জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যেসব খুনির ফাঁসির রায় এখনও কার্যকর করা যায়নি, তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি এই হত্যায় জড়িত সবার সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
জাতীয় শোক দিবসে সোমবার বনানী কবরস্থানে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র আতিকুল বলেন, ‘খুনিরা সেদিন ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে সব শেষ হয়ে যাবে। তারা জানে না, বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রথমে মোশতাক সরকারের জারি করা অর্ডিন্যান্স ও পরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানে এই হত্যার দায়মুক্তি দিয়ে করা ইনডেমনিটির কারণে বিচার আটকে ছিল ২১ বছর।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিচারের পথ খুললেও ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে আবার স্থবির হয়ে যায় সব প্রক্রিয়া।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকারে ফিরলে উচ্চ আদালতের সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাঁচ খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আরেক খুনি আজিজ পাশা।
২০২০ সালের ৭ এপ্রিল ভোরে মিরপুরের গাবতলী এলাকায় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিস) ইউনিটের একটি দল আটক করে আরেক পলাতক আসামি খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্তকৃত) আবদুল মাজেদকে। সেদিন দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে। সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে পাঁচ দিন পর ১২ এপ্রিল প্রথম প্রহরে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
তবে এখনও পাঁচজন খুনি পলাতক, যাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে। এর মধ্যে কানাডায় আছেন নূর চৌধুরী এবং রাশেদ চৌধুরী আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সরকার তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সাফল্য আসেনি।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাকি তিন খুনি খন্দকার আবদুর রশিদ, শরীফুল হক ডালিম ও মোসলেহউদ্দিন খানের অবস্থান এখনও অজানা।
মেয়র আতিকুল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর যেসব খুনি এখনও বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর এবং খুনিদের সব ধরনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
‘কমিশন গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিদেশে পলাতক খুনিরা ছাড়াও যারা ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার পেছনের কুশীলব, তাদেরও আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাই।’
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের নির্মম ঘটনা ঘটেছে ১৫ আগস্ট রাতে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরে। সেই বর্বর ঘটনা থেকে শিশু রাসেলও রেহাই পায়নি। কী দোষ ছিল সেই শিশুটির?
‘তারা জাতির পিতাসহ তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার দুই কন্যা দেশের বাইরে থাকার কারণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুর সেই কন্যাদের একজন আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ, তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী ও পরিকল্পনাকারী একজনও যেন রেহাই না পায়।’
বনানী করবস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মেয়র আতিকুল ইসলাম ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।