বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীকে ক্যাম্পাস থেকে তুলে হোটেল কক্ষে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটির এক নেতার বিরুদ্ধে।
নির্যাতনের অভিযোগ করা রাব্বি খান রাজ নামে ওই ছাত্র বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষে পড়েন।
রাব্বি জানান, রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটি হোটেলে নির্যাতনের এই ঘটনা ঘটে।
রাব্বি আরও জানান, তিনি বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী অমিত হাসান রক্তিম গ্রুপের কর্মী। প্রতিপক্ষ গ্রুপ বরিশাল সিটির মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী মহিউদ্দীন আহমেদ সিফাতের নেতৃত্বে তার ওপর হামলা হয়েছে। তবে মহিউদ্দিন অভিযোগ নাকচ করেছেন।
হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রাব্বি বলেন, ‘রোববার ১২টায় আমার ক্লাস টেস্ট ছিল। প্রক্টরের আশ্বাসে আমি ক্যাম্পাসে পরীক্ষা দিতে যাই। পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে দুপুর ১টার দিকে আমি উপাচার্যের বাসভবনের ফটক থেকে নগরীতে আসার জন্য গাড়ির অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় চার সন্ত্রাসী এসে আমাকে ধরে ফেলে। পেছনে আরও ১০-১২ জন ছিল। আমাকে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের নাজেমস নামের একটি হোটেলে নিয়ে যায়।
‘সেখানে মহিউদ্দীন আহমেদ সিফাত ৩০-৩৫ জন সন্ত্রাসী নিয়ে অপেক্ষা করছিল। সে এক অনুসারীকে হলে তার কক্ষ থেকে দা নিয়ে আসতে নির্দেশ দেয়। সেটি আনা হলে মহিউদ্দীন নিজেই দায়ের কাঠের হাতল দিয়ে আমার বাঁ পায়ের হাঁটুতে এবং ডান পায়ের হাঁটুর নিচে পেটায়। তার সহযোগীরাও আমার মাথায় ও পিঠে কিল-ঘুষি মারে। এভাবে প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টা আটকে আমার ওপর নির্যাতন চালানো হয়।’
রাব্বি জানান, প্রক্টর এ ঘটনার খবর পেয়ে মহিউদ্দীনকে কল দিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে বলেন। তার পরও নির্যাতন চলতে থাকে। বেলা পৌনে ৩টার দিকে প্রক্টর খোরশেদ আলম ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন।
রাব্বির পক্ষে ছাত্রলীগ কর্মী অমিত হাসান রক্তিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নাজেমস ভবনে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসী সিফাত ও তার দলবল ওই ভবনেই আড্ডা দেয়। তাদের সব অস্ত্র ওই ভবনেই থাকে। আমাদের চার ছাত্রলীগ কর্মী নিরাপত্তার আবেদন করেও এই নির্যাতনের শিকার হয়েছে।’
নির্যাতনের বিষয়ে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেয়া মহিউদ্দীন আহমেদ সিফাত বলেন, ‘আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম এই ঘটনা। আর এই ধরনের কিছুই শুনিনি। আমার কোনো লোকজন এমনটা করলে জানতাম। যদি কেউ এই ধরনের অভিযোগ করে থাকে, তবে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খোরশেদ আলম জানান, গত ৭ আগস্ট তার ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘রাব্বি খান আমাদের কাছে নিরাপত্তার জন্য আবেদন করেছিলেন। তাকে বলা হয়েছিল পরীক্ষা থাকলে সেই সময় নিরাপত্তাহীনতা বোধ করলে আমাদের জানাতে। রোববার তার পরীক্ষা ছিল কি না, সে বিষয়টি আমাদের জানায়নি।
‘দুপুরের দিকে রাব্বিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের একটি বাসা থেকে বের করে আনা হয়। এরপর সে জানায় শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং সে শহরে যেতে চায়। তারপর তাকে শহরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। তবে তার সঙ্গে কী হয়েছিল সে বিষয়ে আমাদের কিছু বলেনি। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেব এবং রাব্বির সঙ্গে ফের কথা বলব।’