নাটোরে কলেজশিক্ষিক খায়রুন নাহারের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আটক স্বামী মামুন হোসেনকে আদালতে নেয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১টার দিকে তাকে আদালতে আনা হয়।
মামুনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা।
তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় মামুনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় তাকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহম্মেদ বলেন, ‘মামুন হোসেনকে আদালতের হাজতে রাখা হয়েছে। বিকেল ৫টার দিকে তাকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. মোসলেম উদ্দীনের আদালতে তোলা হবে।’
এর আগে রোববার সকাল ৭টার দিকে শহরের বলারিপাড়া এলাকার ভাড়া বাসা থেকে কলেজশিক্ষক খাইরুন নাহারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পরপরই তার স্বামী মামুন হোসেনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
৪২ বছর বয়সী খাইরুন নাহার গুরুদাসপুরের খুবজিপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। ২২ বছরের মামুনের বাড়ি উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামে। তিনি নাটোর এন এস সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদের পর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে নিজ বাড়িতেই থাকতেন খায়রুন। ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ২০২১ সালের ২৪ জুন মামুনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরিচয়ের ছয় মাস পর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন তারা।
বিয়ের ছয় মাস পর জুলাইয়ে ঘটনাটি জানাজানি হয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাদের বিয়ের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়; সম্প্রচার করা হয় ভিডিও সাক্ষাৎকারও। এতে ‘টক অফ দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয় বিষয়টি।
ওসি নাসিম আহম্মেদ জানান, শিক্ষক খাইরুন নাহার ভালোবেসে গত বছর মামুন হোসেনকে বিয়ে করেন। তারা দুজন শহরের বলারিপাড়ায় একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। সে বাড়ি থেকেই খাইরুনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
রোববার দুপুরে সিআইডির সুরতহালের পর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ খাইরুনের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পরে রাত ৮টার দিকে গুরুদাসপুর উপজেলার স্থানীয় আবু বকর সিদ্দিকী কওমি মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে বাবার বাড়ি খামার নাচকৈড় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
খাইরুনের মরদেহ উদ্ধার ঘটনায় তার চাচাতো ভাই সাবের উদ্দিন রাতেই থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন।
ময়নাতদন্তের পর যা বললেন চিকিৎসক
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে খাইরুনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার জানান, আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা শামিউল ইসলাম শান্তকে প্রধান করে তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যার পর খাইরুন নাহারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে তার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক (আরএমও) শামিউল ইসলাম শান্ত জানিয়েছিলেন, শিক্ষক খায়রুন নাহারের মরদেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শ্বাসরোধ হওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। এরপরও ভিসেরা রিপোর্ট পেলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।