বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও সাগরে অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ২৩ নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত ও নদীবন্দরে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেয়া হয়েছে।
রোববার ভোর থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে।
বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আব্দুল কুদ্দুস জানান, রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ৭৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ রয়েছে ৮ থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল।
তিনি জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এ কারণে এমন বৈরী আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত ও নদীবন্দরে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
কীর্তনখোলার অস্বাভাবিক জোয়ার ও অবিরাম বর্ষণে বরিশাল নগরীর অধিকাংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বটতলা, কলেজ অ্যাভিনিউ, কলেজ রোড, গোরস্থান রোড, শ্রীনাথ চ্যাটার্জী লেন, আগরপুর রোড, ভাটিখানাসহ বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
বটতলা এলাকার সবুজ খান বলেন, ‘ড্রেন ঠিকভাবে পরিষ্কার না করা এবং খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। এতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বেশ ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, উত্তাল সাগরে অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে বরিশালের কীর্তনখোলাসহ দক্ষিণের ২৩টি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে এসব নদীতে।
ভোলায় তেঁতুলিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দৌলতখানের কাছে সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার, তজুমুদ্দিনে সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি ১১০ সেন্টিমিটার, ঝালকাঠিতে বিষখালী নদীর পানি ৩৫ সেন্টিমিটার, মির্জাগঞ্জে বুড়িশ্বর ও পায়রা নদীর পানি ৫৯ সেন্টিমিটার, বরগুনায় বিষখালীর পানি ৬৭ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটায় বিষখালীর পানি ১২৫ সেন্টিমিটার, পিরোজপুরে বলেশ্বর নদীর পানি ২৭ সেন্টিমিটার, উমেদপুরে কচা নদীর পানি ৩৫ সেন্টিমিটার এবং বরিশাল নগরীঘেঁষা কীর্তনখোলার পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবো বরিশালের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম বলেন, ‘অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে বরিশালের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।’
দক্ষিণের নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক বাড়ায় বরিশাল সদর, মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, বাকেরগঞ্জ, ভোলার তজুমুদ্দিন, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, গলাচিপা ও পিরোজপুরের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
কীর্তনখোলার নিকটবর্তী বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামছড়ির বাসিন্দা রাসেল হোসেন বলেন, ‘টানা চার দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। নদীর পানিও চার দিনে অনেক বেড়েছে। আমাদের এলাকার ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেকেই ঘর ছেড়ে সড়কে আশ্রয় নিয়েছে।’