বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নিরাপত্তা-বেষ্টনী ছাড়া কাজ করতে গিয়ে প্রাণহানি

  •    
  • ১৫ আগস্ট, ২০২২ ১৯:১৫

‘ক্রেন থেকে গার্ডার কিন্তু দুর্ঘটনাক্রমে পড়ে যেতেই পারে, সে কারণেই আপনাকে পূর্ব সতর্কতা নিতে হয়। ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস হচ্ছে আমাকে সেই জায়গাতে আগেই কর্ডন বা নিরাপত্তা-বেষ্টনী তৈরি করতে হবে। ওই বেষ্টনীর মধ্যে যেন পথচারী বা কোনো যানবাহন ঢুকতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্বও কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।… দুর্ঘটনার সময় সেখানে কোনো নিরাপত্তা-বেষ্টনী ছিল না।’

উত্তরায় ফ্লাইওভারের গার্ডার দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে ঠিকাদারি কোম্পানির অবহেলার বিষয়টি উঠে এসেছে পুলিশের বয়ানে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিরাপত্তার চর্চাগুলো অনুসরণ করা হলে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার কোনো কারণই নেই।

এখানে প্রশাসনিক ব্যর্থতা ছিলও মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। বলেছেন, ঠিকাদার সঠিকভাবে সব সাবধানতা মেনে কাজ করছে কি না, এটি তদারকির দায়িত্ব প্রশাসনের। সেটি করা হয় না বলেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অবহেলা করে থাকে।

জাতীয় শোক দিবসে সোমবার দুপুরের আগে আগে পুরান ঢাকায় একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুনে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় শোকের মধ্যে উত্তরায় আরও একটি দুর্ঘটনা দেশবাসীকে আর্ত করে।

সেখানে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডার প্রাইভেট কারের ওপরে পড়ার পর সেটি বলতে গেলে পিষ্ট হয়ে যায়।

গাড়িটিতে মোট সাতজন যাত্রী ছিলেন, যাদের মধ্যে পাঁচ জন মারা যান। দুইজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্রেন দিয়ে গার্ডারটি তোলার সময় সেটি ছিটকে গাড়ির ওপর পড়ে যায়।

ভারী গার্ডারের চাপে গাড়িটি একেবারে পিষ্ট হয়ে যায়

এই দুর্ঘটনার পরপর বেশ কয়েকটি প্রশ্ন ওঠে, যার জবাব তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়নি। জনবহুল সড়কে কর্মব্যস্ত সময়ে কেন এই কাজ করা হচ্ছিল, দ্বিতীয়ত, এত ভারী একটি বস্তু তোলার সময় নিচ দিয়ে কীভাবে গাড়ি গেল, তৃতীয়ত, কেন ক্রেনটি নিয়ন্ত্রণ হারাল।

বিআরটি প্রকল্পটি চীনের জিয়াংশু প্রভিন্সিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ও গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড বাস্তবায়ন করছে। তাদের কোনো বক্তব্য আপাতত পাওয়ার সুযোগ নেই।

২০১২ সালে বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ করার কথা ২০১৭ সালে। তবে নানা জটিলতায় বারবার পিছিয়েছে কাজ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে ৬৮ শতাংশ। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

নিরাপত্তা-বেষ্টনী ছিল না

অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ‘এটা একটা ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাতেই কাজ চলবে, সেটি সমস্যা না। সেখানে দিনে হোক আর রাতে হোক যখন ভারী উপকরণ বা সরঞ্জাম আপনি বহন করবেন, সেটা ক্রেনের মাধ্যমে হোক আর যেকোনো মাধ্যমে হোক না কেন, ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিসটা হচ্ছে অবশ্যই একটা নিরাপত্তা-বেষ্টনী তৈরি করতে হবে আগে।

‘কারণ, ক্রেন থেকে গার্ডার কিন্তু দুর্ঘটনাক্রমে পড়ে যেতেই পারে, সে কারণেই আপনাকে পূর্ব সতর্কতা নিতে হয়। ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস হচ্ছে আমাকে সেই জায়গাতে আগেই কর্ডন বা নিরাপত্তা-বেষ্টনী তৈরি করতে হবে। ওই বেষ্টনীর মধ্যে যেন পথচারী বা কোনো যানবাহন ঢুকতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্বও কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।’

দুর্ঘটনার পরও হাজারো মানুষ ভিড় করে সেখানে। তাদেরকে সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও দেখা যায় অবহেলা

উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় সেখানে কোনো নিরাপত্তা-বেষ্টনী ছিল না।’

অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, যদি বেষ্টনী না থাকে, তাহলে এটা স্পষ্ট অবহেলা। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের প্রকল্পে কিন্তু এই ম্যানেজমেন্টের জন্য একটা বড় ব্যয় ধরা থাকে। আমার মনে হয়, বিআরটি প্রজেক্টে প্রথম থেকেই কনস্ট্রাকশন প্র্যাকটিসের ন্যূনতম যে গ্রামারটা আছে, সেটা তারা ফলো করছে না। …. অতীতে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং নিহতের ঘটনাও আছে। ওইখান থেকেও আমাদের একটা শিক্ষা নেয়ার দরকার ছিল।’

আরও যেসব প্রশ্ন

নিরাপত্তা-বেষ্টনী ছাড়া আরও তিনটি প্রশ্ন আছে অধ্যাপক হাদিউজ্জামানের। তিনি বলেন, ‘ক্রেন ঠিক আছে কি না। তার আগে দেখতে হবে ক্রেন যে অপারেট করছিল, তার লাইসেন্স আছে কি না। সে অভিজ্ঞ কি না, এটাও তদন্তের মাধ্যমে দেখতে হবে।

‘আমার গার্ডারের যে ওজন এবং ক্রেনের যে সক্ষমতা, সেটা ঠিক আছে কি না। এই জিনিসটাও গুরুত্বপূর্ণ।’

এখানে প্রশাসনিক অবহেলা আছে বলেও মনে করেন এই দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটা করছে, ভালো কথা। কিন্তু তারা ঠিকমতো প্র্যাকটিস করছে কি না, এটার নজরদারি বা তদারকির দায়িত্ব তো বাস্তবায়নকারী সংস্থার। এই ধরনের প্রকল্পের সুপারভিশনের দায়িত্ব আরেক সংস্থার থাকে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

‘তার মানে কাজটা ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সেটার জন্য সুপারভিশন সংস্থা আছে, আমাদের বাস্তবায়নকারী সংস্থা আছে, এটার একটা সমন্বয় দরকার। আমি যেটা মনে করি, এই ধরনের কাজ একটা বড় কাজ।

‘পাশাপাশি এটা অনেক বিজি একটা করিডর। এই করিডরে কাজ করতে গেলে অবশ্যেই যারা বাস্তবায়ন করছে তাদের ২৪ ঘণ্টা ৭ দিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি এবং তদারকি করতে হবে। কোথাও যদি কনস্ট্রাকশন প্র্যাকটিসের ব্যত্যয় হয়, তাকে কিন্তু জবাব দিতে হবে। এই জবাব দিতে হয় না বলেই আমরা দেখছি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যেভাবে কাজ করার কথা, সেভাবে হয় না। তাদের মধ্যে অবহেলার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।’

গত ১৫ জুলাই গাজীপুরে একই প্রকল্পের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক ও একজন পথচারী আহত হন।

ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় ঢাকার তেজগাঁও ও মালিবাগ মোড় এবং চট্টগ্রামেও প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে ২০১২ সালে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে ২৯ জনের প্রাণহানি হয়।

এসব ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা গণমাধ্যমে আসেনি।

এ বিভাগের আরো খবর