বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের ফ্লাইওভারের বক্স গার্ডার চাপায় পিষ্ট গাড়ির যে দুই আরোহী প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন, তারা সম্পর্কে বর-কনে। তাদের বউভাতের অনুষ্ঠান ছিল এদিন।
যারা মারা গেছেন, তারা হলেন বরের বাবা, কনের মা, কনের খালা ও খালাতো ভাই এবং বোন।
সোমবার বিকেলে উত্তরায় জসিমউদ্দীন মোড়ে প্যারাডাইজ টাওয়ারের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
বেঁচে ফেরা দুইজন হলেন ২৬ বছর বয়সী হৃদয় ও ২১ বছর বয়সী রিয়ামনি, যাদের বিয়ে হয়েছে গত শনিবার। আজ ছিল বউভাত।
ছেলের বাড়ি রাজধানীর কাওলায়। বউভাত শেষে মেয়ের বাড়ি আশুলিয়ায় নিয়ে যাচ্ছিল। ছেলের বাবা রুবেল গাড়িটি চালাচ্ছিলেন।
ঘটনাস্থলে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় ভুক্তভোগী পরিবারটির সদস্য জাহিদ হাসান শুভর সঙ্গে। তিনি দুর্ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত না থাকলেও বেঁচে ফেরা দুই স্বজনের বরাত দিয়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
তার কাছ থেকেই জানা যায় নিহতদের পরিচয়।
শুভ জানান, বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে তারা বর-কনেকে অতিথি করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। বরের বাবা গাড়িতে করে তাদেরকে দিয়ে আসতে যাচ্ছিলেন।
জানান, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন ছেলের বাবা রুবেল মিয়া। ছিলেন মেয়ের মা ফাহিমা বেগম, তার বোন ঝর্ণা বেগম এবং তার দুই সন্তান ৬ বছর বয়সী জান্নাত ও ২ বছর বয়সী জাকারিয়া। তাদের সবাই মারা গেছেন।
দুর্ঘটনার ১০ মিনিট পর পুলিশের ফোন পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন শুভ। বলেন, ‘আমাদের এক পুলিশ ফোন দিয়ে বলেন, আপনাদের গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করছে। আমরা এয়ারপোর্ট থেকে দৌড়াইয়া আসি। দেখি গাড়ি একটা চাপাপড়ে আছে৷ ভাগনি আর ভাগনি জামাইরে বের করে বসাইয়া রাখছি।’
শুভর আক্ষেপ, ঘটনাস্থলে এসে গাড়িতে অন্য কয়েকজনকে জীবিত পেয়েছেন। চাপা দেয়া ভায়াডাক্টটাকে দ্রুত সরিয়ে হাসপাতালে নিতে পারলে হয়তো স্বজনরা বেঁচে যেতেন।
তিনি বলেন, ‘পুরোটাই প্রজেক্টের গাফিলতি। সাড়ে ৩টায় ঘটনা ঘটছে, কোনো লোক আসে নাই। চার ঘণ্টা যাবৎ এভাবে ছিল। হয়রানি করাইছে। আমি আইসা দেখছি আমার ভাইগনা জীবিত, বোন জীবিত। শ্বাস চলতেছে। আমার বেয়াই যিনি ড্রাইভ করতেছিলেন, তার হাত কাঁপতেছে।’
প্রশাসনের লোকদের প্রতি অভিযোগ করে শুভ ইঙ্গিত করে বলেন, ‘ওনারা কিছুই করে নাই। ছবি তোলা নিয়া ব্যস্ত।’
বর-কনে শঙ্কামুক্ত
পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ির এক পাশে থাকা বর ও কনে দুজনই আশঙ্কামুক্ত।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মহসীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর-কনে ভালো আছেন। তারা উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আছেন।’
‘এটা অবশ্যই হত্যাকাণ্ড’
এটিকে নিছক দুর্ঘটনা মানতে নারাজ শুভ। বলেছেন, পুরো ঘটনাটিই ঘটেছে গাফিলতির কারণে। ক্রেন দিয়ে ভারী ভায়াডাক্ট তোলার সময় কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। সড়কে দেয়া হয়নি বেষ্টনী।
নিহতদের স্বজন বলেন, ‘এটা তো অবশ্যই হত্যাকাণ্ড। ক্রেন দিয়ে গার্ডার উঠিয়ে কাজ করতেছিল। রাস্তায় কোনো ব্যারিকেড ছিল না। কিছুই ছিল না। থাকলে আমরা অপজিট রাস্তা দিয়ে যেতাম।’
তিনি বলেন, ' আজকে আমাদের পরিবারের ক্ষতি হইছে। আমার বোন চলে গেছে, আমার ভাগনি চলে গেছে। আর এ রকম সামনে যে ক্ষতি হবে না এর কোনো গ্যারান্টি আছে?'
গার্ডারটি কীভাবে গাড়ির ওপর পড়ল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্রেনগুলো যেটা উঠাইছে এটা ওয়েট নিতে পারে নাই। কাইত হইয়া গেছে। রাস্তা ওপেন ছিল। ক্রেন কাইত হইয়া রানিং গাড়ির ওপরে পড়েছে।’