জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর নতুন হারে ভাড়া নির্ধারণের পর ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহর মালিকানাধীন এনা পরিবহন বিপাকে পড়েছে।
এই পরিবহন আগের তুলনায় ভাড়া বাড়িয়েছে ৭০ টাকা। এই রুটে ভাড়া নেয়া হয় ৩২০ টাকা পর্যন্ত। তবে সরকারের দূরত্বের হিসাবে ভাড়া হওয়ার কথা ৩১০ টাকা। তবে ভাড়া বাড়ার পর যাত্রী কমে যাওয়ায় উল্টো বিপাকে পড়েছে কোম্পানিটি।
এই রুটে ৫২ আসনের বাসগুলোতে যাত্রী পাওয়া গেলেও ৪০ আসনের বাসগুলোতে যাত্রীর সংখ্যা কমেছে। এর কারণ ৫২ আসনের বাসের ভাড়া কম। ২৫৫ টাকায় যাওয়া-আসা করা যাচ্ছে এই বাসগুলোতে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরীর মাসকান্দা আন্তনগর বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, এনা কোম্পানির ঢাকাগামী সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে। ভাড়া বাড়ার আগে এ টার্মিনালে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও এখন যাত্রীর সংখ্যা হাতে গোনা। যাত্রী না থাকায় দেরি করে ছাড়তে দেখা গেছে বাসগুলোকে।
আহসান হাবিব নামের একজন যাত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। ময়মনসিংহ শহরে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে এনা পরিবহনে যেতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কারণ, অন্য বাসগুলো মহাসড়কের যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করলেও এনা এটি করে না।
এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত
‘তেলের মূল্যবৃদ্ধির আগে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় যেতে এনা পরিবহনের ভাড়া ছিল ২৫০ টাকা। এখন সেটি ৩২০ টাকা করা হয়েছে। এতে বাড়তি ৭০ টাকা আমাদের পকেট থেকে চলে যাচ্ছে। এসব দিক চিন্তা করে শৌখিন লোক ছাড়া কেউ এনা বাসে যাচ্ছে না।’
কিন্তু এই ভাড়া বাড়িয়ে কোম্পানির যে খুব একটা লাভ হচ্ছে না, সেটি উঠে এসেছে চালক হাসেম আলীর কথায়।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এনা পরিবহনে যাত্রীর অভাব হয় না। কিন্তু এখন বাস ভাড়া বৃদ্ধির কারণে বাসের অনেক সিট খালি নিয়ে ঢাকায় যাওয়া হচ্ছে। এতে শুধু তেলসহ আমাদের খরচ উঠলেও লাভবান হওয়া যাচ্ছে না।’
বাড়তি ভাড়ার প্রমাণের পরও অস্বীকার
সরকারের দূরত্বের চার্ট অনুসারে ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব ১২২ কিলোমিটার। কিন্তু এনা পরিবহনের বাসগুলো ছাড়ে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে। গুগল ম্যাপের হিসাবে এই দূরত্ব সাড়ে ৭ কিলোমিটার।
অর্থাৎ মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মমনসিংহের দূরত্ব ১১৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার।
সরকারি হিসাবে ৫২ আসনের বাসে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হবে ২ টাকা ২০ পয়সা হারে। এটি ৫২ আসনের জন্য প্রযোজ্য। কোনো কোম্পানি যদি যাত্রীর আরামের কথা ভেবে বাসের আসন কমায়, তাহলে আনুপাতিক হারে ভাড়া বাড়াতে পারবে।
এনা পরিবহন ৫২ আসনের জায়গায় ৪০টি অর্থাৎ ২৩ শতাংশ আসন কমানোয় তারা ২৩ শতাংশ বেশি ভাড়া নিতে পারবে।
এই হিসাবে এনা পরিবহন কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া আদায় করতে পারবে ২ টাকা ৭০ পয়সা হারে। এই হিসাবে ঢাকা ময়মনসিংহ রুটে ভাড়া হয় ৩১০ টাকা।
বিআরটিসি থেকে পাঠানো তালিকায় উল্লেখ আছে, মহাখালী থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব ১১৬ কিলোমিটার। তবে এই হিসেবেও ভাড়া হয় ৩১৩ টাকা। কোনোভাবেই ৭ টাকা বেশি নেয়া সম্ভব নয়।
যদিও প্রমাণ থাকার পরও এনা পরিবহনের ম্যানেজার আলম মিয়া বিষয়টি স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, ‘বাসমালিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং বাসের চাকা সচল রাখতে ভাড়া বৃদ্ধি করেছে সরকার। আমরা নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছি।’
ভাড়ার এই অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি।
ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব মো. মাহবুবুর রহমান দাবি করেছেন, এনা যেহেতু ১২টি আসন কমিয়েছে, তাই তাদের কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া আসে ২ টাকা ৮৬ পয়সা। এই হিসাবে ভাড়া আসে ৩৩১ টাকা। কিন্তু যাত্রীদের কথা চিন্তা করে ভাড়া রাখা হয় ৩২০ টাকা।
তিনি বলেন, ‘এনা পরিবহন মহাসড়কের কোথাও না থামাসহ ভালো সার্ভিসের কারণে সব সময় অন্য বাসের চেয়ে কিছু ভাড়া বেশি নেয়া হয়। এবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ৭০ টাকা আরও বেশি নেয়া হচ্ছে।’
গত ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে ডিজেলের দর লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়। পরদিন বাড়ে বাস ভাড়া। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নগর পরিবহনে বাস ভাড়া কিলোমিটারে আড়াই টাকা ঠিক করা হয়। আর দূরপাল্লায় ৫২ আসনের ভাড়া ঠিক করা হয় ২ টাকা ২০ পয়সা হারে।