধ্যমে এই হোটেলের রান্নার কাজ চলতো তা বোঝা গেল। চুলার চেম্বারের পাশেই হোটেলের দেয়াল ঘেঁষে গ্যাসের রাইজার এবং গ্যাস লাইন। ওই গ্যাস লাইনের একটি আবার চলে গেছে হোটেলের চুল্লির চেম্বারে। সেখান থেকে আবার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে হোটেলের আরেকটি চুলায় গ্যাসের সংযোগ দেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ওই চুলার বার্নারটি খুলে রাস্তায় পড়ে ছিল আর এই বার্নারের গোড়াতেই প্লাস্টিক পাইপ ঝুলতে দেখা যায়।

হোটেলটির ঠিক উপরেই কাঠের পাটাতন দিয়ে কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা ছিল। হোটেলের পেছনে আলাদা সিঁড়ি ব্যবহার করে কর্মীরা ওই সিলিং ঘরে যাতায়াত করতেন। আর দুই শিফটে কাজ করে পালাক্রমে কর্মীরা সেখানে ঘুমাতেন।

হোটেলের চুল্লির অংশে আগুনের চিহ্ন বেশ। ভেতরের দিকে আগুন খুব একটা স্পর্শ করেনি। আগুন ছড়িয়েছিল কর্মীদের থাকার ঘরের কাঠের পাটাতনগুলোতে। হোটেলের নিচের অংশের মতো একইভাবে চুল্লির ঠিক উপরের পাটাতনগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, অপেক্ষাকৃত কম পুড়েছে হোটেলের ভেতরের অংশের উপরের কাঠের পাটাতনগুলো। তাই খালি চোখেই বেশ অনুমান করা যায় চুল্লির অংশের আগুন তেঁতিয়ে উপরে যেতে চেয়েছে। আর এই কাঠের পাটাতনের উপর বিছানা পেতে ঘুমাচ্ছিলেন রাতের শিফটে কাজ করা ছয় জন। তাদের কেউই প্রাণে বেঁচে নেই।

এরপর আগুন ভবনের তৃতীয় তলার জুতার সোল তৈরির কারখানা ও চতুর্থ তলার প্লাস্টিকের খেলনা তৈরির কারখানাসহ পাশের পলিথিন কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে।

একই সমীকরণ মিলিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বরিশাল হোটেলের চুলার কাছে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাসের পাইপ লাইন আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত। কারণ হোটেলে চুলার গ্যাস লাইন ছাড়া আগুনের আর কোনো উৎস নেই। আর এখানে কোনো গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আলামত আমরা পাইনি।

‘পাশাপাশি আগুনের চরিত্র বিচার করলে আগুন নিচ থেকে উপরের দিকে ওঠে, এখানেও তাই হয়েছে। আর উপরের তলাগুলোতে আগুন পরিবাহী অনেক উৎস থাকায় তা খুব দ্রুত ছড়িয়েছে। প্রথমে আগুন মাথার উপর কাঠের পাটাতন পেয়েছে, এরপর জুতার কারখানা আর প্লাস্টিক কারখানায় দাহ্য পদার্থের স্পর্শ পেয়ে বড় হয়েছে।’

ঘটনার পর তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে আসেন লালবাগ সিটি এসবির এক কর্মকর্তা। তদন্তে তার মনোযোগও বরিশাল হোটেলের চুল্লি আর গ্যাসের লাইন ঘিরেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানালেন, হোটেলের অরক্ষিত গ্যাস লাইনই দায়ী এই আগুনের জন্য। তিনি বলেন, ‘হোটেলের পাটাতনগুলো খেলায় করে দেখেন আগুন চুলা বরাবর ঠিক উপরে উঠেছিল। তাহলে যা ঘটার এই চুলা থেকেই ঘটেছে।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পর নিশ্চিত করে বলা যাবে কেন এই দুর্ঘটনা ঘটল। এখানে গ্যাসের লাইন আছে, তবে গ্যাসের লাইন থেকেই আগুন ছড়িয়েছে কিনা তা এখনই বলা যাবে না। জুতা এবং প্লাস্টিকের খেলনা তৈরির কারখানায় বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ ছিল, যা আগুন ছড়াতে সহযোগিতা করেছে।’

স্থানীয়রা জানান, হোটেল মালিকের নাম ফখরুদ্দিন। এই ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি।

তাকে খুঁজে পেতে কাজ শুরু করেছে চকবাজার থানা পুলিশ।

এ বিভাগের আরো খবর